ভিন্ন এক রমজান গাজায়
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মার্চ ২০২৪, ৯:৩৪:৫০ অপরাহ্ন
*নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই
*নেই ইফতার-সেহরির নিশ্চয়তা
*মৃত্যু ৩১ হাজার ছাড়িয়েছে
জালালাবাদ রিপোর্ট : আবারও ঘুরে এসেছে পবিত্র মাস রমজান। তবে এবার এক অন্যরকম বাস্তবতার মুখোমুখি অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজার বাসিন্দারা। যুগের পর যুগ ইসরায়েলি আগ্রাসনের শিকার হলেও, এবারের মতো এমন রমজান এর আগে আসেনি ফিলিস্তিনিদের জীবনে। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই, সেহরি আর ইফতারে কী খাবেন সেটিও জানা নেই তাদের। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবারের রমজান হবে ভিন্ন রকম রমজান। অন্য বছরের মতো এবার রমজান যাপনের সুযোগ নেই। কারণ শত শত মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। নগর-ভবন মিসমার করা হয়েছে। তাই জীবন যাপনের অনুসঙ্গ সংকীর্ণ হয়ে এসেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩১ হাজার ছাড়িয়েছে। নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৩১ হাজার ১১২ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আরো ৭২ হাজার ৭৬০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ৬৭ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি আগ্রাসনের মাঝেই এবার সিয়াম সাধনা করতে হবে উপত্যকার বাসিন্দাদের। উপত্যকায় এখন খাবার আর পানির জন্য হাহাকার। প্রতিনিয়ত অনাহারে মৃত্যু হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুদের। খাদ্য সংকটে না খেয়েই রোজা রাখতে হবে গাজাবাসীকে। তবু সৃষ্টিকর্তায় ইবাদত পালনে দৃঢ়প্রত্যয়ী তারা।
গাজার উপত্যকার ২৩ লাখ ফিলিস্তিনির মধ্যে বেশিরভাগই বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে তাবুর মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলের শহর রাফাহ, নাদের আবু শারেখ শহরের একটি মসজিদের ইমাম। আবু শারেখ কাল বেঁচে থাকবেন কিনা নিশ্চয়তা নেই। এ বছরের রোজা পালন করতে পারবেন কিনা, তাও জানেন না। কিন্তু তার মধ্যে শক্ত একটি প্রশ্ন জেগেছে। সারা বিশ্বের মুসলিম কীভাবে গাজার দুর্ভোগ মেনে নিচ্ছেন?
কাতারের সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলেছিলেন শারেখ। তিনি বলেন, আমি মনে করি পুরো বিশ্ব গাজাকে পরিত্যাগ করেছে। আমরা বিশ্বের প্রতিটি কোণে মুসলমানদের জিজ্ঞেস করি- এই পবিত্র মাসে গাজাবাসীর দুর্ভোগ দেখে আপনি কীভাবে তা মেনে নেন?
তিনি জানান, রাফাহয় তাদের কাছে অবশিষ্ট কিছুই নেই। নেই পানীয় জল। খাবার তো সোনার হরিণ। উত্তর গাজার মানুষ এখন পশুর সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করছে।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, চলমান গাজা যুদ্ধে অন্তত ১২ হাজার ৩০০ শিশু মারা গেছে।
এবারের রমজানে ফিলিস্তিনের গাজার চিত্রটা ভিন্ন হতে যাচ্ছে। এমন এক পরিস্থিতিতে উপত্যকাটির বাসিন্দারা রমজানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যখন সেখানে নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।শুধু রক্তক্ষয়ই নয়, রমজানের আগমুহূর্তে ক্ষুধাও বিপর্যস্ত করেছে গাজাবাসীকে। গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে উপত্যকাটিতে অনাহারে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, উত্তর গাজার অবস্থা মর্মান্তিক। বারবার আহ্বান জানানোর পরও সেখানে সড়কপথে ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে না। আর রমজান যখন এগিয়ে আসছে, তখন প্রাণহানিও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে গাজা পৌর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলমান সংঘাতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এক হাজারের বেশি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণে রাফা এলাকার আল-হুদা মসজিদ। গত মাসে সেটি ধ্বংস করে ইসরায়েলি বাহিনী। একসময় সেখানে দেড় হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারতেন। বর্তমানে ধ্বংস হওয়া মসজিদটির ক্ষুদ্র একটি স্থানে নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা। রমজানেও এ দুর্দশার মধ্যে নামাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
গাজায় যাঁরা ভয়াবহ দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতি সংহতি ও সমর্থন জানাচ্ছি আমি। এ কঠিন সময়ে রমজান আমাদের আশার আলো দেখাবে রমজানের আগে গাজাবাসীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে একটি বার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, রমজান শান্তি, সহনশীলতা ও উদারতার মূল্যবোধকে তুলে ধরে। গাজায় যাঁরা ভয়াবহ দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতি সংহতি ও সমর্থন জানাচ্ছি আমি। এ কঠিন সময়ে রমজান আমাদের আশার আলো দেখাবে।
রমজান ঘিরে গাজায় যুদ্ধবিরতির একটি আশা দেখা গিয়েছিল। এ নিয়ে মিসরের রাজধানী কায়রোয় আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে সে আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। সফলতা এলে গাজায় ছয় সপ্তাহ যুদ্ধবিরতি দেওয়া হতো।