সিলেটে ইতিহাস ছোঁয়ার অপেক্ষা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ মার্চ ২০২৪, ২:৩০:৫৭ অপরাহ্ন
আসছেন ক্রীড়ামন্ত্রীও
আহবাব মোস্তফা খান :
সিলেটের মাঠ রূপে-মানে, সুযোগ-সুবিধায় অতুলনীয়-এটি এখন পুরনো গল্প। এই মাঠে নতুন নতুন ইতিহাসেরও জন্ম হয়। আজ বাংলাদেশের সামনে তেমনি নতুন একটি ইতিহাসও হাতছানি দিচ্ছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবারের মতো সিরিজ হারানোর সুযোগের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। আজ লঙ্কানদের বিপক্ষে জয় এলেই হয়ে যাবে ইতিহাস। এখন কেবল একটি নৈসর্গিক ও উৎসবের রঙে রাঙানো সন্ধ্যার অপেক্ষা..।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে থেকে শুরু করে সবাই আছেন উৎসবমুখর সন্ধ্যার অপেক্ষায়। ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন দেখছেন খোদ বিসিবি সভাপতি ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন। স্বপ্নডানায় চড়ে আজ সিলেট আসছেন তিনিও। সাথে থাকছেন বেশ কয়েকজন বোর্ড পরিচালকও। এমনটাই জানা গেছে বিসিবি সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে।
তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে ৩ রানে হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ৮ উইকেটের বড় জয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে নাজমুল হোসেনের দল। প্রথম ম্যাচে তীরে এসে তরী ডুবলেও দ্বিতীয়টিতে ডুবন্ত তরী থেকে উড়ন্ত জয়ে সমতা ফেরায় বাংলাদেশ।
জয়সুরিয়া আর রানাতুঙ্গার উত্তরসুরীদের বিপক্ষে ২০১৩ থেকে ১০ বছরে পাঁচ পাঁচটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রাপ্তির খাতা একেবারেই দুর্বল। সবশেষ ২০১৭ সালে ১-১ এ সিরিজ ড্রই প্রাপ্তির খাতায় নামমাত্র সাফল্য। এবার দেশের মাটিতে সুযোগ এসেছে ইতিহাসের রঙ বদলানোর। আজ সেই ইতিহাসের সামনে দাঁিড়য়ে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
আজ প্রতিপক্ষ নিজের দেশ। তবুও স্বাভাবিকভাবেই স্বদেশের বিপক্ষে জিততে চান চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। আর তাই কালও দলবল নিয়ে সিলেটের উইকেট পরিদর্শন করেন। বুঝে নেন কেমন হতে যাচ্ছে তৃতীয় ম্যাচের উইকেট। বেশ খুটিয়ে খুটিয়েও উইকেট দেখেন। আসলে শেষ ম্যাচটা বিকেলে হওয়ায় টস খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ হবে না এবার। তবে ব্যবহৃত উইকেট ভাবনার কারণ দু’দলের জন্যই।
ওদিকে, নতুন সূর্যোদয়ের প্রান্তে দাঁড়িয়ে শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দলের অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেছেন, আমরা ইতিহাসটা বদলানোর দ্বারপ্রান্তে আছি।
অলিখিত ফাইনালের আগে হাথুরুসিংহে বলেন, আমরা এই সিরিজ জয়ের অবস্থানে আছি, কিন্তু সেটা করতে হলে আমাদের অন্যান্য বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। এটা একটা দিনের খেলা, আমরা সেসব ব্যাপারে সম্পর্কে সচেতন। যদি আমাদের গেম প্ল্যান কার্যকর করতে পারি, তাহলে আমরা নিজেদের সিরিজ জয়ের সেরা সুযোগ দেখছি। যদিও এ ম্যাচে লঙ্কান দলে ফিরছেন তাদের নিয়মিত অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। হাথুরুসিংহে অবশ্য তারকা লেগ স্পিনারের ফেরা নিয়ে খুব একটা চিন্তত নন, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা আমাদের জন্য অন্যদের মতোই একজন ক্রিকেটার।
তবে প্রথম দুই ম্যাচে সমান পরাজয় নিয়ে দারুণ অবস্থায় আছে দুই দলই। তর্ক-বিতর্কে যে দ্বৈরথ হয়েছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার, নিঃসন্দেহে আজ এটা ভেসে উঠবে সিলেটের সবুজ গালিচায়।
অবশ্য সিলেটে ইতিহাস গড়ার আগে একটি বিতর্ক যেন বার বারই আসছে আলোচনায়। দ্বিতীয় ম্যাচে সৌম্যকে নিয়ে অন ফিল্ড আম্পায়ারের দেওয়া সিদ্ধান্ত তৃতীয় আম্পায়ার নাকচ করে দেওয়াকে সহজভাবে নেয়নি শ্রীলঙ্কা।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচের আগে শুক্রবার শ্রীলঙ্কা দলের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই ম্যাচে যা হয়েছে সেটা হয়েছে। এটা আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। আম্পায়ারের ব্যাপারে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। আমাদের প্রক্রিয়া অনুসরন করতে হচ্ছে। যে যে অ্যাকশন নিতে হবে আমরা নিবো। অবশ্যই আইসিসি ফুটেজ দেখবে। তারা যে অ্যাকশন নেয়ার তা নিবে। আমাদের জন্য কালকের এপিসোড শেষ। এটা পুরোপুরি আইসিসি ব্যাপারে। আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করি না। তারা আমাদের পক্ষেও বলতে পারে, নাও বলতে পারে। তবে তারা এটা রিভিউ করবে। আমাদের যা করার ছিল, সেটা আমরা করেছি।
ওদিকে, হাথুরু কিংবা বিসিবির চোখ কেবল আজকের খেলা ঘিরে নয় তা বুঝা গেলো কাল সিলেটে। ঘুরে ফিরে আসলো আসছে জুনে আমেরিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে হতে যাওয়া টি-টুয়েন্টি বিশ^কাপ। সিলেটে বসে হাথুরু ছক কষছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়েও।আগামী ৭ জুন ডালাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবং ১০ জুন নিউ ইয়র্কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। দুটি মাঠেই খেলার অভিজ্ঞতা নেই শান্তদের।
আর তাই সংবাদ সম্মেলনে হাথুরুর কাছে প্রশ্নও ছিলো বিশ^কাপ ঘিরে। প্রশ্নটি ছিলো এমন- বিশ্বকাপ উইকেট কি অনেকটা সিলেটের মতোই থাকবে? উত্তরে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বললেন, আমাদের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আমেরিকায়। কেউ জানে না কেমন হবে, কারণ সেখানে তেমন খেলা হয়নি। কারও কোনো ধারণা নেই, সেখানে উইকেট কেমন হবে। সেখানকার কোনো পরিসংখ্যান নেই। আমি জেনেছি, সেখানে ড্রপ ইন উইকেট থাকবে। অ্যাডিলেডে প্রস্তুত করে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হবে। আশা করছি, অস্ট্রেলীয় উইকেট যেমন হয়, তেমনই হবে।