রোজার আগে ও ঈদের পর ২দফা বাড়বে বিদ্যুতের দাম!
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৯:০৮:৫৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : বিদ্যুৎ খাতে লোকসান কমিয়ে আনতে দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। মার্চেই বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে। এবার দুই দফায় বাড়বে বিদ্যুতের দাম। রোজার আগে প্রথম দফা এবং ঈদের পর দ্বিতীয় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দামও বাড়বে।
একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে মার্চ থেকেই। এতে বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশেও ওঠানামা করবে জ্বালানি তেলের দাম। এক্ষেত্রে ডিজেলের দাম বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বুধবার বলেছেন, শিগগিরই বাড়তে পারে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুতের দাম গ্রাহক পর্যায়ে বাড়লেও গ্যাসের দাম শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনেই বাড়বে। ছোট গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সামান্য পরিমাণে বাড়তে পারে এবং বড় গ্রাহকদের তুলনামূলক বেশি বাড়বে।
জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মার্চ মাস থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যুক্ত করা হবে জ্বালানি তেলের দাম। নতুন দর মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই কার্যকর হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে দাম বাড়বে, আর কমে গেলে কমে আসবে।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়ে গেছে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। আগে ডলার ৭৮ টাকায় পাওয়া যেত, এখন প্রায় ১২০ টাকার মতো হয়ে
গেছে। প্রতি ডলারে প্রায় ৪০ টাকার মতো বেশি খরচ হচ্ছে। এতে বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দাম সমন্বয় জরুরি হয়ে পড়েছে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে নতুন করে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই তৎপরতা আরও আগেই শুরু হয়। কিন্তু মাঝে নির্বাচন থাকায় তা থেমে ছিল। তবে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ২০০ ইউনিট পর্যন্ত গ্রাহকদের কম হারে মূল্যবৃদ্ধির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আর ২০০ ইউনিটের বেশি বিলে পর্যায়ক্রমে ভর্তুকি শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। তবে পুরো প্রক্রিয়া একবারে না করে ধাপে ধাপে করা হবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি শূন্যে নামাতে বাল্ক মূল্যহার প্রায় ৮০ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই তা কার্যকরের প্রস্তাব করা হয়েছিল। পাশাপাশি বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ও সংস্থাগুলোর লোকসান ঠেকাতে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় পিডিবি। গ্রাহক পর্যায়ে ৭৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত পুরোপুরি ভর্তুকিমুক্ত করতে হবে। সরকারও এ ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন রমজানের আগেই বিদ্যুতের দাম বাড়তে যাচ্ছে। যদিও আগে গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হতো। তবে ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সরাসরি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করছে।
এ ব্যবস্থায় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাল্ক মূল্যহার প্রায় ২০ শতাংশ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আট শতাংশ বাড়ানো হয়। এছাড়া ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন দফা পাঁচ শতাংশ করে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে বাড়ে বিদ্যুৎ, শিল্প, ক্যাপটিভ ও বাণিজ্যিক খাতে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম। তবে আবাসিক, সিএনজি ও চা-শিল্পের গ্যাসের দাম সেবার বাড়েনি।
এদিকে বর্তমানে দেশীয় গ্যসে উত্তোলন কমে যাওয়ায় সরবরাহকৃত গ্যাসের ২৩ শতাংশই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস তথা এলএনজি থেকে আসছে। তারপরও চাহিদা ও সরবরাহে দৈনিক গ্যাসের ঘাটতি থাকছে প্রায় ১৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বড় এই ঘাটতি কমাতে স্পট মার্কেট থেকে উচ্চমূল্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আর সে আমদানি ব্যয় সামাল দিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম নতুন করে বাড়ানোর কাজ শুরু করেছে জ্বালানি বিভাগ। এছাড়া সার উৎপাদন ও সিএনজি খাতেও গাসের দাম বাড়তে পারে।
অন্যদিকে আইএমএফ গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি (অটোমেটেড প্রাইসিং ফর্মুলা) কার্যকর করার শর্ত দিয়েছিল। আইএমএফের শর্ত পূরণে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেনসহ জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে নিয়মিত সমন্বয় করার উদ্যোগ নেয় সরকার। শুরুতে এটি তিন মাস পরপর নির্ধারণের পরিকল্পনা ছিল। তবে এখন প্রতি মাসে দাম নির্ধারণের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
দাম নির্ধারণ পদ্ধতির বিষয়ে বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, তেলের দাম নির্ধারণের দুটি অংশ থাকবে। প্রিমিয়াম (জাহাজ ভাড়া ও অন্যান্য), ট্যাক্স, বিপণন মার্জিন, ডিলারদের কমিশন ইত্যাদি মিলে একটি নির্ধারিত অংশ থাকবে, যা সাধারণত পরিবর্তন হবে না। অপর অংশটি আন্তর্জাতিক মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়বে বা কমবে। ফর্মুলা প্রণয়নে ভারতের জ্বালানি তেলের দরও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে ডিজেলের দাম বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।