অগ্নিদুর্ঘটনার জন্য ১০ প্রতিষ্ঠান দায়ী- বিশেষজ্ঞদের মত
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মার্চ ২০২৪, ৯:৩৩:৪১ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : দেশে ৯ বছরে ১ লাখ ৯০ হাজার ১৬৭টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছে ১ হাজার ৫১ জন। আর আহত হয়েছে ৩ হাজার ৬০৬ জন। অগ্নিদুর্ঘটনার এমন ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। এর জন্য ১০টি সংস্থাকে দায়ী করেছেন তিনি।তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এবং ভবনমালিককে ‘অবহেলাজনিত হত্যাকা-ের’ আসামি হিসেবে গণ্য করে আইনের আওতায় আনা হোক।
রাজধানী জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া চৌধুরী হলে মঙ্গলবার ‘ভবন বিপজ্জনকতায় আচ্ছন্ন নগরী : প্রেক্ষিতে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এবং বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলা)।
মূল প্রবন্ধে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে নগরায়নের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)-১১ অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাত সহনশীল এবং টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তোলার কথা বলেছে। কিন্তু এখনো আমরা একটি নিরাপদ এবং অভিঘাত সহনশীল নগরী গড়ে তুলতে পারিনি।’
তিনি বলেন, নগরে সংঘটিত অগ্নিদুর্যোগ আজ বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে। একটি রেস্তোরাঁ স্থাপনে ১০টি সংস্থার প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনাপত্তিপত্র, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেস্তোরাঁ লাইসেন্স, সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের লাইসেন্স নিবন্ধন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দোকান লাইসেন্স, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ই-ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ফায়ার লাইসেন্স, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্র।
এই স্থপতি বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এ ধরনের অগ্নিকা-ের মূল কারণ হচ্ছে অননুমোদিত অবৈধ ভবন, অবৈধ ভূমি ব্যবহার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার তদারকির অভাব। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২২ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮-এ ‘অগ্নিনিরাপত্তা’ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আলোকপাত করা হয়েছে এবং সব বৃহদায়তন প্রকল্পের জন্য তা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তথাপি, অধিকাংশক্ষেত্রেই অনুমোদিত ব্যবহার পরিবর্তন অথবা সম্প্রসারণের মাধ্যমে রেস্তোরাঁয় রূপান্তরিত করা হচ্ছে অথবা ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করার কার্যক্রমে লিপ্ত হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, এ ধরনের প্রতিটি অগ্নিদুর্ঘটনায় হতাহতের পেছনে রয়েছে মুনাফাখোরদের অতি লোভ। তারা যেন কোটিপতি হওয়ার দৌড়ে নেমেছে। এতে কে মরল, তা যেন তাদের দেখার বিষয় নয়। তিনি সবাইকে সম্মিলিতভাবে এই মৃত্যুপথ থেকে উত্তরণে কাজ করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। নিরাপত্তার জন্য ডিজিটাল ডেটাবেইস তৈরি করে ভবনের সুবিধা-অসুবিধাগুলো রেটিং করা ও হটলাইন সেবা দ্রুত চালু করতে হবে।
বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আগে দেশের সরকারকে সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য দিতে শিখতে হবে। তিনি এ ধরনের নিষ্ঠুর দৃষ্টির প্রত্যক্ষ যেন আর প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে না হয়, সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন।
পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সরকারের সংস্থ্যাগুলোর অবহেলার কারণে দেশের সাধারণ জনগণকে পুড়ে মরতে হচ্ছে। অবহেলাজনিত ও কাঠামোগত হত্যাকান্ড ঘটানো হচ্ছে। আর এর দায়ে আটক করা হচ্ছে খেটে খাওয়া কর্মচারীদের; যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি কর্মচারীদের মুক্তি দিয়ে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবি করেন।
ক্যাপসের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, দিনের পর দিন আগুনে এতগুলো মানুষকে বার-বি-কিউ করে মারা হচ্ছে, অথচ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো উদাসীন। এই ভবনে ছিল না কোনো ফায়ার অ্যালার্ম; যার জন্য আগুন লাগার পরেও অনেকে বুঝতেই পারেনি। তিনি ঢাকার সব ভবন জরিপ করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সাইনবোর্ড লাগানোর দাবি জানান।