চট্টগ্রামে আগুনের অজুহাত ফের অস্থির চিনির বাজার!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মার্চ ২০২৪, ৯:০৬:০৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : এস আলম গ্রুপের চিনির রিফাইনারিতে আগুনের ঘটনার পর অস্থির হতে শুরু করেছে চিনির বাজার। ২ দিনের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম আরেক দফায় বেড়েছে। চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি চিনির দাম বেড়েছে ৫০-১০০ টাকা। এতে সিলেট নগরীর খুচরা বাজারগুলোয় পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ২-৩ টাকা। যদিও বাজারে চিনি সরবরাহে তেমন সংকট নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে হঠাৎ এমন দাম বৃদ্ধিতে দায়ী করা হচ্ছে অসাধু সিন্ডিকেটকে।
বুধবার চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এস আলম গ্রুপের প্রতি মণ চিনি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৯৮০ থেকে ৫ হাজার ৩০ টাকায়। এক দিন আগে এর দাম ছিল ৪ হাজার ৯৩০ টাকা। অন্যদিকে সাপ্লাই অর্ডার (এসও) পর্যায়ে মণপ্রতি চিনির দাম এক দিনের ব্যবধানে ৮৫-৯০ টাকা বেড়ে ৫ হাজার টাকায় লেনদেন হতে দেখা গেছে। অন্যান্য ব্র্যান্ডের চিনির দামও মণপ্রতি ৫০-৮০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আসন্ন পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে চিনির দাম আরও বাড়তে পারে এমন গুজবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বাড়তি দাম হাঁকানোর পাশাপাশি চিনি বিক্রি করছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, আগুনের ঘটনার পর থেকেই চিনির এসও ব্যবসায়ীরা লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে পণ্যটির দাম মণে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে।
একইভাবে চিনির খুচরা বাজারেও পণ্যটির দাম কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। সোমবার প্রতি কেজি চিনি ১৪২ টাকা বিক্রি হলেও, মঙ্গলবার সেটি ১৪৫-১৪৬ টাকায় বিক্রি হয়। বুধবার বিক্রি হচ্ছে ১৪৮-১৫০ টাকা কেজি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন,অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। তারা কোনো একটি অজুহাত পেলেই দাম বাড়িয়ে দিতেন। এখন তারা সুযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার করেছেন অর্থাৎ দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ গুদামে যেসব চিনি ছিল সেগুলো অপরিশোধিত। এগুলো বাজারে আসতে আরও সময় লাগত। কিন্তু দিন দিন দাম বেড়ে যাওয়া একেবারেই অযৌক্তিক।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, রমজানকে সামনে রেখে গত দুই মাসে চিনির আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ বেড়েছে। এ দুই মাসে চিনি আমদানি হয়েছে ৪ দশমিক ৭৪ লাখ টন; যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ২৭ লাখ টন। গত দুই মাসে আমদানি হওয়া ৪ দশমিক ৭৪ লাখ টন চিনির মধ্যে এস আলম গ্রুপ আমদানি করেছে ১ দশমিক ১২ লাখ টন। এ ছাড়া সিটি গ্রুপ ১ দশমিক ৬১ লাখ টন, মেঘনা গ্রুপ ১ দশমিক ৫৬ লাখ টন, আবদুল মোনেম গ্রুপ ২১ হাজার ৫০০ টন এবং দেশবন্ধু গ্রুপ আমদানি করেছে ২০ হাজার ৫৯৫ টন।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে পুড়ে যাওয়া গোডাউন দেখতে এসে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, আগুনে গুদামের ক্ষয়ক্ষতি হলেও কারখানার কোনো ক্ষতি হয়নি। ফলে দু-এক দিনের মধ্যে উৎপাদন শুরু করা যাবে।
তিনি বলেন, এখনও পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। রমজানের চাহিদা মেটানোর মতো চিনি মজুত আছে। দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে কী পরিমাণ মজুত আছে এবং ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
বুধবার নগরীর কয়েকটি দোকান ঘুরে বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগুনের অজুহাতে পাইকারী বাজারে বস্তাপ্রতি চিনির দাম ১০০-১৫০ টাকা বেড়েছে। তার সাথে যোগ হচ্ছে পরিবহন খরচ। সবমিলিয়ে পাইকারী বাজারে চিনির কেজি ১৪৫-১৪৮ টাকা পড়েছে। খুচরা বাজারে চিনির কেজি ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কিছুদিন আগে সরকার চিনির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে আবার প্রত্যাহার করেছে। এরপরও চিনির দাম এক দফা বেড়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে একটি গুদামে আগুণ লাগার অজুহাতে আরেকদফায় বেড়েছে চিনির দাম। এভাবে চলতে থাকলে প্রান্তিক জনগোষ্টীকে চিনি খাওয়া বাদ দিতে হবে।