১ বছরেরর ব্যবধানে সব সবজির দাম দ্বিগুণ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৭:৪৫:১৯ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : দেশে প্রায় ৫০ পদের বেশি শীতকালীন সবজির উৎপাদন হয়। সেই হিসাবে এসব সবজি ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকার কথা। কিন্তু বাজারে সরবরাহ ভালো থাকলেও মুলা ও পেঁপে ছাড়া ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজির দাম নামেনি। উল্টো গত বছরের এ সময়ের তুলনায় অধিকাংশ সবজি দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে।মূলত সরকারের বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর অবহেলার কারণে সবজির বাজার চড়া হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তারা বলছেন, দেশের উৎপাদিত পণ্যের বাজার তদারকি করার কথা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের। কিন্তু কৃষি বিপণন অধিদপ্তরসহ সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজার তদারকিতে অবহেলার কারণে ব্যবসায়ীরা নানা সময় ভোক্তাদের জিম্মি করে থাকেন। সব মিলিয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কার্যক্রম হতাশাজনক।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের (ডিএএম) ২০২৩ সালের জানুয়ারির শেষ ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকের বাজারদরের তথ্য বলছে, গত বছর প্রতি কেজি টমেটো ২০, পেঁপে ২৫, মিষ্টি কুমড়া ২০, বেগুন ৩৫, শিম ৩০, মুলা ২০, লাউ পিস প্রতি ৪০ ও ফুলকপি ১৫ এবং বাঁধাকপি ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এ বছর সেসব পণ্য দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁপে ও মুলা ছাড়া কোনো সবজি ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করছেন না ব্যবসায়ীরা। পেঁপে ও মুলা কেজি প্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি বেগুন ৬০-৮০, করলা ৬০-৮০, শিম ৪৫-৬০, মিষ্টি কুমড়া ৪০-৫০ টাকায় এবং প্রতি পিস বাঁধাকপি ৪০-৫০, ফুলকপি ৩০-৫০, লাউ ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাধারণত শীতের শেষ সময় সবজির দাম কমে আসে। কিন্তু এবার সবজি উৎপাদনে কৃষকের খরচ বেশি পড়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। সব মিলিয়ে সবজির দাম না কমে উল্টো দাম বেড়ে গেছে।রিকাবী বাজারের বাপ্পি নামে এক সবজি বিক্রেতা জানান, একমাত্র কমদামি সবজি বলতে বাজারে পেঁপে ও মুলা পাওয়া যাচ্ছে। তা কিনতেও ভোক্তার ৪০ টাকা খরচ করতে হবে। এ ছাড়া মৌসুম না হওয়ায় বাজারে সব থেকে দামি সবজি করলা। বর্তমানে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত।
আম্বরখানা কাঁচাবাজারেও একই পরিস্থিতি দেখা গেছে। এখানকার সবজি বিক্রেতা শহিদুল্লাহ আহাদ দেশ বলেন, দাম বেশি বলে বিক্রিও কম হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই। আমরা কম দামে কিনতে পারি না।এদিকে সবজির মতো ডিম ও মুরগির বাজারেও দামের উত্তাপ দেখা গিয়েছে। তাছাড়া বাজারে আসা অধিকাংশ ভোক্তার মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে। বন্দরবাজারে আসা সাগর নামে এক ক্রেতা বলেন, সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের বাজার চড়া। কম দামের মধ্যে আমাদের পুষ্টির চাহিদা মেটানো একমাত্র ভরসা ছিল ডিম। এখন তার দাম তরতর করে বাড়ছে।
বর্তমানের খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। যা কয়েক দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকার মধ্যে। তাছাড়া মাংসের মধ্যে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ ও সোনালি ৩০০-৩২০ টাকা কেজি দরে। তবে কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯৫-২০০ টাকায়।
অন্যদিকে আগের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাছ। প্রতি কেজি পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০, তেলাপিয়া ২০০-২২০ ও চাষের কই ৪০০-৪২০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া পাবদা ৩৮০-৫৫০, রুই ৩৫০-৪৪০, কাতল ৩০০-৫০০, টেংরা ৪৮০-৫০০, ছোট কাঁচকি ২৬০-৪০০, ছোট সাইজের বেলে (ছোট) কেজি ২৩০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, মূল্যস্ফীতির প্রভাবে দেশের কৃষি খাতসহ সব স্তরে এর প্রভাব পড়েছে। তবে সরকারের বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর অবহেলার কারণে বাজারে ভোক্তা জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বাজার মনিটরিং করার কথা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের করার কথা থাকলে তারা তা করছে না। কিন্তু নানা সময় তারা যে পণ্যের দাম নিয়ে তথ্য প্রকাশ করে তাদের এমন কার্যক্রম নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। তারা কি আসলেই মাঠপর্যায়ে গিয়ে কাজ করে নাকি ঘরে বসেই তথ্য প্রকাশ করে।’