বড়লেখা থেকে ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা গোয়াইনঘাটে উদ্ধার, ৪ ছিনতাইকারি গ্রেফতার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মার্চ ২০২৪, ৬:৪৩:৩৫ অপরাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি: বড়লেখায় যাত্রী বেশে গাড়িতে উঠে চালককে মারধর ও পরে গাছের সাথে বেঁধে ছিনিয়ে নেওয়া সিএনজি চালিত অটোরিকশা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে বড়লেখা থানা পুলিশ। একই সাথে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এই ছিনতাই ঘটনার মুলহোতাসহ ৪ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার ও তাদের নিকট থেকে গাড়ি বিক্রির ২৪ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের চন্ডিনগর (বড়গুল) গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে ইমন আহমদ (১৮), নুরুল হকের ছেলে ইমরান আহমদ (১৯), আব্দুল মালিকের ছেলে এমরান আহমদ (২৪) এবং জিয়াদনগর (বিরাশী) গ্রামের ইছবর আলীর ছেলে জসীম উদ্দিন (২৮)। এই ঘটনায় অটোরিকশাটির মালিক উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের তেরাকুড়ি গ্রামের আব্দুস সহিদ থানায় মামলা করেছেন।
রোববার দুপুরে বড়লেখা থানা পুলিশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপংকর ঘোষ। এসময় বড়লেখা থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ফরিদ উদ্দিন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আতাউর রহমান, অভিযানে অংশ নেওয়া এসআই স্বপন দাস ও জাহেদ আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপংকর ঘোষ বলেন, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের মাধবগুল এলাকায় অজ্ঞাতনামা দু’জন যাত্রী অটোরিকশা চালক লিলু মিয়াকে সিগন্যাল দেয়। লিলু মিয়া গাড়ি দাঁড় করলে যাত্রীরা বড়লেখার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের রাতিরপুল এলাকায় যাবে বলে ৩০০ টাকা ভাড়া সাব্যস্ত করলে লিলু মিয়া তাদেরকে নিয়ে রাতিরপুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। গাড়িতে ওঠে এক যাত্রী মুঠোফোনে অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে বলে, ‘চাচা সিএনজি গাড়িতে উঠে গেছি। আপনি রাস্তায় থাকিয়েন।’ সন্ধ্যা অনুমানিক সাড়ে ছয়টার দিকে রাতিরপুল এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানে আব্দুল জব্বারের বাড়ি থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর যাত্রীরা লিলু মিয়াকে গাড়ি থামাতে বলে। গাড়ি থামিয়ে চালক দেখতে পান ২৫ ও ৩০ বছর বয়সী দু’জন অপরিচিত লোক দৌঁড়ে আসছে। তখন চালকের সন্দেহ হলে তিনি দ্রুত গাড়ি ঘোরানোর চেষ্টা করলে তা বন্ধ হয়ে যায়। এসময় গাড়িতে থাকা দু’জন এবং ঘটনাস্থলে আসা অপরিচিত অপর দু’জনসহ চারজন লিলু মিয়াকে ঘিরে মারধর করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। তখন তাদের মধ্যে দু’জন অটোরিকশাটি নিয়ে চলে যায় এবং অপর দু’জন লিলু মিয়াকে পাহাড়ি টিলায় নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করলে লিলু কান্নাকাটি করেন। পরে অভিযুক্তরা তাকে মারধর করে হাত-পা বেঁধে তার কাছ থাকা নগদ ২৮’শ টাকা এবং ১৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। প্রায় ঘন্টাখানেক চেষ্টার পর লিলু নিজেই নিজের হাতের বাঁধন খুলে টিলা থেকে নেমে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে তিনি বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় ঘটনাটি তদন্তে নামে পুলিশ। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আতাউর রহমানের নেতৃত্বে এসআই জাহেদ আহমদ ও এএসআই আবু তালেবসহ পুলিশের একটি চৌকস দল ১ মার্চ চন্ডিনগরে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী ইমন আহমদ ও ইমরান আহমদকে গ্রেফতার করেন। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে ছিনতাইকারী এমরান আহমদ ও জসিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। ২ মার্চ শনিবার সিলেটের গোয়াইনঘাট সালুটিকর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা (মৌলভীবাজার থ-১২-৮৩৫০) উদ্ধার এবং তাদের কাছ থেকে অটোরিকশা বিক্রির ২৪ হাজার টাকাসহ আরও ৭’শ টাকা উদ্ধার করা হয়।
বড়লেখা থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী বলেন, আসামীদের রোববার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভিকটিমের মুঠোফোন উদ্ধারের চেষ্টাসহ ছিনতাই চক্রে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। ছিনতাই ঘটনায় আরো কোন চক্রের সম্পৃক্ততা রয়েছে কি-না তথ্য উদঘাটনের জন্য আসামিদের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।