সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে থামছেনা চোরাচালান
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৬:৩৬:০৮ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বেড়েছে চোরাচালান। প্রতিদিন সীমান্ত পথ দিয়ে ভারতীয় পণ্য দেশের ভিতর ঢুকছে। পুলিশ মাঝে মাঝে চিনি কিংবা পেঁয়াজের চালান আটক করলেও থেমে নেই চোরাচালান। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ৪৫ টন পেঁয়াজ আটক করে পুলিশ। আটক হওয়া সবচেয়ে বড় চোরাচালান এটি। চোরাচালানির গুনতে হয় পথে পথে টাকা। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পথ দিয়ে এসব মালামাল বের হওয়া এখন ওপেন সিক্রেট।
সুনামগঞ্জের তিনটি বর্ডার হাট ও আশপাশ এলাকা এখন ভারতীয় চিনি পেঁয়াজের বন্দর হিসেব পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতি হাটবারে গভীর রাত পর্যন্ত কোটি কোটি টাকার ভারতীয় চিনি, পেঁয়াজ শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সীমান্তের এপারে আসছে।
সুনামগঞ্জ সীমান্তের তিনটি বর্ডার হাটের প্রথমটি হচ্ছে, ডলুরা বালাট সীমান্ত হাট। যা ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর ইউনিয়নের ডলুরা এলাকায় এবং ভারতের মেঘালয়ের বালাট সীমান্ত এলাকায় চালু হয়। এই হাট বসে সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার। এখানকার ৫০টি দোকানকে দুই দেশের মধ্যে ভাগ করে দেয়া আছে।
এই সীমান্তের দ্বিতীয় বর্ডার হচ্ছে, দোয়ারাবাজার উপজেলার ভোগলা ইউনিয়নের বাগানবাড়ি বর্ডার হাট। ভারতের মেঘালয়ের রিংকু ও বাগানবাড়িতে এই হাটের অবস্থান। এই হাট বৃহস্পতিবার বসে। এই হাটের ৫০টি দোকানকেও দুই দেশের দোকানীদের ভাগ করে দেওয়া।
সীমান্তের তৃতীয় এবং দেশের ১৪তম বর্ডার হাট হচ্ছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের লাউড়েরগড় ও ভারতের পশ্চিম হিল সীমান্তের সায়েদাবাদ বর্ডার হাট। এই হাট বুধবার বসে থাকে। এখানেও একইভাবে দোকান ভাগ করে দেয়া আছে। প্রতি হাটে বাংলাদেশের ক্রেতা কার্ড আছে পাঁচশ থেকে সাড়ে পাঁচশ’ এর মত।
সকাল ১০টায় শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় বর্ডার হাটের কেনাকাটা শেষ হবার কথা থাকলেও গেল প্রায় ছয় মাস হয় গভীর রাত পর্যন্ত এই হাট দিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় চিনি, পেঁয়াজ, নাসির উদ্দিন বিড়ি, কমলা ও বিভিন্ন ধরণের চকলেট ও কসমেটিক্স ঢুকছে দেশের অভ্যন্তরে।
দোয়ারাবাজারের বাগানবাড়ি রিংকু বর্ডারহাটের একজন বাংলাদেশী দোকানী বললেন, প্রতি হাটবারে চল্লিশ হাজার থেকে ৫০ হাজার ক্যারেট চিনি, পেঁয়াজ, আলু, আপেল, কমলা ও নারিকেল নামছে এপারে। যা এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নৌকা ও ট্রাকে চলে যাচ্ছে। বাজার কমিটির লোকজনকে ক্যারেট প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা দিলেই নামতে কোন বাধা নেই।
ওখানকার একজন ব্যবসায়ী (কার্ডধারী ক্রেতা) ইসমাইল হোসেন অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বললেন, প্রতি কার্ডে ২০-২৫ হাজার টাকার বেশি মালামাল নামানো হয় না। এর বাইরে সামান্য কিছু মালামাল বিজিবি ও বাজার কমিটির লোকজনকে ৫০০-১০০০ টাকা দিয়ে নামানো যায় বলে স্বীকার করলেন তিনি। তবে বেশি মালামাল নামানো যায় না বলে দাবি করেন ইসমাইল।
বোগলা বাজার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিলন খান বললেন, এখানে দুই দেশের বাজার কমিটি আছে। কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে বেশি মালামাল নামানোর কোন সুযোগ নেই। এ ধরণের অভিযোগ সত্য নয়।কেবল বাগানবাড়ি রিংকু বর্ডার হাট নয় জেলার লাউড়েরগড় ও সুনামগঞ্জ সদরের ডলুরা বর্ডার হাটেও নিয়ম বহিভূর্তভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে মালামাল নামছে।
সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল মাহবুবুর রহমান বলেন, একটি জেলার সীমান্তে তিনটি বর্ডার হাট দেশের অন্য জেলায় আছে বলে আমার জানা নেই। এখানকার মানুষের জীবন যাপনের মানোন্নয়নের জন্যই এটি করা হয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষ এর অপব্যবহার করার চেষ্টা করছে। বর্ডার হাটগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি গেল আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আমিও উত্থাপন করেছি। এখানে বিজিবি কেবল নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার কথা। কে কত টাকার মালামাল নিচ্ছে, সেটি দেখার এখতিয়ার বিজিবি’র নেই। পেঁয়াজ, চিনি নিয়ম বহিভূর্তভাবে নামার বিষয়টি তিনিও জেনেছেন জানিয়ে বললেন, আমিও আইন শৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রাখার তাগিদ দিয়েছি। বিজিবির কোন সদস্য ওখানে কোন অপরাধ কর্মে যুক্ত হবার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবার কথা জানান তিনি। বর্ডার হাটগুলোতে চার পাঁচ ঘণ্টার জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেট থাকা জরুরি হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করে তিনি।