যানজটের প্রভাব ‘ভাড়া’য়
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫:৪১ অপরাহ্ন
সিএনজি অটোরিক্সার পোয়াবারো
স্টাফ রিপোর্টার: ওসমানী মেডিকেল থেকে বন্দরবাজারের সিএনজি অটোরিক্সার ভাড়া জনপ্রতি ১৫ টাকা। লামাবাজারে যানজট তাই চালক কাজিরবাজার ব্রিজ ঘুরে যাবে অতপর ভাড়া গুণতে হবে জনপ্রতি ২০ টাকা। অন্যথায় যাত্রীকে বেছে নিতে হবে রিক্সা। তাও এইটুকু যেতে রিক্সাওয়ালার দাবী ৫০ টাকা। অজুহাত একটাই যানজট।বন্দরবাজার থেকে দক্ষিণ সুরমা হুমায়ুন রশীদ চত্তর পর্যন্ত সিএনজি অটোরিক্সার ভাড়া জনপ্রতি ১৫ টাকা। সোবহানীঘাট থেকে মেন্দিবাগ পর্যন্ত যানজট তাই কাজিরবাজার ব্রিজ ঘুরে যেতে হবে তাই জনপ্রতি ভাড়া গুণতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এর বাইরে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও মিলবেনা যানবাহন। অত:পর বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ তিন গুণ ভাড়া গুণতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণকে।
এমন চিত্র শুধু ওসমানী মেডিকেল-বন্দরবাজার, বন্দরবাজার-হুমায়ুন রশিদ চত্ত্বর রুটে নয়, গোটা নগরীর প্রায় সকল রুটের। একসাথে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ একাধিক পয়েন্টে উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান থাকায় সৃষ্ট যানজটকে পুঁজি করে যাত্রীদের পকেট কাটছে সিএনজি অটোরিক্সা চালকরা। সেই সুযোগ নিচ্ছেন রিক্সাচালকরাও। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবি থেকে শুরু করে অল্প আয়ের সাধারণ মানুষ।
কোন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ভাড়া নিয়ে রিক্সা-সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন জনসাধারণ। অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে চালক-যাত্রীদের বাক-বিতন্ডা নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার। ঐক্যবদ্ধ চালকদের কাছে অনেক সময় নাজেহাল হতে হচ্ছে যাত্রীদের।বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর মধুবন মার্কেট পয়েন্ট, কোর্ট পয়েন্ট, সিটি পয়েন্ট, আম্বরখানা পয়েন্ট, রিকাবীবাজার পয়েন্ট, ওসমানী মেডিকেল পয়েন্ট, হুমায়ুন রশিদ চত্তরে যাত্রীদের ভীড়। কারণ জিজ্ঞেস করলে যাত্রীরা জানান, শহরে যানজট তাই সিএনজি চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া দাবী করছেন। বাধ্য হয়ে কেউ রিজার্ভ ও কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে ছুটছেন।
গত এক মাস থেকে নগরজুড়ে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। জরুরী প্রয়োজনে এমনকি রোগী বহনকারী এ্যাম্বুলেন্স সময়মত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেনা। হটাৎ করে সিলেট শহরে এমন যানজট দেখে হতবাক নগরীর সাধারণ মানুষ।নগরীর প্রধান কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সিটি কর্পোরেশন ও সড়ক বিভাগের আওতাধীন রাস্তার সংস্কার কাজ এক সাথে শুরু হওয়া যানজট সৃষ্টির প্রধান কারন বলে অনেকে মনে করছেন। নগরের প্রবেশপথ মেন্দিবাগ পয়েন্ট, নাইওরপুল, আম্বরখানা, দরগাহ গেইট এলাকায় একি সাথে রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় যানচলাচলের জন্য রাস্তা সংকুচিত করা হয়। যার কারণে শহরের এই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলোতে স্বাভাবিক যানচলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের।
নগরীর ঐতিহ্যবাহী ক্বীন ব্রীজ সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার পর যানচলাচল বন্ধ করায় শাহজালাল ব্রিজ দিয়ে অধিকাংশ মানুষ শহরে প্রবেশ করছে কিন্তু শাহজালাল ব্রীজ এর সম্মুখে মেন্দিবাগ পয়েন্টে রাস্তার সংস্কার কাজ চলমান থাকায় মেন্দিবাগ পয়েন্ট থেকে শাহজালাল ব্রীজ অতিক্রম করে হুমায়ুন রশীদ চত্তর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। নাইওরপুল পয়েন্ট থেকে সোবহানীঘাট পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য বন্ধ রয়েছে বিকল্প রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ধোপাদিঘীরপারের রাস্তা। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে নগরের এরকম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজ এক সাথে শুরু না করে পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনেকটাই কম হতো বলে মনে করেন নগরীর সাধারণ মানুষ।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম এলাকা বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানায় রাস্তার অধিকাংশ অংশই হকারদের দখলে রয়েছে। হকারদের দখলে থাকা এসকল এলাকায় দিন বাড়ার সাথে সাথেই সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। দুপুর ১২ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত সৃষ্ট এই যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষের।
গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে গাড়ীর স্ট্যান্ড ও যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং রেজিষ্ট্রেশন বিহীন সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও রিকশার চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরীর প্রায় প্রত্যেকটি রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে মেন্দিবাগ পয়েন্ট, সোবহানীঘাট পয়েন্ট, ধোপাদিঘীপার, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, লামাবাজার, সুবিদবাজার, জেলরোড, নাইওরপুল, মিরাবাজার, শিবগঞ্জ, টিলাগড় ও মেজরটিলা এলাকায় তীব্র যানজটে অসহায় নগরবাসী।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় কথা হয় গোলাপগঞ্জের প্রবীণ মুরব্বী আসরব আলীর সাথে। তিনি মসজিদের একটি ডিজিটাল ঘড়ি মেরামতের জন্য নগরীতে এসেছিলেন। বন্দরবাজার মধুবন পয়েন্ট থেকে যেতে চান দক্ষিণ সুরমার বাঁেধ (শাহজালাল ব্রিজের শেষ মাথায়)। এইটুকু দুরত্বে যেতে ভাড়া সাধারণত ১৫ টাকা। কিন্তু যানজটের কারণে বন্দরবাজারের সিএনজি কাজিরবাজার ব্রিজ হয়ে যাবে তাই বাধ্য হয়ে ৩০ টাকা যেতে রাজী হন।
তিনি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, যখন যানজট কম থাকে তখন তো চালকেরা কম ভাড়া রাখেনা। যানজট বাড়লে তাদের চলাচলের সুবিধার্থে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যাবে এজন্য আমাদেরকে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হবে কেন? তাদের নিয়ন্ত্রণ করার যেনো কেউ নেই। এভাবে কোন নগরী চলতে পারেনা। সিটি কর্পোরেশন, বিআরটিএ সহ যে কোন কর্তৃপক্ষকে একটি কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বিকেল ৫টার দিকে নগরীর ওসমানী মেডিকেল থেকে বন্দরবাজারে আসতে কথা হয় যাত্রী গোলাম রব্বানী’র সাথে। তিনি জানান, আমি জরুরী কাজে বন্দরবাজার যাবো। লামাবাজার পয়েন্টে নাকি যানজট, তাই আমাদেরকে ১৫ টাকার পরিবর্তে জনপ্রতি ২০ টাকা দিয়ে আসতে হয়েছে। এভাবে আমরা প্রতিদিনই সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের হাতে নাজেহাল হচ্ছি। সাথে গুণছি অতিরিক্ত ভাড়া। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চান তিনি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের চীফ ইঞ্জিনিয়ার নুর আজিজুর রহমান দৈনিক জালালাবাদকে জানান, আগামী বর্ষার মৌসুকে সামনে রেখে আমাদের চারটি জায়গায় ড্রেনের ক্রস কানেকশন এর কাজ চলছে ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন হবে। একসাথে কাজ শুরু করায় সাধারণ মানুষের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করে বলেন ভবিষ্যতে এটাকে মাথায় রেখে কাজের পরিকল্পনা করা হবে।