আজ থেকে রোজা শুরু : আহলান সাহলান মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মার্চ ২০২৪, ৪:৫৮:১৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: রহমত বরকত আর মাগফিরাতের বারতা নিয়ে শুরু হলো মহিমান্বিত মাস রমজান। খোশ আমদেদ মাহে রমজান। গতকাল সালাতুল তারাবির মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো। এই পুরো মাসটি রোজা পালনের মাধ্যমে রমজান উদযাপন করা হবে। এবার এমন একটা সময়ে রমজান মাসের আগমন যখন পুরো দেশে এক অস্থিরতা বিরাজমান। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীনতায় নাকাল মানুষ।নানান কারণে বিশ্ব মুসলিমের কাছে রমজান মাস সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ। এ মাসেই মহান আল্লাহ তায়ালা বিশ্ব মানবতার মুক্তি পথনির্দেশক হিসেবে নাজিল করেছেন আল কুরআন। কুরআন হলো মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো সর্বশেষ হেদায়াতের গ্রন্থ। কুরআন নাজিলের কারণে এ মাসের এত মর্যাদা। এ মাসে ক্বদরের রাত নামে এমন একটি রাত রয়েছে যে রাতকে আল্লাহ তায়ালা হাজার মাসের চেয়ে সেরা রাত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস। তাকওয়া অর্জনের মাস। শুধু ইসলাম ধর্মেই যে সিয়াম সাধনা রয়েছে তা নয়, অতীতে অন্যান্য নবী রাসুলদের ধর্মেও সাওমের বিধান ছিল। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনুল কারিমে সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন ‘হে ইমানদারেরা তোমাদের উপর সাওম (রোজা) ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের আগেকার লোকদের উপর। আশাকরা যায় এতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারবে।’ আর তাই এ মাসে সকল পাপ কাজ থেকে মুক্ত থাকার জন্য ধৈর্য, সংম ও সহিষ্ণুতার কঠোর প্রশিক্ষণ নিতে হয়। রমজানের এই এক মাসের সিয়াম সাধনা অর্থাৎ অন্যায় অপকর্ম তথা সব ধরণের গোনাহর কাজ থেকে বিরত থাকার কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জিত প্রশিক্ষণ বছরের বাকি ১১ মাস সঠিক পথে চলতে সবাইকে অনুপ্রাণিত করে থাকে। এজন্য সাওমকে রাসূল সা. গোনাহ থেকে নিজেকে রক্ষার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
রমজানের দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিজেদের পরিশুদ্ধ করার সুযোগ পায়। এসময় শয়তানকে আটকে রাখা হয়। এ ব্যপারে বুখারী শরীফের ১৭৬৪ নম্বর হাদিসে আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত একটি হাদিস এসছে। এখানে রাসূল সা. বলছেন, ‘ রমজান মাস এলে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শিকলবন্দী করা হয়।’
কাজেই এসময় শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে মানুষ মুক্ত থাকে। তবে প্রশ্ন ওঠে তাহলে মানুষ রামজানে খারাপ কাজ কীভাবে করে? এটা হলো যারা এসময় খারাপ কাজ করে তারা মূলত সারাবছর খারাপ কাজের যে চর্চা করে তারই ধারাবাহিকতায় তা করে। এটা অনেকটা দ্রুতগামী কোনো যানকে হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ার মতো। দ্রুতগামী যান যেমন বন্ধ করে দিলেও আগের গতির রেশ ধরে কিছুটা এগিয়ে যায় বা এগিয়ে গিয়ে থামে ঠিক সেরকম। তাই কেউ যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে রমজান মাসে খারাপ কাজ ছেড়ে দেয় তবে শয়তান তাকে কুমন্ত্রনা দিয়ে সে কাজ করাবার সুযোগ পায় না। এতে দ্রুতগামী যান যেমন ইঞ্জিন বন্ধ করে দেওয়ার পর কিছুটা চলে তারপর থেমে যায়, মানুষের খারাপ কাজও তেমন থেমে যাবে। কারণ খারাপ কাজের মূল ইঞ্জিন শয়তানকে রমজানে বন্দ করে দেওয়া হয়েছে।
রোজাদারের মর্যাদার ব্যাপারে নবী সা. শপথ নিয়ে বলেছেন, ‘ রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে কস্তুরীর সুগন্ধীর চেয়েও প্রিয়’।
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ এবং ইন্দ্রিয়জ সুখ নেওয়া থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে সিয়াম বা রোজার প্রধান বৈশিষ্ট্য। তবে কেবল খাওয়া দাওয়া থেকে বিরত থাকলেই সাওম হবে না। এরসাথে সকল ধরনের খারাপ কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে হবে। বুখারী শরীফের ১৭৬৮ নম্বর হাদিসে আবু হুরায়রা রা. এর বর্ণনা দিয়ে একটি কঠিন হাদিস এসেছে। রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে সাওম রাখবার পর মিথ্যা এবং খারাপ কাজ ছাড়তে পারলো না তার খাওয়া দাওয়া বন্ধের কোনো দরকার আল্লাহর নেই’। তাই এবারের রমজানই হোক আমাদের শুধরে নেওয়ার শেষ রমজান। এবারের রোজাই হোক আমাদের সেই রোজা যা হাদিসে রাসুল সা. পালন করতে বলেছেন। যে রোজার শিক্ষা নিয়েই আমার সাজিয়ে তুলি আমাদের পার্থিব জীবন।