মৌলভীবাজারে ৪ পেশাদার ছিনতাইকারী আটক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৭:৩৭:৩৫ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ অভিযানে আন্ত:জেলা ছিনতাই চক্রের ৪ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোহাম্মদ সারোআর আলমের নেতৃত্বে জেলা পুলিশের একটি চৌকস দল সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারী) গোপন সংবাদে তাদের অবস্থান সনাক্ত করে সিলেট শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে একাধিক ছিনতাই ও ডাকাতি মামলার আসামী ওই চারজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। আটককৃতরা হলো, সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার চন্দনভাগ গ্রামের মৃত আব্দুল জলিল’র পুত্র বেলাল আহমেদ ওরফে জাকির ওরফে জাকারিয়া মোল্লা, একই জেলার শাহপরান থানার মুক্তিরচক গ্রামের লাল মিয়ার পুত্র কামাল মিয়া, একই জেলার ওসমানীনগর উপজেলার নাগেরকোনা গ্রামের মৃত নিজাম উদ্দিন’র পুত্র হোসেন ওরফে তৌফিক ও একই জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার হেতিমগঞ্জ এলাকার আব্দুল মতলিবের পুত্র বাবুল আহমেদ।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা পুলিশের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায়। তিনি বলেন, গ্রেফতারকালে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, নগদ টাকা এবং বিভিন্ন লুন্ঠিত সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, গেল বছরের ৬ ডিসেম্বর দুপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বের হবার পর এক নারী ছিনতাইয়ের শিকার হন। এরপর চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় একটি এবং পুনরায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পৃথক আরেকটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুজন চা শ্রমিকের পেনশনের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ছিনতাই হয়। এসব ঘটনায় থানায় পৃথক মামলা রুজু করা হয়। প্রতিটি ঘটনায় ছিনতাইয়ের ধরণ ছিল একই। মোটরসাইকেল দিয়ে অটোরিকশা থামিয়ে অস্ত্রের মুখে টাকা ও মূল্যবান জিনিস লুট করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো বলেন, এই ছিনতাই চক্রকে গ্রেফতারের জন্য জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান পিপিএম (বার) এর দিকনির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোহাম্মদ সারোআর আলমের নেতৃত্বে একটি বিশেষ অভিযানিক টিম গঠন করা হয়। এই টিম গত কয়েকদিন ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত (সিসি টিভি ফুটেজ/ছবি) সংগ্রহ করে সেগুলো বিশ্লেষণ করে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামীদের সনাক্ত ও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে জড়িতদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তদন্তকালে ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সংগৃহীত ব্যক্তিদের ছবির সাথে আসামীদের চেহারার হুবহু মিল পাওয়ায় যায় এবং তারা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের নিকট ছিনতায়ের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। সংশ্লিষ্ট আইনে আসামীদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী গ্রহণের জন্য আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
পুলিশ আরও জানায়, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। এক্ষেত্রে তারা মূলত ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী নারী ও বয়স্কদের টার্গেট করতো এবং উপযুক্ত স্থানে মোটরসাইকেল দিয়ে অটোরিকশা আটকিয়ে অস্ত্র দিয়ে আঘাতসহ ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যেত তারা।
পুলিশ আরও জানায়, থানা রেকর্ড পর্যালোচনায় গ্রেফতারকৃত বেলাল আহমেদ ওরফে জাকির ওরফে জাকারিয়া মোল্লার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন ও ডাকাতির অভিযোগে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় ৭ টি মামলা, কামাল মিয়ার বিরুদ্ধে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির অভিযোগে ৪ টি মামলা, হোসেন ওরফে তৌফিক এর বিরুদ্ধে জেলার কুলাউড়া থানায় ২টি ডাকাতি মামলা এবং মোঃ বাবুল আহমেদ এর বিরুদ্ধে সিলেট মেট্রোর মোগলাবাজার থানায় ডাকাতি ও দস্যুতার আরও ২টি মামলা আছে বলে জানা যায়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোআর আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহসিন, শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিনয় ভূষন রায়সহ অনেকে।