হকারমুক্ত ফুটপাতের অপেক্ষা
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২:০০:২৮ অপরাহ্ন
*মেয়রের ঘোষণার এক মাস পার * তালিকাভুক্ত হকার বেড়ে ২ হাজার * রমজানের আগেই বাস্তবায়ন চায় সিসিক
স্টাফ রিপোর্টার : ‘ফুটপাতমুক্ত হকারের’ গল্প পুরনো। তবে নতুন করে ফুটপাত হকারের বিষয়টি সামনে আনেন খোদ মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। গত ১৬ জানুয়ারি সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের এক সভায় তিনি দৃঢ় কন্ঠে বলেছিলেন, এক মাসের মধ্যে ফুটপাত থেকে উচ্ছদ হবে হকার। কিন্তু এক মাস পার হলেও উচ্ছেদ হয়নি হকার। তবে সিসিক জানিয়েছে, হকার উচ্ছেদে কাজ চলছে। আর অপেক্ষা নয়, রমজানের আগেই হবে ফুটপাতমুক্ত হকার।
প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরপরই জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে সিলেটের জেলা পরিষদ মিলনায়তনে হকার্স নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন মেয়র। ওই বৈঠকে পুনর্বাসনের জন্য হকাররা দাবি করেছিলেন লালদিঘীরপাড়ের হকার মার্কেট মাঠ। এবং ওই মাঠ প্রস্তুত করে ব্যবসার উপযোগী করে দেয়ার দাবি জানান তারা।
তাদের এই দাবিকে আমলে নিয়ে লালদিঘীরপাড় হকার মার্কেটকে প্রস্তুত করতে কাজ শুরু করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। মাঠের সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহ থেকে মাঠ সংস্কারের কাজ শুরু হতে পারে। সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লালদিঘীরপাড় হকার মার্কেট মাঠ অধিকতর নিচু এলাকা। এজন্য মাঠকে উঁচু করতে হলে মাটি ভরাট করতে হবে।
একই সঙ্গে ওই মাঠের শেড নির্মাণ সহ গলিও প্রস্তুত করা হবে। এজন্য কাজ শুরু করা হচ্ছে। এই কাজ ২০-২৫ দিনের মধ্যে সমাপ্ত হবে। মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও বলেছেন, হকারদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। লালদিঘীরপাড় হকার মার্কেটের মাঠকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। রমজানের আগেই হকারদের ওই মাঠে পুনর্বাসন করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে সিলেটের হকার ঐক্য পরিষদের নেতারা মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের পর নতুন করে তালিকা প্রস্তুত করছেন। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নির্দেশে প্রায় ৩ বছর আগে হকারদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। ওই সময় আরিফুল হক চৌধুরী হকারদের জন্য লালদিঘীরপাড় হকার মার্কেটের মাঠ বরাদ্দ দিয়েছিলেন। নাম দেয়া হয়েছিল ‘হলিডে মার্কেট’। পরবর্তীতে মাঠের সংস্কার করে না দেয়া এবং ক্রেতা সংকট দেখিয়ে ফের হকাররা ঐ মাঠ ছেড়ে ফুটপাথে চলে আসতে শুরু করে। ফলে আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র থাকাকালেও সিলেটের বিদ্যমান হকার সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। এর আগের মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানও হকার উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। তখন সাবেক মেয়র কামরানের নির্দেশে হকারদের নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে নিয়ে গেলেও পরবর্তীতে সেখানেও থাকেননি তারা। ফের ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা শুরু করেন হকাররা। যা এখন পর্যন্ত চলছে। তবে সিলেটের রাজপথে দিনে দিনে হকারদের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন হকার ঐক্য পরিষদের নেতারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সময় সিলেট নগরে তালিকাভুক্ত হকার ছিল ৫শ’। পরবর্তীতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সময় এসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬শ’তে। এখন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশে তারা ফের হকারদের তালিকা করছেন। এই তালিকায় আরও ৪শ’ হকার বেড়েছে। এখন দুই হাজার হকারকে পুনর্বাসন করতে হবে।
এ ব্যাপারে সিলেট নগর হকার ঐক্য পরিষদের সভাপতি আব্দুল রকিব সোমবার রাতে দৈনিক জালালাবাদকে জানান- দিন দিন হকার বাড়ছে। কিছু হকার পেশা বদল করেছে, কেউ বিদেশে চলে গেছে। তাই আমরা পুরনো তালিকা হালনাগাদ করছি। একই সাথে পূর্বের তালিকার সঙ্গে নতুন আরও ৪শ’ হকার যোগ হচ্ছে। মেয়রের নির্দেশে এই হালনাগাদ তালিকা তৈরী হচ্ছে। লালদিঘীরপাড় হকার মার্কেটের মাঠে সবার স্থান হয়ে যাবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। এর বাইরে আর কোন হকারকে ফুটপাতে বসতে দেয়া হবেনা।
তিনি আরো বলেন, হকার এবং ফুটপাত সমস্যা নিয়ে আমরাও বিব্রত। কিন্তু এতো হকার যাবে কোথায়। তাই আমরা এবার জোর দিয়ে বলেছি লালদিঘীরপাড় মার্কেটের মাঠ পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গেলে আর কোন হকারকে নগরীর কোন ফুটপাতে বসতে দিবোনা। সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের তত্তাবধানেও হকার উচ্ছেদ অভিযান চলবে। আমরা আশা করছি রমজানের আগেই লালদিঘীর পাড় মাঠ প্রস্তুত হয়ে যাবে। নগরী হকার মুক্ত হবে।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশন প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান সোমবার রাতে দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, লালদিঘীরপাড় হকার মার্কেটের মাঠের সংস্কার কাজ শুরুর প্রক্রিয়াতে রয়েছে। ইতোমধ্যে টেন্ডার ও ১০টি ওয়ার্কঅর্ডার হয়ে গেছে। রমজানের আগে মাঠের সংস্কার কাজ শেষ করে হকারদের পুনর্বাসন করতে নগর কর্তৃপক্ষ জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে সিলেট নগরে হকার সমস্যা দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠেছে। গত এক মাস ধরে নগরের বিভিন্ন স্থানে উন্নয়ন কাজ চলছে। এতে করে কয়েকটি সড়ক বন্ধ রয়েছে। বাকি সড়কগুলো হকারদের দখলে রয়েছে। এতে করে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নগরের কোর্ট পয়েন্ট, ধোপাদিঘীরপাড় কয়েকটি স্থানে অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এসব স্ট্যান্ডের কারণে যানজট বাড়ছে। সিলেটের বর্তমান নিত্যদিনের দীর্ঘ যানজট রাজধানীর যানজটকেও হার মানাচ্ছে। এ নিয়ে জনমণে বাড়ছে ক্ষোভ।