জকিগঞ্জে প্রকাশ্যে ধূমপান ও তামাক পণ্যের রমরমা বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৫:৫৮:২০ অপরাহ্ন
এখলাছুর রহমান, জকিগঞ্জ : জকিগঞ্জে আইনের তোয়াক্কা না করে চলছে প্রকাশ্যে ধূমপান ও তামাক পণ্যের নজরকাড়া রমরমা বিজ্ঞাপন। সিগারেট কোম্পানিগুলোর রঙছটা বিজ্ঞাপনে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করছে, যা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিরোধী। এ ধরনের কার্যক্রমে প্রতিনিয়িত স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে উপজেলাবাসী। এরপরও আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসন।জকিগঞ্জের গণপরিবহন ও পাবলিক প্লেসে প্রকাশ্যে ধূমপানের কারণে অসুবিধায় রয়েছে শিশু, বয়স্ক ও সাধারণ রোগীরা। তাছাড়া বিভিন্ন চা স্টল ও পানের দোকানে টোব্যাকো কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপন দেখা গেছে। অথচ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী এসব বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর আইন লঙ্ঘন করে প্রকাশ্যে ধূমপান তে চলছেই। প্রতিবাদ করলে উল্টো ধূমপায়ী ও গাড়ীর ড্রাইভারদের রোষানলে পড়তে হয়। প্রকাশ্যে ধূমপান যে একটা অপরাধ, তা ভুলে যেতে বসেছে ধূমপায়ীরা। দোকানগুলোতে সিগারেট পণ্যের নজরকাড়া বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অথচ এ বেআইনী কাজ থেকে বিরত রাখতে দৃশ্যত কোনো আইনী পদক্ষেপ নেই বললে চলে।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ সংশোধন) আইন, ২০০৫ সংশোধিত (২০১৩)-এর ধারায় বলা আছে, বিক্রয়স্থলে তামাক পণ্যের প্যাকেট বা মোড়ক সাদৃশ্য কোনও দ্রব্য, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা যাবে না। তামাক ব্যবহারে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে কোনও উপহার, পুরস্কার, বৃত্তি প্রদান আইনত দণ্ডনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইনের এই ধারা অমান্যকারীকে তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের দোকান নিষিদ্ধ। সেইসঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি অপরাধ।
পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট স্থানে ধূমপান করা ও বিজ্ঞাপন প্রচার করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। আইন অমান্য করলে অর্থদন্ডসহ জেল দেওয়ার বিধান আছে। অথচ আইন অমান্য করে জকিগঞ্জে পাবলিক প্লেসে চলছে ধূমপান ও তামাকজাত পণ্যের প্রচারণা। জকিগঞ্জের এমএ হক চত্ত্বর, বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে চলছে প্রকাশ্যে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের প্রচারণা। এসব তামাকজাত পণ্যের দোকানগুলোতে সংশ্লিষ্ট তামাকজাত পণ্যের কোম্পানীর পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনের স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরবতায় বাড়ছে এসব কর্মকান্ড। তামাকপণ্য বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানীগুলোর পক্ষ থেকে এসব পোস্টার, ছোট আকারে স্টিকার দোকানের সামনে লাগিয়ে দিয়ে যায়।আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজদারীর অভাবে জকিগঞ্জে প্রকাশ্যে ধুমপান ও তামাকজাত পণ্যের প্রচারণা চলছে বলে অভিযোগ করেন অনেকেই।
বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের সদস্য ও সিলেট ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি’র (এসডিএস) নির্বাহী পরিচালক মোঃ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। ক্রেতা-বিক্রেতাদের বিভিন্ন উপহার দেওয়া হচ্ছে। সিগারেট সরবরাহের যানবাহনে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করছে। এসব প্রচারণায় অনেকে ধূমপানে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। আইনে অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও শিশু-কিশোরদের কাছে অবাধে সিগারেট বিক্রি করছে।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে জানা যায, তামাকমুক্ত সিলেট বিভাগ গড়তে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের উপর প্রতিমাসে কমপক্ষে দুইটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও টাস্কফোর্স কমিটির সভা করার কথা থাকলেও বহুমাস থেকে জকিগঞ্জে কোনো সভা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: এস এম আব্দুল আহাদ বলেন, কয়েকমাস যাবৎ আমাদের কমিটির কোনো মিটিং করতে পারি নাই বাজেটের অভাবে। তবে গত মাসে অভিযান পরিচালনার কথা ছিল। আমরা শুধু জনগণকে সচেতনতামূলক প্রচার, প্রচারণা চালাই। আইন বাস্তবায়ন করে মাঠ প্রশাসন। তিনি বলেন, ধূমপানের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে অনেকেই। এতে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে। তাই আইনটি মেনে চলা জরুরী বলে মনে করি।
এ ব্যাপারে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফসানা তাসলিম বলেন, প্রকাশ্যে ধূমপান করা ও তামাক কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপন প্রচার আইনের লঙ্ঘন। এ বিষয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। সবাইকে আইন মান্য করার আহবান জানাচ্ছি।