করোনা সংক্রমণ বাড়লেও বন্ধ টিকা কার্যক্রম
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৮:২৯:০৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : কয়েক মাস বিরতি দিয়ে দেশে ফের বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় দেশে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরো ৬৭ জন। চলতি ফেব্রুয়ারী মাসের ২০ দিনে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৬শ ছাড়িয়ে গেছে। এই সময়ে মারা গেছেন আরো ৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে কয়েকজন জেএন.১-এর মতো উপধরণের রোগীও রয়েছেন। দেশে ধীরে ধীরে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও টিকা কার্যক্রমে মিলছেনা সাড়া। সিলেটসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে বন্ধ রয়েছে টিকা কার্যক্রম। এমনকি বন্ধ রয়েছে নতুন টিকা নিবন্ধন।
এ দিকে দেশে বেড়েই চলছে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু। চিহ্নিত হয়েছে জেএন.১-এর মতো উপধরন। চলতি বছর সোমবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৫ জন। এরমধ্যে ফেব্রুয়ারী মাসের ২০ দিনে শনাক্ত হয়েছেন সাড়ে ৬শ। এ সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯ জন। প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে গড় করোনা শনাক্তের হার ৭ শতাংশের বেশি।
এমন পরিস্থিতিতে প্রায় ৯ মাস টিকা কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর নতুন করে গত ২১ জানুয়ারি থেকে রাজধানী ঢাকার ৯টি কেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ৩ জানুয়ারি স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি টিকা প্রয়োগে সরকারকে জোর দেয়ার পরামর্শ দেয় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কিন্তু রাজধানীতে টিকা কার্যক্রম শুরু হলেও সিলেটসহ দেশের অধিকাংশ শহরে বন্ধ রয়েছে টিকা কার্যক্রম। এদিকে টিকা কার্যক্রম চালু না করায় জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারী) দেশে ৪৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হন এবং মারা যান ১জন। রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারী) শনাক্ত হন ৪৩ জন, সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) শনাক্ত হন ৫৩ জন ও সর্বশেষ মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারী) শনাক্ত হন ৬৭ জন। এভাবে প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস থেকে টিকা কার্যক্রমের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি সিলেটে বন্ধ রয়েছে করোনা টিকা কার্যক্রম। নতুন টিকা সিলেটে পৌঁছলেও এখনই কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছেনা। ২/৩ দিনের মধ্যে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন চালু হওয়ার কথা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে করোনা প্রতিরোধে ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম টিকার কার্যক্রম শুরু হয়। ওই দিন প্রথম টিকা নেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। শুরুতেই সম্মুখসারির কর্মী এবং ৪০ বছরের বেশি নাগরিকদের টিকা দেয়া হয়। এরপর গণটিকা দেয়া শুরু হয় একই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি। পরে এপ্রিল মাসে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হয়। আর ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে তৃতীয় ডোজের প্রয়োগ শুরু হয়। তার পর পর্যায়ক্রমে স্কুলশিক্ষার্থীসহ চতুর্থ ডোজের প্রয়োগও শুরু হয়।
এ ছাড়াও টিকা সংকটের কারণে ২০২৩ সালে প্রায় ৯ মাস টিকার তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ প্রয়োগ বন্ধ করা হয়। এমনকি টিকা সংকট ও মানুষের আগ্রহ না থাকায় ধীরে ধীরে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়া হয়। তথ্য আরও বলছে, টিকা নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা অ্যাপসে এখন পর্যন্ত মোট নিবন্ধন করেছেন ১১ কোটি ৪৬ লাখ ৯১ হাজার ৭৬৮ জন। আর দেশে এখন পর্যন্ত করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১৫ কোটি ৯ লাখ ২২ হাজার ৯০২ জন, যা মোট জনসংখ্যার ৮৮.৮৬ শতাংশ।
দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১৪ কোটি ২১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৪ জন, যা জনসংখ্যার ৮৩.৭৩ শতাংশ। প্রথম বুস্টার ডোজ (তৃতীয় ডোজ) পেয়েছেন ছয় কোটি ৮৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯৬ জন, যা জনসংখ্যার ৪০.৭০ শতাংশ। দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ (চতুর্থ ডোজ) নিয়েছেন ৫০ লাখ ৫৩ হাজার ১৭৪জন।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আমরা বিগত দিনে টিকা কার্যক্রম নিয়ে বাড়াতে অনেক কাজ করেছি। গত কয়েক মাস থেকে টিকা না থাকায় কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি আমাদের কাছে পর্যাপ্ত টিকা এসেছে। আগামী সপ্তাহে ফের টিকা কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে ও টিকা গ্রহণে উৎসাহিত করতে বৃহৎ পরিসরে প্রচারণা শুরু হবে। অনলাইন অ্যাপ সুরক্ষায় টিকা গ্রহণে আগ্রহীদের রেজিস্ট্রেশন বন্ধ থাকলেও ‘জন্ম নিবন্ধনের নম্বর দিয়ে টিকা গ্রহীতা চাইলে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর দিয়ে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে কয়েকদিনের মধ্যে ফের চালু হবে। টিকা কার্যক্রম চালুর আগে আমরা মিডিয়ায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রেরণের পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে।