ভোটার বেড়েছে, ভোট কমেছে
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ মার্চ ২০২৪, ৯:২৮:২৬ অপরাহ্ন
ইসির চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ, ভোটার বেড়েছে ২.২৬ শতাংশ
জালালাবাদ রিপোর্ট: দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদ নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তালিকা অনুযায়ী দেশে বর্তমানে মোট ভোটার ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭ জন। নারী ভোটার ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৪ হাজার ৬৪১ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৯৩২ জন। শনিবার এ তালিকা প্রকাশ করে ইসি। ভোটার তালিকা হালনাগাদে ২ দশমিক ২৬ শতাংশ ভোটার বেড়েছে। গত বছর ২ মার্চ দেশে মোট ভোটার ছিল ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন।
এর আগে এ বছর ২১ জানুয়ারি ২০২৩ সালের হালনাগাদ করা খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে ইসি। সেই সময় হালনাগাদে যুক্ত হয়েছিল ২০ লাখ ৮৬ হাজার ভোটার যুক্ত হয়েছিল। ওই তালিকার পর দাবি আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি শেষে ২ মার্চ ভোটার দিবসে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করে ইসি।
ভোটার বাড়ছে, ভোট কমছে :
২০০১ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখের কিছু বেশি। ওই বছর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৭ কোটি ৪৯ লাখের কিছু বেশি। অর্থাৎ তখন ভোটার ছিল মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ। ওই নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৭৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
অন্যদিকে এখন দেশে জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। এর মধ্যে ভোটার প্রায় ১২ কোটি বা মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ ভোটার। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন ৪১ দশমিক ৮০ শতাংশ ভোটার। অর্থাৎ ৫৮ শতাংশ ভোটারকে ভোটকেন্দ্রবিমূখ।
১৫ বছরে ভোটের চিত্র:
একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ, ২০১৪ সালের দশম ও চলতি বছরের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাদে অন্য সব জাতীয় নির্বাচনে ৫১ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছিল। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৫৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ, সপ্তম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬ সালের জুনে) প্রায় ৭৫ শতাংশ, অষ্টম সংসদ নির্বাচনে (২০০১ সালের) ৭৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং নবম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮ সালের ডিসেম্বরে) দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৮৭ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পড়ে।
২০০৮ ও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৬৮ শতাংশের কিছু বেশি। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৭৫ থেকে ৮২ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে গিয়েছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগের আমলে ২০১৩ সালে গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৬২ থেকে ৭৬ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন।
মূলত ২০১৪ সালে বিএনপির বর্জনে একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কমতে শুরু করে। ওই নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা। সে নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৪০ শতাংশ।
দশম সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়েছিল ছয়টি ধাপে। এখানে ভোট পড়ার হার ছিল ৫৯ থেকে প্রায় ৬৪ শতাংশ পর্যন্ত। তবে ওই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠে। এরপর স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে আবারও ভোটার উপস্থিতি কমতে শুরু করে। ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভোট দিয়েছিলেন ৪৮ শতাংশ ভোটার।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫৫ থেকে ৭৮ শতাংশ ভোট পড়েছিল। তবে সে নির্বাচনগুলো নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক ছিল। এই নির্বাচনগুলোতে পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর ইসির কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ওই পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে তখনকার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তাঁর বইয়ে (নির্বাচননামা: নির্বাচন কমিশনে আমার দিনগুলো) লিখেছেন, ‘সামগ্রিক পর্যালোচনায় আমার কাছে মনে হয়েছে, নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাত থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তরিত হয়ে গেছে।’
এরপর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সব কটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া হিসাবে ওই নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ৮০ শতাংশ। তবে ওই নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক আছে। বিএনপির অভিযোগ, নির্বাচনের আগের রাতে বিভিন্ন জায়গায় ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা হয়। সব জাতীয় নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশন ফলাফল নিয়ে বই আকারে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।
ওই নির্বাচনের পর থেকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতেও আবার ভোটারদের অনীহা দেখা যায়। বিএনপিও স্থানীয় সরকারের বেশির ভাগ নির্বাচন বর্জন করে। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৩৬ থেকে ৪৩ শতাংশ।
২০২০ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ভোট দিতে গিয়েছিলেন মাত্র ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ ভোটার। আর দক্ষিণে ভোট দিয়েছিলেন ২৯ শতাংশ ভোটার। আর গত বছর অনুষ্ঠিত গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আগের বারের তুলনায় ভোটার উপস্থিতি আরও কমে আসে। এই পাঁচ সিটির মধ্যে সর্বনিম্ন ৪৬ দশমিক ৭১ শতাংশ ভোট পড়েছিল সিলেটে, সর্বোচ্চ ৫৮ শতাংশ ভোট পড়েছিল গাজীপুরে।
সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো ছিল ক্ষমতাসীনদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এ জন্য আওয়ামী লীগের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৫৮ শতাংশ ভোটারকে ভোটকেন্দ্রমুখী করা যায়নি।