গ্যাস লোড সঙ্কট : পাম্প মালিকদের ইউটার্ন, পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘটে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫:২৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের গ্যাস পাম্পগুলোতে ‘মাসের আগে লোড শেষ’ জনিত সঙ্কট ঘিরে অনেকটা অ্যাকশনে গিয়েছিল পাম্প মালিকদের সংগঠন। এতে সমর্থন ছিলো পরিবহন শ্রমিক সংগঠনেরও। কিন্তু শেষ সময়ে এসে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করে আন্দোলন থেকে ইউটার্ন নিয়েছেন পাম্প মালিকগণ। তবে গ্যাস লোড স্বাভাবিক রাখাসহ ৫ দফা দাবীতে আজ বুধবার ভোর ৬টা থেকে সিলেট জেলায় সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিবহন শ্রমিক সংগঠন।
মাস শেষ হওয়ার আগে লোড শেষ, অতঃপর পাম্প বন্ধ। এটি সিলেটের সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোর প্রতি মাসের চিত্র। ফলে মাসের ১৮ তারিখ থেকে বন্ধ হতে শুরু করে পাম্প। ২২ তারিখে গিয়ে বন্ধ হয়ে যায় সিলেটের অধিকাংশ সিএনজি পাম্প। এমন পরিস্থিতিতে যে দুয়েকটি পাম্প চালু থাকে সেগুলাতে তৈরী হয় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। গ্যাস নিতে সীমাহিন ভোগান্তিতে পড়তে হয় চালক ও গ্রাহকদের।গত কয়েক বছর ধরে এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি চালাচালিতেও হয়নি সমাধান। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানের দাবীতে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন সিলেটের পাম্প মালিকগণ। তাদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেন পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সংগঠনও। পৃথকভাবে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দেয়া হয়।
মঙ্গলবার সকালে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের সাথে জরুরী বৈঠকে বসেন পাম্প মালিকদের সংগঠন সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার এসোসিয়েশন। উক্ত বৈঠকে মঙ্গলবার রাত থেকেই বন্ধ থাকা পাম্পগুলো খুলে দেয়ার নির্দেশ দেন জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। একই সাথে লোড বাড়ানোর বিষয়ে উর্ধ্বতন মহলের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে গ্যাস কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়। ফলে আপাতত আন্দোলন থেকে সরে গেছেন পাম্প মালিকগণ।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি আমিরুজ্জামান চৌধুরী মঙ্গলবার রাতে দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, মাসের আগে লোড শেষ সমস্যার কারণে আমাদের পাম্প ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। মাসের অর্ধেক সময় যেতে না যেতেই অধিকাংশ পাম্প বন্ধ হয়ে যায়। ফলে খোলা থাকা পাম্পগুলোতে বাড়ে যানবাহনের লাইন। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে গ্যাস লোড করতে গিয়ে সীমাহিন দুর্ভোগে পড়েন চালক ও যাত্রী সাধারণ। তাই আমরা বাধ্য হয়ে এবার কঠোর কর্মসূচীর হুশিয়ারী দিয়েছিলাম। মঙ্গলবার সকালে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে বৈঠকের আহ্বান জানালে আমরা উপস্থিত হয়ে বৈঠকে মিলিত হই। কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার থেকেই বন্ধ থাকা পাম্পগুলো খুলে দেয়ার নির্দেশ দেন। একই সাথে লোড বৃদ্ধির ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিবেন বলে জানান। তাই আমরা আপাতত আন্দোলনের দিকে যাচ্ছিনা। দেখি আগামীতে কি সমাধান আসে। পরবর্তী মাসের পরিস্থিতি দেখে আমরা কর্মসূচীর সিদ্ধান্ত নিবো।
এদিকে সাময়িক আশ^াসে পাম্প মালিকগণ আন্দোলন থেকে ইউটার্ন নিলেও গ্যাস লোড সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবীতে ধর্মঘট কর্মসূচীতে অনড় ৬টি পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত গঠিত সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। তারা বিকেলে পৃথকভাবে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠকে বসেন। কর্তৃপক্ষ আপাতত বন্ধ পাম্প খুলে দেয়ার আশ^াস দেন। কিন্তু পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সাময়িক নয়, গ্যাস লোড সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবীতে অনড় থাকায় কোন ধরনের আপোষ ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। একই সাথে বুধবার ভোর ৬টা থেকে সিলেট জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ( পরিবহন শ্রমিক কর্মবিরতি) পালনের জন্য সর্বস্তরের শ্রমিকদের নির্দেশ দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি, সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সিলেট বিভাগীয় সভাপতি ময়নুল ইসলাম মঙ্গলবার রাতে দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আমরা পাম্পে গ্যাসের লোড স্বাভাবিক রাখাসহ ৫ দফা দাবীতে বুধবার থেকে সিলেট জেলায় সর্বাত্মক পরিবহন শ্রমিক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছি। একই দাবিতে আমরা স্মারকলিপি প্রদানের পাশাপাশি পৃথক স্থানে মানববন্ধন করেছি। সর্বশেষ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের সাথে আমরা বৈঠকে বসি। সেখানে কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকা পাম্পগুলো খুলে দেয়ার কথা বলেন। কিন্তু স্থায়ী সমাধান নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন নি। তাই আমরা বুধবার ভোর থেকে সিলেট জেলায় সর্বাত্মক পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, তেল-গ্যাসে ভরপুর সিলেট। আর সেই সিলেটবাসীকেই বঞ্চিত করা হচ্ছে এ সম্পদ থেকে। এটা সিলেটবিদ্বেষমূলক ও গভীর ষড়যন্ত্র। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান ও বিভিন্ন সময় গাড়ি পুড়ানো মামলায় শ্রমিকদের জড়িয়ে হয়রানি করাসহ ৫ দাবিতে বুধবার ভোর থেকে সিলেট জেলায় পরিবহন শ্রমিকরা অনিদিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন শুরু করবেন। দাবী মানা না হলে পরবর্তীকে প্রয়োজনে পুরো বিভাগ অচল করে দেওয়া হবে।