আকাশছোঁয়া টিকিট মূল্য নিয়ে বিপাকে ওমরাযাত্রীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩:৪৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: বাংলাদেশে হু হু করে বাড়ছে বিমান টিকিটের মূল্য। ফলে বহুমুখী সমস্যার মুখোমুখি বিদেশযাত্রীরা। প্রস্তুতি নিয়েও বিপাকে পড়েছেন ওমরাহগামীরা।
এক মাসের ব্যবধানে ওমরাহ টিকিটের মূল্য এখন আকাশচোয়া। চড়া দামে ওমরাহ টিকিট কিনতে গিয়ে যাত্রীরা হিমশিম খাচ্ছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিস্টেমে কোনো ওমরাহ টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। অসাধু ট্রাভেলস এজেন্সির সাথে যোগসাজস করে বিমানের ওমরাহ টিকিট ব্লক করে রাখার অভিযোগ উঠছে। বিমানের লোকাল সেলস ম্যানেজার আশরাফুল আলম ওমরাহ টিকিটের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির প্রধান কারিগর বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ওমরাহ এজেন্সির স্বত্বাধিকারী জানিয়েছেন। এক মাসের ব্যবধানে ওমরাহ টিকিটের দাম ৩০ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ওমরাযাত্রীরা মাহে রমজানকে সামনে রেখে টিকিট কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।
প্যান ব্রাইট ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী ও হাবের সাবেক নেতা রুহুল আমিন মিন্টু বলেন, বিমানের সিস্টেমে কোনো ওমরাহ টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না এটা রহস্যজনক। থার্ড ক্যারিয়ারগুলোর ৬০ হাজার টাকার ওমরাহ টিকিট এখন ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে রুহুল আমিন মিন্টু উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ওমরাহ টিকিটের মূল্য আকাশচুম্বি হবার পেছনে কাদের হাত রয়েছে তা’ খতিয়ে দেখতে হবে। রমজান এলেই ওমরাহ টিকিটের মূল্য দেদারসে বাড়ানো হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং সিভিল এভিয়েশন ওমরাহ টিকিটের উচ্চ মূল্য বৃদ্ধির ঘটনা দেখেও না দেখার ভান করছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের সকল ব্যবস্থা থাকলেও হজযাত্রী বা ওমরাযাত্রীর বিমানের টিকিট বিক্রিতের কোনো প্রকার নিয়ন্ত্রণ নেই। পান দোকানেও ওমরাহ টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তিনি ওমরাহ টিকিটের মূল্য বৃদ্ধির ঘটনা যাচাই বাছাই করে টিকিটের দাম সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনার জোর দাবি জানান।
এদিকে, গত চার দিন যাবত সৌদী সরকারের ওমরাযাত্রীদের বায়োমেট্রিক সার্ভার বিকল থাকায় যাত্রীদের ফিংগার নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ওমরাহ ভিসা ইস্যু কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শত শত ওমরাহ এজেন্সির প্রায় ৫ হাজার ওমরাযাত্রী ওমরাযাত্রায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। ওমরাহ সার্ভার সংক্রান্ত জটিলতার দরুন ভিসা না হওয়ায় হাজার হাজার ওমরাযাত্রীর নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল করতে হচ্ছে। এতে সৌদীগামী অনেক এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট খালি যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২০ জুলাই থেকে বাংলাদেশ থেকে ওমরাযাত্রীরা ওমরাহ পালন করে আসছেন। ইতিমধ্যেই বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি পুরুষ মহিলা যাত্রী ওমরাহ পালন করে এসেছে। হাবের ইসির অন্যতম নেতা রাজশাহী ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মুফতি মুস্তাফিজুর রহমান জানান, গত চার দিন যাবত সৌদী ওমরাহ সার্ভার বিকল থাকায় বাংলাদেশি ওমরাযাত্রীরা দফায় দফায় চেষ্টা করেও ফিংগার দিতে পারছে না। ফলে ওমরাহ ভিসা ইস্যু করা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই ওমরাহ এজেন্সিগুলো ওমরাযাত্রীদের বিভিন্ন ফ্লাইটের টিকিট বুকিং বাতিল করছে।
এদিকে ওমরাহ ভিসা সংগ্রহ করা সম্ভব না হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাজশাহী ট্রাভেলসের ৫০ জন ওমরাযাত্রীর টিকিট বাতিল করতে হয়েছে। আবাবিল হজ গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসেও থার্ড ক্যারিয়ারগুলো ওমরাযাত্রীর টিকিট বিক্রি করেছে ৬০ হাজার টাকায় আর সাউদিয়া এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স সরাসরি ওমরাহ টিকিট বিক্রি করেছে ৭৫ হাজার টাকায়। কিন্ত এক মাসের ব্যবধানে থার্ড ক্যারিয়ারগুলো এখন ওমরাহ টিকিট বিক্রি করছে ৮৫ হাজার টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকায়। সাউদিয়া এয়ারলাইন্স এখন সরাসরি ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটের ওমরাহ টিকিট বিক্রি করছে এক লাখ টাকায়। সৌদীর ওমরাহ সার্ভারের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ওমরাযাত্রীরা এজেন্সির অফিসে এসে প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছে।
এদিকে, চলতি বছর হজ প্যাকেজের সর্বনিন্ম মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে জনপ্রতি ৫ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। হজ এজেন্সিগুলো হজযাত্রীদের কাছে এখনো প্রায় ৪ লাখ টাকা পাওনা। সৌদী সরকারের নির্দেশে আগামী ১৪ মার্চের মধ্যে হজের ৫ দিনের সার্ভিস যথা সার্ভিস কোম্পানী নির্বাচন ও মিনার তাঁবুর জোন আবশ্যিকভাবে গ্রহণের জন্য খরচের টাকা সউদীতে পাঠানোর জন্য জোর তাগিদ দিয়েছে। অন্যথায় চলতি বছর হজে হজযাত্রী প্রেরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
একজন হজযাত্রীর ব্যয়ের সমুদয় অর্থ আগামী ১০ মার্চের মধ্যে সোনালী ব্যাংকে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আবু তাহির। গত ৩ মার্চ এক জরুরি চিঠিতে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। এতে হজ এজেন্সির মালিকরা চরম হতাশায় পড়েছেন। হজ এজেন্সির মালিকরা সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে হজযাত্রীদের কাছে পাওনা অর্থ দ্রুত পরিশোধের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।