আমাজনে নতুন প্রজাতির বিশালাকায় সাপের খোঁজ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৮:৩২:৪৩ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আমাজনের অরণ্যে গবেষণা চালাতে থাকা বিজ্ঞানীরা সাপের একটি নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন। স্থানীয়দের দাবি সত্যি হলে এটিই পৃথিবীর বৃহত্তম সাপ। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের একটি গবেষক দল আমাজন রেইনফরেস্টের ইকুয়েডরের অংশে এর আগে নথিভুক্ত হয়নি এমন এ ধরনের সাপ অনুসন্ধানের জন্য ভ্রমণ করেছিলেন। গবেষকেরা জানান ওয়াওরানি আদিবাসীদের ‘সবচেয়ে বড় অ্যানাকোন্ডা’ পর্যবেক্ষণের আমন্ত্রণ পেয়ে অভিযানটিতে যান। এসব তথ্য জানা যায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে।
এদিকে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের পর সাপটির নাম দেওয়া হয় নর্দার্ন গ্রিন অ্যানাকোন্ডা (ইউনেক্টেস আকায়িমা)। ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের একজন জীববিজ্ঞানী ও দলটির নেতা অধ্যাপক ব্রায়ান ফ্রাই এক বিবৃতিতে বলেন, দলটির সদস্যরা বাইহুয়ায়েরি ওয়াওরানির বামেনো অঞ্চলে ১০ দিনের অভিযানে আদিবাসী শিকারিদের সঙ্গী হোন। নদী ধরে নৌকায় ভ্রমণের সময় অগভীর জায়গায় লুকিয়ে থাকা বেশ কয়েকটি অ্যানাকোন্ডার খোঁজ পান। এরা শিকারের অপেক্ষায় উৎ পেতে ছিল।
অ্যানাকোন্ডা বিশাল আকারের, নির্বিষ এমন এক ধরনের সাপ যারা শিকারকে চাপ দিয়ে সংকুচিত করে গিলে ফেলে। দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণ এলাকার পানিতে বা পানির কাছাকাছি বনভূমিতে পাওয়া যায় এদের। ‘এই প্রাণীগুলির আকার অবিশ্বাস্য। আমরা এমন একটি স্ত্রী অ্যানাকোন্ডা পাই যেটা ৬ দশমিক ৩ মিটার (২০ দশমিক ৭ ফুট) লম্বা ছিল।’ নিজেদের দলের আবিষ্কার সম্পর্কে বলেন ফ্রাই। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের আসন্ন সিরিজ ‘পোল টু পোল উইথ উইল স্মিথ’ চিত্রগ্রহণের সময় এ আবিষ্কার করেন তাঁরা।
দলটির সদস্যরা আরও জানান, এই এলাকায় ৭ দশমিক ৫ মিটার (২৪ দশমিক ৬ ফুট) লম্বা এবং ৫০০ কিলোগ্রাম (১ হাজার ১০০ পাউন্ড) ওজনের সাপ দেখা গেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। যুক্তরাজ্যের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের দেওয়া তথ্য অনুসারে পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী সাপ হলো গ্রিন অ্যানাকোন্ডা বা সবুজ অ্যানাকোন্ডা। এখন পর্যন্ত এ প্রজাতির সবচেয়ে ভারী সাপ রেকর্ড করা হয়েছে ২২৭ কেজি বা ৫০০ পাউন্ড। এটি ছিল লম্বায় ৮ দশমিক ৪৩ মিটার (২৭ দশমিক ৭ ফুট) এবং চওড়ায় ১ দশমিক ১১ মিটার (৩ দশমিক ৬ ফুট)।
অজগর সাপের একটি প্রজাতি রেটিকুলেইটেড পাইথন সাধারণত অ্যানাকোন্ডার থেকে লম্বা হয়। পৃথিবীর দীর্ঘতম সাপ হিসেবে এদেরই পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। দৈর্ঘ্যে প্রায়ই ৬ দশমিক ২৫ মিটার (২০ দশমিক ৫ ফুট) ছাড়িয়ে যায় এই অজগরেরা। তবে এরা অ্যানাকোন্ডার তুলনায় হালকা অর্থাৎ কম ওজনদার হয়। কিন্তু প্রাণীগুলিকে নিয়ে গবেষণা করা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে নতুন শনাক্ত করা নর্দার্ন গ্রিন অ্যানাকোন্ডা প্রায় ১ কোটি বছর আগে সাউদার্ন গ্রিন অ্যানাকোন্ডা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল এবং তারা জিনগতভাবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ আলাদা। আর জিনগত এই পার্থক্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে জানিয়েছেন ফ্রাই।
দলটির সদস্যরা বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য একটি সূচক প্রজাতি হিসেবে মূল্যায়ন করতে গ্রিন অ্যানাকোন্ডার জেনেটিকস বা বংশগতিকে অন্যান্য নমুনার সঙ্গে তুলনা করার কথা ভাবছেন। তাঁরা সতর্ক করে দেন যে আমাজন বিভিন্ন ধরনের হুমকিতে আছে।
‘কৃষি সম্প্রসারণের কারণে আমাজন অববাহিকার বন উজাড় হওয়ায় আনুমানিক ২০-৩১ শতাংশ আবাসস্থলের ক্ষতি হয়েছে বন্যপ্রাণীর, যা ২০৫০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ বনভূমিকে প্রভাবিত করতে পারে।’ বলেন ফ্রাই তিনি আরও বলেন, ‘আবাসস্থল ধ্বংস, বনের দাবানল, খরা এবং জলবায়ু পরিবর্তন অ্যানাকোন্ডার মতো প্রজাতিকে হুমকির মুখে ফেলে, যা এ ধরনের বিরল বাস্তুতন্ত্রে বিদ্যমান।’