নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য বিভাগ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৪৫:২৬ অপরাহ্ন
* সিলেট জেলায় বন্ধ ৫টি প্রতিষ্ঠান
* নগরে ৬টিকে সতর্কবার্তা!
* কাগজ ঠিক না থাকলে ছাড়া হবে না : ডেপুটী সিভিল সার্জন
স্টাফ রিপোর্টার : নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর হাসপাতাল-ক্লিনিক অর্থাৎ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শনের কথা। বলা হয় এটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘রুটিন ওয়ার্ক’। কিন্তু রুটিন মেনে সেই রুটিন ওয়ার্ক না হওয়ায় অনুমোদনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ব্লাডব্যাংকগুলো চালিয়ে যাচ্ছে তাদের রমরমা ব্যবসা। মাঝে মাঝে অভিযানে কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও সেই অভিযানে ভাটা পড়ে কিছুদিন পরই। বন্ধ করা প্রতিষ্ঠানগুলোও আবার পুরোদমে শুরু করে তাদের কার্যক্রম।
তবে এবার নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও চলছে অভিযান। গত এক মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় ও সিলেট জেলা সিভিল সার্জনের উদ্যোগে পরিচালিত পৃথক অভিযানে সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৫টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া এসময় মহানগর এলাকায় লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় ৬টি হাসপাতাল-ক্লিনিককে সতর্ক করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন করা না হলে বন্ধ করে দেয়ার হুশিয়ারীও দেন তারা।
সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সূত্রটি আরো জানিয়েছে- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে সিলেটের অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো তদারকি করতে দুইটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। মহানগর এলাকায় তদারকির দায়িত্বে থাকা কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হারন-অর-রশিদ এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলায় তদারকির দায়িত্বে থাকা কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী।
জানা গেছে, ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হলেই জানা যায় হাসপাতাল বা ক্লিনিক অবৈধ। বলা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি বা লাইসেন্স ছাড়াই চলছিল হাসপাতালটি। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটার আগেই কেন এমন হাসপাতাল বা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না বা তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না এমন প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। এরই ধারাবাহিকতায় সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
সারাদেশে ১ হাজার ২৮৫টি অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে বলে জানুয়ারী মাসে তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সবচেয়ে বেশি ৪১৫টি অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে ঢাকা বিভাগে। এরপর ময়মনসিংহে ২৫২টি, চট্টগ্রামে ২৪০টি, খুলনায় ১৫৬টি, রংপুরে ১১১টি, রাজশাহীতে ৫৫টি, বরিশালে ৪৮টি ও সিলেট বিভাগে ৮ টি অবৈধ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।তবে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে অবৈধ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৩৯টি। ২০২২ সালে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানে এই তথ্য সামনে এসে। যদিও এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত লাইসেন্স নবায়ন করে আসছে। এরপরও অবৈধ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩২টির কম নয় বলে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা জানান।
২০২২ সালে নগর এলাকায় এক অভিযানে ১৬টির মধ্যে ৪টি হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং ১২টি ডায়গানস্টিক সেন্টার মেয়াদোত্তীর্ণ বলে জানা যায়। সেই সময় উপজেলাগুলোর ২৩টি অনুমোদহীন ডায়গানস্টিক সেন্টারের খোঁজ মিলে।২০২২ সালে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, সিলেট নগর ও ১৩টি উপজেলায় ৩৭২টি হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডায়গানস্টিক সেন্টার রয়েছে। তন্মধ্যে নগরীতে ৭১টি হাসপাতাল-ক্লিনিক, ৯৮টি ডায়গানস্টিক সেন্টার ও ৭টি ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। এছাড়া উপজেলাগুলোতে ১০৩টি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়গানস্টিক সেন্টার রয়েছে।
তবে বর্তমানে সিলেট মহানগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা এলাকায় মোট প্রায় ৪শত হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডায়গানস্টিক সেন্টার রয়েছে বলে সিলেট সিভিল সার্জন সূত্রে জানা গেছে।এ ব্যাপারে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: জন্মেজয় শংকর দত্ত সোমবার রাতে দৈনিক জালালাবাদকে জানান- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১ মাসে সিলেট মহানগর এলাকায় একটি ও জেলার উপজেলাগুলোতে একটি টিম নিয়মিত কাজ করছে। টিমের সদস্যরা জেলা ও মহানগর এলাকার ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো পরিদর্শন করছেন এবং নিয়ম মেনে পরিচালিত হচ্ছে কি না সে বিষয় তদারকি করছেন। কাগজপত্র ঠিক না থাকা ও নিয়ম না মানায় ইতোমধ্যে সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৫টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল লাইসেন্স ও নবায়ন করার জন্য স্বল্প সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, সিলেট মহানগর এলাকায় আমরা নতুনভাবে বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টি সেন্টারের তালিকা করছি। এরমধ্যে যেগুলোর লাইসেন্স নবায়ন এবং ডিজিটাল করা নেই, তাদের নির্ধারিত সময় দিয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় সিলেটের সুপরিচিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা কাগজপত্র ঠিক না করলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। এবার আর তাদের ছাড় দেওয়া হবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি।
এদিকে হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে জিরো টলারেন্স নীতিতে থাকবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। তিনি জানান, এক মাসের অভিযানে দেশে প্রায় ১ হাজার ২২৭টি অবৈধ ক্লিনিক/ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। এ অভিযান এখনো চলছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, কোনো অনুরোধ বা তদবিরেই অবৈধ বা যন্ত্রপাতিহীন ক্লিনিক/ডায়াগনস্টিক সেন্টার সচল রাখা হবে না। আমরা এক মাসে প্রায় ১ হাজার ২২৭টি অবৈধ ক্লিনিক/ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করেছি, এখনো অভিযান চলমান আছে। এর সঙ্গে আরও বলে রাখি, বৈধ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত লোকবল ও যন্ত্রপাতি না থাকলে সেগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।