করের বোঝা না বাড়িয়ে আওতা বাড়ানো হচ্ছে : এনবিআর চেয়ারম্যান
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ মার্চ ২০২৪, ৮:৪৯:০৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: চলতি বছরের জুন পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ৪০ লক্ষে উন্নীত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে কর দিতে হবে। নিয়মিত করদাতাদের উপর করের বোঝা না বাড়িয়ে করের আওতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
তিনি শনিবার নগরীর একটি হোটেলে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সামনে রেখে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। চেম্বার সভাপতি তাহমিন আহমদের সভাপতিত্বে এবং কর অঞ্চল-সিলেট এর উপ কর কমিশনার মো. সালেকুল ইসলাম ও সিলেট চেম্বারের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মিনতি দেবীর সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য গ্রেড-১ (কাস্টম্স নীতি) মো. মাসুদ সাদিক ও সদস্য (কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম।
এসময় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করের টাকা দিয়ে সরকার দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা সহ আপামর জনতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। করের টাকায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা সহ প্রায় ২৯ রকমের ভাতা জনগণকে প্রদান করা হচ্ছে। ধনী দেশগুলোর কাছে হাত পেতে এখন আমাদেরকে চলতে হয় না। তিনি করদাতাগণকে এরকম আত্মতৃপ্তি নিয়ে কর প্রদানে এগিয়ে আসার আহবান জানান। এনবিআর চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমাদের সারা দেশের কথা বিবেচনা করে বাজেট প্রণয়ন করতে হয়। যাতে এক খাতকে সুযোগ দিতে গিয়ে অন্য খাত ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। আমরা হুট করে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট বা ট্যাক্সের হার কমাতে পারি না। এতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না। তিনি সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে বাজেট প্রস্তাবনা পুস্তক আকারে সরবরাহ করায় ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাজেটে চেম্বার সমূহের প্রস্তাব অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। আগামী বাজেটেও সিলেট চেম্বারের যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাবসমূহ বিবেচনা করা হবে বলে তিনি আশ্বস্থ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য গ্রেড-১ (কাস্টম্স নীতি) মো. মাসুদ সাদিক বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে উত্তরণের দ্বারপ্রান্তে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হয়ে গেলে বাংলাদেশ বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। অনেকগুলো দেশ থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাবে এবং আমাদের থেকে তুলনামূলক অনুন্নত দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করতে হবে। এসব বিষয় বিবেচনা করে আগামীতে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম প্রাক-বাজেট আলোচনা সভাটি আয়োজনের জন্য সিলেট চেম্বারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সিলেট চেম্বার ও সিলেটের ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনার আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, আমরা করের পরিধি বৃদ্ধির মাধ্যমে করদাতাদের উপর বোঝা লাঘব করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে ব্যক্তি করদাতার সর্বোচ্চ করের হার ৩০% থেকে ২৫% করা হয়েছে এবং কর্পোরেট ট্যাক্স হ্রাস করা হয়েছে। আগামীতেও ব্যবসায়ী ও করদাতাদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে কর নীতি প্রণয়ন করা হবে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি ও এফবিসিসিআই এর পরিচালক ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ। সভায় জাতীয় বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য গ্রেড-১ (কাস্টম্স নীতি) মো. মাসুদ সাদিক, প্রথম সচিব মোহাম্মদ হাসমত আলী ও দ্বিতীয় সচিব বাপন চন্দ্র দাস।
সমাপনী বক্তব্যে চেম্বার সভাপতি তাদের প্রস্তাবনাসমূহ যথাযথভাবে বিবেচনার জন্য এনবিআর চেয়ারম্যান ও সরকারকে অনুরোধ জানান এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট চেম্বারের পরিচালক এবং ভ্যাট, বাজেট, কর সাব কমিটির ডাইরেক্টর ইনচার্জ আবু তাহের মো. শোয়েব, নবনির্বাচিত সিনিয়র সহ সভাপতি মো. এমদাদ হোসেন, পরিচালক মুজিবুর রহমান মিন্টু, আলীমুল এহছান চৌধুরী, মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক রাজীব ভৌমিক, সিলেট জেলা কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, কর আইনজীবী মোঃ মাজাহারুল হক, মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন এফসিএ, এডভোকেট মোঃ আবুল ফজল, সিলেট চেম্বারের সদস্য মোঃ আবুল কালাম, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, এস এম শায়েস্তা তালুকদার, কর আইনজীবী আব্দুল আলীম পাঠান, হাসনু চৌধুরী প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন কর কমিশনার সৈয়দ জাকির হোসেন, কাস্টম্স এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সিলেট এর কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) মুহাম্মদ রাশেদুল আলম, এনবিআর এর প্রথম সচিব ও প্রধান বাজেট সমন্বয়ক এস. এম. সোহেল রহমান, সিলেট চেম্বারের নবনির্বাচিত সহ সভাপতি এহতেশামুল হক চৌধুরী, পরিচালক ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী (রাজিব), দেবাংশু দাস, কাজী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, মোঃ সারোয়ার হোসেন ছেদু, মোঃ মাহবুবুল হাফিজ চৌধুরী (মুসফিক), শান্ত দেব, মোঃ রিমাদ আহমদ রুবেল, মোঃ মাহদী সালেহীন, আরিফ হোসেন, সাবেক পরিচালক মোঃ আব্দুর রহমান, সদস্য আব্দুল মালিক মারুফ, সিলেট চেম্বারের সচিব মোঃ গোলাম আক্তার ফারুক। এছাড়াও অনুষ্ঠানে কাস্টম্স ও কর বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ, সিলেটের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সিলেট চেম্বারের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।