বৃষ্টিপাতে ফসল উৎপাদনে কারো আশীর্বাদ কারো শঙ্কা!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৭:৩৬:২৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: গত দুই-দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হচ্ছে বৃষ্টিপাত। বর্তমানে মাঠে রয়েছে রবি মৌসুমের বিভিন্ন ফসল। এর মধ্যে আগাম আলু, পেঁয়াজ, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল তুলেছেন কৃষক। তবে মূল মৌসুমের অধিকাংশ ফসল এখনো মাঠে। আম, ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত্রে এ বৃষ্টি অনেকটা আশীর্বাদ বলে মনে করছেন কৃষক। আবার বিভিন্ন স্থানে গম ও সবজির ক্ষতি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সিলেটে সর্বোচ্চ ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া হাতিয়ায় ২৩ মিলিমিটার, বরিশালে ১৫, হিজলায় ১৪, চাঁদপুরে ৭, কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও ভোলায় ৩ মিলিমিটার করে বৃষ্টি হয়। রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী, বাগেরহাটসহ আরো কয়েকটি জেলায় গতকাল বৃষ্টিপাত হয়েছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফাল্গুনের শুরুতে এ বৃষ্টি ধান, আম, পানসহ বিভিন্ন ফসলের জন্য উপকারী হবে। আবার অনেকে রমজান সামনে রেখে বিভিন্ন সবজি আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাদের আবাদ পিছিয়ে যেতে পারে কয়েক দিন। এছাড়া আলুর মৌসুম শেষদিকে। কিছুদিনের মধ্যে আলু তোলা শুরু করবেন কৃষক। তবে এ সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় আলুর আর্দ্রতা বেড়ে যাবে। এতে সংরক্ষণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। আর গমের ক্ষেত্রে বৃষ্টি ও দমকা হওয়ায় কিছু স্থানে নুয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
সুনামগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বয়ে গেছে। কোথাও ঝরেছে শিলাবৃষ্টি। দিনের বিভিন্ন সময় সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি, পরে দমকা হাওয়াসহ মুষলধারে বৃষ্টি ঝরেছে। তবে ফাল্গুনের শুরুর এ বৃষ্টিতে ধান, আম, পানসহ বিভিন্ন ফসলের উপকার হবে বলে ধারণা কৃষকদের।মো. রুস্তম আলী শেখ নামের এক কৃষক বলেন, ‘ফাল্গুনে বৃষ্টি হওয়া ফসলের জন্য খুবই ভালো। আজকের বৃষ্টিতে ধান, পান, সরিষাসহ সব ধরনের ফসলের উপকার হবে। এ বৃষ্টির পানিতে সারের চেয়েও বেশি কাজ হয়েছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের মাঠ-ঘাটে থাকা ধানসহ বিভিন্ন ফসলের উপকার হবে। এ সময়টায় যেমন সূর্যের তাপ বেশি থাকে, আবার পানি সংকটও থাকে। সে কারণে বৃষ্টি হলে কৃষকদের ওপর চাপ অনেক কমে যায়। এর সঙ্গে সঙ্গে ফসলের ফলন বেশি হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এদিকে শনিবার সিলেটসহ দেশের কিছু স্থানে হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা জানান, গত দু-তিন দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। শনিবারও হালকা বৃষ্টি হতে পারে কিছু স্থানে। তবে এরপর এক সপ্তাহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘এখন বৃষ্টি হলে অধিকাংশ ফসলের জন্য উপকার হবে। সেচের প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে। আলুতেও খুব বেশি ক্ষতি হবে না। তবে আলুর সংরক্ষণক্ষমতা কমে যেতে পারে। কারণ কিছুদিন পরই আলু তোলা হবে। এ মুহূর্তে বৃষ্টি হলে আলু পানি পেয়ে যাবে। আলু সাধারণত কৃষক শুষ্ক মৌসুমে তোলেন। তাহলে অনেক দিন আলু থাকে। তবে ভেজা আলু তুলে শুকিয়ে নিলে সমস্যা হবে না।’
এল নিনোর প্রভাবে গত বছর অস্বাভাবিক আচরণ করেছে প্রকৃতি। রবি মৌসুমের শুরু থেকেই টানা বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, কুয়াশাসহ আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণের কারণে বিভিন্ন স্থানে ফসলের ক্ষতি হয়েছে, যার কারণে সরবরাহ কম হওয়ায় অধিকাংশ সবজির দাম এখনো বেশি। অক্টোবরের টানা বৃষ্টির পর নভেম্বর ও ডিসেম্বরেও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়েছে। পাশাপাশি ডিসেম্বরে শীত ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কম। আবার জানুয়ারিদে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের আলো দেখা যায়নি। এতে টানা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় বিভিন্ন স্থানে সূর্যের দেখা যায়নি। মূলত প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনোর প্রভাবে আবহাওয়া এমন অস্বাভাবিক আচরণ করেছে। এতে শীতকালীন সবজি ও বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে সমস্যয় পড়েছিলেন কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে ৬ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেয়া হয়েছিল। এসব জমি থেকে মোট ১ কোটি ৪৫ লাখ টন শাকসবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেয়া হয়েছিল। এছাড়া ২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার টন পেঁয়াজ ও ৪ লাখ ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ১৬ লাখ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও হাতে নেয়া হয়েছে।