ছদ্মবেশে কাজ করছেন মিয়ানমারের সাংবাদিকরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৯:৩৪:৫৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : কেউ শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। অনেকে আবার শিক্ষার্থী ও দোকানদার। মিয়ানমারে সাংবাদিকরা তাদের প্রকৃত পেশাকে আড়াল করতে দিনের বেলা নানারকম কাজ করে থাকেন। দেশটির বর্তমান পরিস্থিতিতে সাংবাদিক হিসেবে সরাসরি কাজ করার ঝুঁকি অনেক বেশি।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত হয়ে আসায় কিছু সাংবাদিক এখনও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কাজ করে চলেছেন। নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরে তারা ‘কভার জব’ বা পেশাগত ছদ্মবেশ নিয়েছেন। খবর ভয়েস অব আমেরিকার প্রায় তিন বছর আগে বেসামরিক সরকারকে সামরিক বাহিনী উৎখাত করার পর থেকে জান্তা স্বতন্ত্র গণমাধ্যমের উপর ব্যাপক দমনপীড়ন চালিয়েছে। এক ডজনের বেশি মিডিয়া সংস্থাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অনেক সাংবাদিককে কারাবন্দি করা হয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের ফলে অনেক সংস্থাই অন্য দেশে সরে গেছে এবং অনেক সাংবাদিক সম্পূর্ণভাবে কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে, কিছু সাংবাদিক মিয়ানমারে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং নিজেদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যাপক ঝুঁকি নিয়েই গোপনে তারা খবর পাঠাচ্ছেন।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোপনে কর্মরত এক সাংবাদিক জানান, সামরিক বাহিনী আমাদের যেকোনও সময় গ্রেফতার করতে পারে।’ নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা পরিচয় গোপন রাখতে অনুরোধ করেছেন।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের পর থেকে আমি সবাইকে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি যে, সাংবাদিক হিসেবে আমি আর কাজ করব না। তবে কাজ ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে তারা বিদেশি ভাষার শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশকে ব্যবহার করছেন।
মিয়ানমারের আরেক সাংবাদিক বলেন তারা তাদের শহরের লোকজনকে বুঝিয়েছেন যে, ‘আমি সাংবাদিকের কাজ ছেড়ে দিয়েছি।’ তিনি এখনও সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন, তবে শিক্ষকতার চাকরি সেই পেশাগত পরিচয়কে আড়াল করতে সাহায্য করছে।
সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমার ত্যাগ করে ব্যাংককে চলে আসা এক সাংবাদিক বলেন, পেশাগত ছদ্মবেশের এই প্রবণতা ইঙ্গিত দিচ্ছে মিয়ানমারের সাংবাদিকরা সহজে হাল ছেড়ে দিতে রাজি নন।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস বা সিপিজের বক্তব্য অনুযায়ী, পেশার জন্য কারারুদ্ধ সাংবাদিকদের সংখ্যার নিরিখে ২০২৩ সালে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে ছিল মিয়ানমার। কমপক্ষে ৪৩ জন সাংবাদিককে কারাবন্দি করা হয়েছে।
ওই শিক্ষক তথা সাংবাদিক বলেন, জান্তা দেশকে অন্ধকারে রাখতে চায়। তারা চায় না দেশের প্রকৃত পরিস্থিতি বিশ্ব জানুক। এই কারণে জান্তা সাংবাদিকদের গ্রেফতার করতে চেষ্টা করছে।
এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অনুরোধ করলেও মিয়ানমারের সামরিক সরকার উত্তর দেয়নি। মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপটেয়ার টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, এই দেশের অভ্যন্তরে মিডিয়া বিশাল ঝুঁকি নিচ্ছে। অ্যান্ড্রুজ বলেন, মিয়ানমারে সাংবাদিকরা আক্ষরিকভাবে জীবন হাতে নিয়ে কাজ করছেন।
মিয়ানমারের সাংবাদিকরা বলেন, দেশে কোনও সাংবাদিক না থাকলে জান্তা যা চায় তা নিশ্চিতভাবে করে ফেলবে।