ফসলরক্ষা বাঁধে অনিয়মের প্রতিবাদে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৭:১২:৪৭ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজের অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটি।
সোমবার বেলা ১১ টায় শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলনের সঞ্চালনায় সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৭ সালের হাওরডুবির পর থেকে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কৃষকদের দাবি আদায়ে সোচ্চার রয়েছে। বোরো ফসলের সুরক্ষায় সরকার বাঁধ নির্মাণ কাজের জন্য প্রতিবছর যে বরাদ্দ দিয়ে থাকে সেটির বাস্তবায়ন কাজে অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সংগঠন সব সময় তৎপর থাকে। চলতি বোরো মৌসুমে ফসলের সুরক্ষায় হাওরে ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দে ৭৩৩টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী অর্থ-বছরের ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের কাজ শুরু ও ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময় ১৫ ডিসেম্বর নিয়ম রক্ষার্থে কয়েকটি বাঁধে লোক-দেখানো কাজ উদ্বোধন করা হয়েছিল। ৯০ শতাংশ প্রকল্পে ১ মাস থেকে দেড় মাস পরে কাজ শুরু করা হয়। বিলম্বে পিআইসি গঠন ও সময় মতো কাজ শুরু না করতে পারায় বাঁধ নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি পিছিয়ে যায়। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারও পিআইসি গঠনে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কৃষককে প্রাধান্য না দিয়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে অকৃষকদের নামে পিআইসি করা হয়েছে। গণশুনানির মাধ্যমে পিআইসি গঠন করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি প্রতিপালন হয়নি। আমাদের সংগঠন বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ৩ শতাধিক প্রকল্প সরেজমিনে পরিদর্শন করে বাঁধ নির্মাণ কাজে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি পরিলক্ষিত করেছে। অক্ষত বাঁধে পূর্ণ বরাদ্দ, প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ বেশি, অপ্রয়োজনীয় পিআইসি গঠনসহ হাওরের কাজে আসবে না এমন স্থানে প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারের টাকা অপচয়, হাওরের টাকায় গ্রামের রাস্তা, বালি মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি, বাঁধের গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন, দুর্মূজ বা কমম্প্রেশন না করা, পুরাতন বাঁধ কেটে নতুন বাঁধ তৈরিসহ বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করেছে আমাদের প্রতিনিধিরা।
তিনি আরও বলেন, চলতি ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত বাঁধের কাজের অগ্রগতি হতাশাজনক। নির্ধারিত সময়ের আর মাত্র ১৫ দিন থাকলেও এখনো জেলার অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজার উন্মুক্ত রয়েছে। জেলার শাল্লা, দিরাই, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর, শান্তিগঞ্জ ও সদর উপজেলায় ধীরগতিতে বাঁধের কাজ হচ্ছে। এসব উপজেলার অনেক বাঁধে সবেমাত্র মাটির কাজ শুরু হয়েছে। স্লোভ, দুরমুজের কাজ হয়নি, অনেক ক্লোজার বা ভাঙ্গায় বাঁশ, বস্তা, ছাটাই বসানো হয়নি। জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত বাঁধের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৬৭% দাবি করলেও সেটি বাস্তব সম্মত নয়। প্রকৃত পক্ষে কাজের অগ্রগতি এখনো সন্তোষজনক নয়। মাঠ পর্যায়ের তথ্য বলছে অগ্রগতির প্রতিবেদন হবে ৪০ ভাগের কাছাকাছি। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাকি কাজ স¤পন্ন করা কঠিন হবে বলে আমরা মনে করি।
তাদের দাবি সমূহের মধ্যে রয়েছে, বাঁধ নির্মাণ কাজের তদারকি জোরদার করা, নির্ধারিত সময় ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করা, যে সকল পিআইসির বিরুদ্ধে বাঁধের কাজের অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে তা তদন্ত করা, কাজ অনুযায়ী যথাসময়ে অর্থ ছাড় দেয়া, অপ্রয়োজনীয় পিআইসির বরাদ্দ বাতিল করা, ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারগুলোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা ও সংশ্লিষ্ট পিআইসিদের কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা, অপ্রয়োজনীয় ও অল্প ক্ষতিগ্রস্ত যেসব বাঁধে সমান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা পোস্ট ওয়ার্কের সময় যথাযথভাবে কাজ অনুযায়ী বিল প্রদান করে সরকারের অতিরিক্ত অর্থের অপচয় রোধ করা, যেসব পিআইসি নীতিমালা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করেছে বিল পরিশোধে তাদের হয়রানি না করা। নির্ধারিত সময় ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধের কাজ শেষ না হলে জেলাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচীর পাশাপাশি কৃষকদের সাথে নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয় জেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার, সহ-সভাপতি সুখেন্দু সেন, সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক নির্মল ভট্টাচার্য্য, সদর উপজেলা সহ-সভাপতি আলী নূর, সদর উপজেলা সাধারণ স¤পাদক শহীদ নুর আহমদ, রাজু আহমদ। এ ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।