সিলেটে উজ্জ্বল বাংলাদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মার্চ ২০২৪, ৯:৫৪:৫৮ অপরাহ্ন
শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে সিরিজে সমতা
স্পোর্টস রিপোর্টার : প্রথম ম্যাচে গ্যালারী ছিলো ফাঁকা, ফ্যাকাশে। অথচ হেরে গেলেও মাঠে উজ্জল ছিলো বাংলাদেশ। তাই কাল দ্বিতীয় ম্যাচে দর্শকে পূর্ণ হয়ে যেন প্রাণ ফিরলো সিলেটের মাঠে।এমন প্রাণ ফেরানো দিনে সিলেটে হাসলো বাংলাদেশও। শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে ফিরলো শান্তর দল। শুধু সুরিজে ফেরা নয়, নির্ভূল হাফ সেঞ্চুরী হাঁকিয়ে শান্তও ফিরলেন চেনা রূপে।
দাসুন শানাকার বলে লং অনে দুর্দান্ত এক ছক্কা হাঁকালেন নাজমুল হাসান শান্ত। ক্যাপ্টেন্স নক যাকে বলে। ছয়ের সঙ্গেই এলো জয়, শান্ত ছুঁয়েছেন ফিফটি। তাতে সিরিজে ফিরলো সমতা। শ্রীলঙ্কাক উড়িয়ে দিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ এখন ১-১।
সবুজঘেরা সিলেট বাংলার বুকে একখ- নৈসর্গ। বসন্তের হিমেল হাওয়া যেন দোল খেয়ে যায় সবুজ পত্রপল্লব। এমন নৈসর্গিক সন্ধ্যায় আরও একটু দোলা দিয়ে গেল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে তীরে এসে তরী ডুবলেও এবার শুরু থেকেই শক্ত হাতে হাল ধরেছেন ব্যাটাররা। ডুবন্ত তরী থেকে উড়ন্ত জয়ে সমতা বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ১৬৫ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ১৮.১ ওভারে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করে ১৭০ রান, নোঙর ফেলে জয়ের বন্দরে।
লক্ষ্যটা ১৬৬ রানের। সিরিজ বাঁচানোর লক্ষ্যে এই রান তাড়া করতে নেমে দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ। দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকার মিলে ওপেনিং জুটিতেই বাংলাদেশকে এনে দেন ৬৮ রান। সপ্তম ওভারে সৌম্যের বিদায়ে এই জুটি ভাঙলেও কক্ষপথেই থাকে বাংলাদেশ। সাজঘরে ফেরার আগে সৌম্য করেন ২২ বলে ২৬ রান। সৌম্যের পর বিদায় নেন লিটনও। ২৪ বলে ৩৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
জয়ের যে ভিত গড়ে দিয়ে যান দুই ওপেনার, তাতে ভর দিয়ে বাকি পথ পাড়ি দেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৮৭ রানের জুটিতে বাংলাদেশ হেসেখেলেই হারোয় লঙ্কানদের। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিনায়ক শান্ত। ঝলমলে অর্ধশতক উপহার দেন তিনি। ৩৮ বলে চারটি চার ও দুটি ছক্কার মারে ৫৩ রানে অপররাজিত থাকেন শান্ত। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন হৃদয়। ২৫ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি।
এর আগে টস জিতে এদিনও আগে বোলিং নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে ঠিক প্রমাণ করেন শরিফুল ইসলাম। প্রথম ওভারেই নেন মেডেন। দ্বিতীয় ওভারে ব্রেক থ্রু এনে দেন তাসকিন আহমেদ। স্কোরবোর্ডে এক রান তুলতেই উইকেট হারায় লঙ্কানরা। নিজের বলে আভিস্কা ফার্নান্দোকে ফিরতি ক্যাচ বানিয়ে মাঠছাড়া করেন ডানহাতি পেসার। রানের খাতা খুলতে পারেননি লঙ্কান ওপেনার।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে কুশল মেন্ডিস ও কামিন্দু মেন্ডিস মিলে ৬৬ রান তোলেন। প্রথম তিন ওভারে স্রেফ আট রানের পরের তিন ওভারে দুজন নেন ৪১ রান। সেই জুটি ভেঙে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি ফেরান সৌম্য সরকার। ২২ বলে ৩৬ রান করে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা কুশলকে আউট করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান এই অলরাউন্ডার। পরের ওভারে আঘাত হানেন রিশাদ হোসেন। ক্রিজে থিতু হয়ে যাওয়া কামিন্দুকে রানআউটের ফাঁদে ফেলে বিদায় করে বাংলাদেশ। ২৭ বলে ৩৭ রান আসে কামিন্দুর ব্যাট থেকে।
দুই সেট ব্যাটারকে হারিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় শ্রীলঙ্কা। এমন অবস্থাতেই আঘাত হানেন মুস্তাফিজুর রহমান। সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ফিরতি ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান। ১১ বলে সাত রানের বেশি করতে পারেননি সামারাবিক্রমা। খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তোলেন অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা। ১৪ বলে ২৮ রান করে আজও বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠছিলেন তিনি। তবে, শেখ মেহেদির স্পিন বিষে বোল্ড হয়ে থামতে হয়ে তাকে। শেষ দিকে ঝড় তোলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। তাকে সঙ্গ দেন দাসুন শানাকা। ম্যাথুসের ২১ বলে ৩২ রানের অপরাজিত ইনিংস এবং শানাকার ১৮ বলে ২০ রানে ভর দিয়ে লঙ্কানরা পায় লড়াই করার পুঁজি।
বাংলাদেশের পক্ষে একটি করে উইকেট পান তাসকিন, শরিফুল, মুস্তাফিজ ও মেহেদি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা : ২০ ওভারে ১৬৫/৫ (ফার্নান্দো ০, কুশল ৩৬, কামিন্দু ৩৭, সাদিরা ৭, আসালাঙ্কা ২৮, ম্যাথুস ৩২*, শানাকা ২০*; শরিফুল ৪-১-২০-০, তাসকিন ৪-০-৩৮-১ , মেহেদি ৪-০-৩৯-১, মুস্তাফিজ ৪-০-৪২-১, রিশাদ ৩-০-২১-০, সৌম্য ১-০-৫-১)।
বাংলাদেশ : ১৮.১ ওভারে ১৭০/২ (লিটন ৩৬, সৌম্য ২৬, শান্ত ৫৩*, হৃদয় ৩২* ; ম্যাথুস ২.২-০-২২-০, মাধুশাঙ্কা ৪-০-৩৪-০, বিনুরা ৩-০-২২-০, থিকসানা ৪-০-৩৫-০, পাথিরানা ৩.৪-০-২।