প্রস্তুত হকার মার্কেট : কাল উদ্বোধন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ মার্চ ২০২৪, ৪:০০:৫৫ অপরাহ্ন
তবু হকারমুক্ত ফুটপাত নিয়ে সংশয়
স্টাফ রিপোর্টার : নগরীর ফুটপাতকে হকারমুক্ত করার লক্ষ্যে লালদিঘীরপাড় হকার মার্কেট মাঠের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামীকাল রোববার (১০ মার্চ) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুটপাতের হকারদের পুনবার্সনের জন্য উদ্বোধন হবে অস্থায়ী এই হকার মার্কেট। এরপরও হকারমুক্ত ফুটপাত নিয়ে জনমনে সংশয় বিরাজ করছে। কারণ অতীতে এমন উদ্যোগ নিলেও আলোর মূখ দেখেনি। এবারের উদ্যোগ কেমন হবে আর কতদিন স্থায়ী থাকবে তা নিয়ে শঙ্কায় খোদ হকাররাই।
শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দ্রুত গতিতে চলছে মাঠের কাজ। সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক টেন্ডারের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত বিভিন্ন কোম্পানীর শ্রমিকগণকে কাজ করতে দেখা গেছে। কেউ ট্রাকে করে ফেলছে মাটি, কেউ ইট বিছিয়ে পরিপারটি করছে বসার স্থান। মাঠ জুড়ে এবং এর আশেপাশে ভ্রাম্যমাণ হকারদের অবস্থান ছিল লক্ষ্যনীয়। ইতোমধ্যে শেষ হওয়া কিছু জায়গায় ভ্রাম্যমান হকারদের বসে ব্যবসা করতে দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লালদিঘীরপাড় হকার মার্কেট মাঠকে ১৮টি গলিতে ভাগ করা হয়েছে। ১টি গলিতে বসবে ৪৫-৫০টি দোকান। প্রতিটি দোকানের আয়তন ৭/৭ ফুট। উদ্বোধনের আগে কোন কোন গলিতে কোন ধরণের ব্যবসায়ীরা বসবে সেটাও নির্ধারণ করা হবে। দোকান বন্টনের বিষয়টি লটারীর মাধ্যমে হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নগরীর ফুটপাত থেকে শুরু করে রাস্তার অর্ধেক জায়গা দখল করে ব্যবসা করে আসছেন ভ্রাম্যমাণ হকাররা। ফলে নগরীতে সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। হাঁটাচলায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয় পথচারীদের। এ নিয়ে দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। সম্প্রতি এ নিয়ে নড়েচড়ে বসে সিসিক। এরই ধারাবাহিকতায় নগরীর লালদিঘীরপাড়স্থ হকার মার্কেট মাঠকে ফের ব্যবসার উপযোগী করে সেখানে হকারদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় সিসিক। পুনবার্সনের জন্য ২ হাজার হকারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়।
এ বিষয়ে হকার্স ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোঃ রকিব আলী শুক্রবার দৈনিক জালালাবাদকে জানান, বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন হকার্স মার্কেট মাঠকে ব্যবসা উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এরই প্রেক্ষিতে মেয়র টেন্ডারের মাধ্যমে এক সাথে ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত গতিতে কাজ করার দায়িত্ব প্রদান করেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ১৫ দিনের ভিতরে মাঠকে পুরোপুরি ব্যবসার উপযোগী করে তুলতে সক্ষম হবে। আগামীকাল রোববার (১০ মার্চ) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে হকার পুনর্বাসন কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
তিনি বলেন, মেয়র প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন হকার পুনর্বাসনের জন্য মাঠ প্রস্তুত করেছেন এবার আমরা প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেব। ১০ মার্চের পর নগরীর ফুটপাত কিংবা রাস্তায় কোন হকারকে আর বসতে দেয়া হবেনা। নগর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আমরা নিজেরা বিষয়টি মনিটরিং করবো।
উল্লেখ্য যে, ২০২১ সালে হকার পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ঐ বছরের জানুয়ারিতে নগরভবন-লাগোয়া লালদিঘীরপাড়ের খোলা মাঠে হকারদের জন্য অস্থায়ী ভাবে পুনবার্সনের ব্যবস্থা করেনন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বেশি দিন সেখানে থাকে নি। তার কারণ ছিল তাদের লাইটিং সমস্যা, রাস্তা। ২০২১ সালে প্রাথমিকভাবে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১ হাজার ৭০ জন হকারকে পুনর্বাসন করা হয়। তবে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভেস্তে যায় হকার পুনর্বাসনের এ উদ্যোগ। সিসিক নির্মিত অস্থায়ী মার্কেটে হাতেগুণা কয়েকটি দোকান ছাড়া আর বসেন না কেউ। উল্টো নগরের ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কেরও বহুলাংশও দখল করে নেন তারা। ফলে দিনভর নগরে লেগে থাকে যানজট।
লালদিঘীর মাঠে এবার দুই হাজার হকারের পুনবার্সনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে কাপড়, সবজি, মাছ, মাংসসহ বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান। সুন্দর পরিবেশ এবং ক্রেতার উপস্থিতি থাকলে এখানে ব্যবসা করতে হকারদের কোন আপত্তি নেই।
তবে শেষ পর্যন্ত পুনর্বাসন করা হকারদের বাইরে নগরীর ফুটপাতে নতুন হকারদের আনাগোনা বাড়ার শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না স্বয়ং হকাররাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হকার বলেন- আমরাও চাই আমাদের একটা পুনর্বাসন হোক। মাঠ প্রস্তুত রোববার থেকে আমরা ব্যবসা করতে পারবো। কিন্তু এর পর দেখা যাবে নতুন আরেকটি ভ্রাম্যমাণ হকার তৈরী হবে। তারা ফুটপাতে ব্যবসা শুরু করবে। তখন মাঠে থাকা হকাররা ক্রেতা হারাবে। এরপর মাঠের হকাররাও বাইরে চলে যাবে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইফতেখার আহমদ চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, নগরীর শত উন্নয়ন ম্লান হয়ে যায় শুধুমাত্র হকারদের কারণে। ফুটপাত থেকে রাস্তা দখল করার নগরজুড়ে সৃষ্টি হয় যানজট। মেয়র মহোদয় এই ব্যাপারটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই তিনি মাঠ প্রস্তুত করে সেখানে হকারদের পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিয়েছেন। আমরা আশা করি এবারের উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখবে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকসহ নগরবাসীকে সহযোগিতা করতে হবে।