উন্নয়ন বিড়ম্বনায় নগর যানজটে ভোগান্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৪:২৬:৩৮ অপরাহ্ন
মুনশী ইকবাল: বেশ কিছুদিন ধরে তীব্র যানজট নগরে। যানজটের পুরনো সমস্যা যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখলের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ‘উন্নয়ন বিড়ম্বনা’। বিভিন্ন সড়কে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় একদিকে রাস্তা বন্ধ, অন্যদিকে হাজারো গাড়ির চাপ। আর তাই বেড়েছে যানজট, বেড়েছে ভোগান্তি। তবে যানজটের জন্য সমন্বয়হীন উন্নয়ন কাজকেই দায়ী করছেন ট্রাফিক সংশ্লিষ্টরা।
একসাথে পুরো নগরী জুড়ে চলছে কালভার্ট, সড়ক সংস্কার কাজ। নগরীর আম্বরখানা, চৌহাট্টা, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ এলাকায় চলা এসব উন্নয়ন কাজে সড়ক বন্ধ থাকায় সেই চাপ এসে পড়ছে অন্যদিকে। এতে দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়েছেন নগরবাসী। এসএমপির ট্রাফিক বিভাগ বলছে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সমন্বয়হীনতার জন্য এরকম হচ্ছে। একদিকে রাস্তা বন্ধ রাখলে অন্যদিকে বিকল্প রেখে কাজ শুরু করতে হয়। নইলে এর রেশ এসে অন্য সড়কে পড়ে এবং যানজটের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া সিলেটে রাস্তার তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে বলেও জানায় ট্রাফিক বিভাগ। ফলে যানজট নিরসনে দীর্ঘ সমন্বিত ব্যবস্থা না নিলে সামনে অবস্থা সামল দেওয়া আরও কঠিন হতে পারে বলেও ধারণা তাদের।
এদিকে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়েছে নগরীর মাঝখানে দুটি ব্যস্ততম ভিআইপি সড়কে একসাথে তিনটি কালভার্টের কাজে। নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম চৌহাট্টা আম্বরখানা সড়ক এবং চৌহাট্টা রিকাবিবাজার সড়কে একদিকে যান চলাচল বন্ধ রেখে চলছে পুরাতন কালভার্ট ভেঙে চলছে নতুন করে কালভার্ট নির্মাণের কাজ। এরমধ্যে চৌহাট্টা আম্বরখানা সড়কে হজরত শাহজালাল র. এর মাজারের প্রবেশপথের মুখে এবং আম্বরখানা পয়েন্টে এই দুই জায়গায় চলছে কালভার্টের কাজ। এখানে একদিকে যান চলাচল বন্ধ করে কাজ চলছে। ফলে সব যানবাহন একদিক দিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে কখনো কখনো জটলা এত বেশি লেগে যায় যে তা ছুটতে ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। অপর কালভার্টের কাজ চলছে চৌহাট্টা রিকাবীবাজার সড়কে জেলা স্টেডিয়ামের পূর্ব গেইটের কাছে। এই সড়ক ব্যবহার করে সিলেটের বাসীর সবচেয়ে বেশি লোকজন ওসমানী মেডিকেল এবং ডাক্তার পাড়া হিসেবে খ্যাত স্টোডিয়াম মার্কেটে যাওয়া আসা করেন। এই সড়কে সবচেয়ে বড়ো যে সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা তা হলো চৌহাট্টা থেকে রিকাবিবাজার পর্যন্ত পুরো সড়কে কোনো কাটা নেই। ফলে একবার ঢুকে গেলে মাঝখান দিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার পথ নেই তাদের।
এতে এসব এলাকায় সেই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। এসব রাস্তা দিয়ে যান চলাচলে সমস্যা থাকায় আশপাশের সড়ক ও পাড়ার সড়কে বেড়েছে মারাত্মক চাপ। ছোটো এসব সড়ক বেশি বাহন চলার উপযোগী না হওয়ায় কোথাও কোথাও প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস আটকে তৈরি করছে ভয়াবহ যানজটের। অনেকেই একসাথে তিনটি কালভার্টের কাজ শুরু নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা এ ব্যাপারে নগর কর্তৃপক্ষের দূরদর্শীতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
নগরীর আম্বরখানার ব্যবসায়ী পারভেজ আহমদ বলেন, পাশাপাশি দুটো বড়ো সড়কে একসাথে কাজ শুরু করা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। যারা চৌহাট্টা থেকে আম্বরখানা গাড়ি নিয়ে আসতে সমস্যা বুঝতেন তাদের আলিয়া মাদরাসার সামনে দিয়ে রিকাবিবাজার হয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল, একইভাবে রিকাবিবাজারের দিকে যানজট থাকলে আম্বরখানার দিকে যাওয়ার সুযোগ থাকতো কিন্তু এখন এমন অবস্থা কোনোদিকেই পথ রাখা হয়নি। এমনিতেই সারাবছর যানজটের ঝামেলা থাকেই তারমধ্যে উন্নয়নের এই বিড়ম্বনা আমাদের নির্বাক করে দিয়েছে। আমাদের সমস্যা শোনারও কেউ নেই।
আম্বরখানা চৌহাট্টা সড়কে গাড়ির চাপের জন্য অনেকে শাহজালাল র. মাজারের দিকে ঢুকে রাজারগলি হয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। সরু এ পাড়ার গলিতে তাই বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যা। রাজারগলির বাসিন্দা ফয়সল আহমদ জানান মাস দেড়েক থেকে এই সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। দরগার প্রবেশ মুখে কালভার্টের কাজ বন্ধ থাকায় অনেকেই ফাড়ি পথ হিসেবে রাজার গলি ব্যবহার করছেন। কেউ কেউ রাস্তার পরিধি না জেনে প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস নিয়ে ঢুকে পড়েন। অনেকগুলো মোড় থাকায় এসব জায়গায় এসে গাড়ি আটকে যায়। এতে পাড়ার রাস্তায়ও যানজটের সৃষ্টি হয়। গাড়ির হর্ণ আর আওয়াজে এলাকার নিরিবিলি পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
একচিত্র নাইওরপুল থেকে সুবহানীঘাট সড়কে। সেখানেও রাস্তার উন্নয়ন কাজের পড়েছে আশপাশের সবকটি সড়কে। ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। সর্বোচ্চ জনবল নামিয়েও ট্রাফিক পুলিশকে এসব যানজট নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে।
এদিকে যানজটের কারণে বিভিন্ন রাস্তায় যানবাহন নিয়ে যেতে অনাগ্রহী হয়ে চালকরা। কোর্ট পয়েন্ট থেকে মদীনামার্কেট যেতে জিন্দাবাজার চৌহাট্টা হয়ে স্টেডিয়ামের সামনে দিয়ে যেতেন সিএনজি চালকরা। মঙ্গলবার দেখা যায় যানজটের জন্য সেদিকে যেতে রাজি হচ্ছেন না চালক। ফিরোজ মিয়া নামে এক চালক জানান গতকাল চৌহাট্টা হয়ে গিয়ে তওবা করেছি এ রাস্তা দিয়ে আর যাবো না। চৌহাট্টা থেকে রিকাবিবাজার পর্যন্ত একঘণ্টা লেগেছে যেতে। দুই মিনিটের রাস্তায় একঘণ্টায় কত টাকার গ্যাস জ¦ললো আর সময় গেল সে হিসাব কীভাবে পুষাবো।
এদিকে যানজট নিয়ে বিব্রত এসএমপির ট্রাফিক বিভাগও। অনেকগুলো সড়কে অনেকগুলো বিভাগের একসাথে উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ায় যেসব দিকে যান চলাচল বন্ধ আছে সেই চাপ অন্য সড়কগুলোতে এসে পড়ছে। তারা বলছে, সিলেটের রাস্তার তুলনায় যানবাহন বেশি। তাছাড়া বিভাগীয় নগরী হওয়ায় কর্মসূত্রে অনেকেই পরিবার পরিজন এখানে রেখে বাইরে থাকেন। তারা বৃহস্পতিবার এবং ছুটির দিনে সিলেটে অবস্থান করেন। এরবাইরে সিলেট পর্যটন নগরী হওয়ায় বিপুল সংখ্যাক পর্যটকের আগমন ঘটে সিলেটে। তাদের বাহনের চাপের ব্যাপারও এখানে একটা প্রভাব ফেলছে।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মাহফুজুর রহমান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, কয়েকটি সড়কে একযুগে একাধিক বিভাগের উন্নয়ন কাজ চলছে। এতে বেশ কয়েকটি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেই চাপ এসে অন্য সড়কগুলোতে পড়ছে যেগুলোতে যান চলাচল বহাল আছে। স্বাভাবিকের চেয়ে এসব সড়কে গাড়ির চাপ যেহেতু বেশি সংগত কারণেই তাই যানজট বেড়েছে। এসব ক্ষেত্রে বিকল্প রাস্তার চিন্তা রেখে সড়কে কাজ করতে হয়। কিন্তু সিলেটে রাস্তার পরিমাণ কম হওয়ায় সেই সুযোগ কম।
তিনি বলেন এক্ষেত্রে ট্রাফিক বিভাগ তার সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন গাড়ি ও সিএসজি স্ট্যান্ডের সাথে তারা নিয়মিত মিটিং করে যানবাহন সুশৃঙ্খল রাখার জন্য বলে যাচ্ছেন। তারা বলার পর কয়েকদিন একটু সুন্দর থাকে তারপর আবার বিশঙ্খল হয়ে যায়। তখন জটলা বেশি হয়। তাই তাদের সাথে নিয়মিত মিটিংয়ের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন তারা।
উপ কমিশনার আরও বলেন, সিলেটের রাস্তার তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই সড়ক সম্প্রসারণ এবং সবগুলো বিভাগের সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম খুব জরুরি। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম চালানো না গেলে বিড়ম্বানা থেকেই যাবে।