অস্বাভাবিক খরচ বৃদ্ধিতে কমেছে হজযাত্রী
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৮:৫১:২২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: এবার হজের জন্য নিবন্ধনের সময় চার দফা বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু কোটার এক তৃতীয়াংশ ফাঁকাই রয়ে গেছে। এবার সরকারিভাবে ৪ হাজার ২৬০ জন এবং বেসরকারিভাবে ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার কোটা বরাদ্দ রয়েছে। দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও কোনো কোটা পূরণ হচ্ছে না। এ নিয়ে হজ এজেন্সি, হজযাত্রী ও সরকারি কর্তৃপক্ষের নানা মত রয়েছে। তবে খরচ বেড়ে যাওয়াকেই যাত্রী কমার বড় কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশে হজের খরচ বেশি। খরচ বাড়ায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে হজে যেতে পারছেন না। ধর্ম মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে খরচ বেড়েছে।
পাশাপাশি সৌদি আরবে হজের আনুষঙ্গিক খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে হজ প্যাকেজের খরচ নির্ধারণ করতে হচ্ছে। হজ প্যাকেজের একটি বড় অংশ যায় বিমান ভাড়ায়। সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, নির্ধারিত বিমান ভাড়া অনেক বেশি নেয়া হয়। সাধারণ যাত্রীদের চেয়ে হজ যাত্রীদের বিমান ভাড়া বেশি নেয়া কোনো ভাবেই যৌক্তিক নয়।এবারের হজ নিবন্ধন শুরু হয় গত ১৫ই নভেম্বর। যা ১০ই ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রত্যাশিত সাড়া না মেলায় সময় বাড়ানো হয় ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে সেই সময় আরও দুই দফায় বাড়ানো হয়। বিশেষ বিবেচনায় চতুর্থ দফায় সময় দেয়া হয় ৬ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
প্রতি বছরের মতো এবারো সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজে খরচ হবে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। আর বিশেষ প্যাকেজে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং বিশেষ প্যাকেজে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও আগের বছরের চেয়ে ব্যয় কিছুটা কমিয়ে নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। আগের বছরও বেশি ব্যয়ের কারণে হজের কোটা পূরণ হয়নি। গত বছর কোটার চেয়ে ৬ হাজারের বেশি কম যাত্রী হজে গিয়েছিলেন।২০২২ সালে সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ ধরা হয়েছিল পাঁচ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। ওই বছরে হজের খরচ দেড় লাখ থেকে প্রায় দুই লাখ ২১ হাজার পর্যন্ত বেড়েছিল। ২০২০ সালে এই প্যাকেজের মূল্য ধার্য করা হয়েছিল জনপ্রতি তিন লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা।
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হজ যাত্রীদের খরচ বাড়ার পেছনে ডলারের মূল্য বৃদ্ধিকে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। তিনি বলেছেন, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় রিয়ালের মূল্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই সরকারের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হজের ব্যয় কমানো সম্ভব হয়নি। মন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবে মক্কা ও মদিনায় অনেক এলাকায় বাড়ি ও হোটেল ভেঙে ফেলায় বাড়ি ভাড়া ব্যয় এ বছর অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশ্বিক নানা কারণে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় রিয়ালের মূল্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া, মিনায়-আরাফায় তাঁবু ভাড়াসহ মোয়াল্লেম ফি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে হজের ব্যয় আর কমানো সম্ভব হয়নি।
যদিও হজ এজেন্সিগুলো বলছে, হজ প্যাকেজের অতি উচ্চমূল্যের কারণে হজ গমনেচ্ছুদের অনেকের বাজেটে কুলাচ্ছে না। বর্তমানে দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। সংসার চালাতে সাধারণ মানুষের হিমশিম অবস্থা। হজের জন্য যারা অল্প অল্প করে দীর্ঘদিন টাকা জমান তাদেরও বাজেটে টানাটানি। ফলে অনেকে হজে যেতে পারছেন না। তাদের অনেকেই হজের পরিবর্তে অল্প টাকায় ওমরাহের দিকে ঝুঁকছেন। এ ছাড়া প্যাকেজের বাইরে আগের তুলনায় অনেক বেশি খরচ হচ্ছে। রিয়ালের তুলনায় টাকার মান আগের চেয়ে কমার কারণে প্যাকেজের বাইরের খরচ বেড়েছে। আগে ৪০০ রিয়াল দিয়ে কোরবানি দেয়া গেলেও এখন ৮০০ রিয়াল প্রয়োজন হচ্ছে।
হজ এজেন্সি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, এ বছর জাতীয় নির্বাচনের সময় হজের নিবন্ধন কার্যক্রম ছিল। নির্বাচনকালীন সময়ে অনেকে নিবন্ধন করেনি। এ ছাড়া প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে হজের নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কিন্তু এ বছর আগেই শুরু হয়েছে। মানুষের প্রস্তুতি সেভাবে ছিল না। এজন্য হজ যাত্রী কমেছে। তিনি আরও বলেন, করোনার পর অনেকে ওমরা হজ করে ফেলেছেন। মানুষ এখন ওমরায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। হজ যাত্রী কমার এটাও একটি কারণ।