ইফতারের আয়োজনে ভাটার টান
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মার্চ ২০২৪, ৯:২৫:২০ অপরাহ্ন
নগরের সুপরিচিত দোকানগুলোতেও আয়োজন কম
স্টাফ রিপোর্টার: সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজানের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ইফতার। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে মুখে ইফতারের খাবার তুলে রোজা ভাঙেন মুসলমানেরা। ইফতার শুধু রোজা ভাঙার উপলক্ষই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের, বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের কাছে একটি ঐতিহ্যও। ইতিমধ্যে বিশ্ব মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকা এ ইফতারকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর এ স্বীকৃতি দেয় তারা। ইউনেসকোর স্বীকৃতির পর এবারই প্রথম ইফতার করা হলো মঙ্গলবার।
ইফতার মানেই থাকে বাহারি আয়োজন, হরেক রকমের খাবার আর লোকজনের উচ্ছ্বাস উল্লাসে অন্যরকম গোধূলি। বাসাবাড়ি থেকে নিয়ে খাবারের দোকান সব জায়গায় চলে ইফতারির আলাদা আয়োজন। প্রতিবছরই এর ব্যতিক্রম হয় না। কেবল ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়টি ছিল ভিন্ন। এবছরও মঙ্গলবার পয়লা রোজায় বাসাবাড়ির পাশাপাশি ইফতারির আয়োজন ছিল সিলেটের নামিদামি খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্টগুলোতে। নামিদামি খাবারের দোকানের বাইরে বিভিন্ন পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতেও বিক্রি হয়েছে ইফতার। তবে অন্যবারের চেয়ে কিছুটা কম এবার। বনফুল, ফিজাসহ অনেক নামি ব্রন্ডের বেশকিছু শাখা ছাড়াও অনেক খাবারের দোকানে এবার নেই ইফতারির আয়োজন, যেগুলো খুলেছে সেগুলোতেও ভিড় বেশি নেই। একমাত্র পেঁয়াজু ছাড়া আর কোনো খাবারই ১০টাকার নিচে নেই। পেঁয়াজু ছিল প্রতিপিস দোকান ভেদে ১ থেকে ৩ টাকা। গেল বছর যে আলুচপ, বড়া ৫ থেকে ৬ টাকা ছিল এবার তা ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। জিলাপি ছিল দোকান ভেদে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েই এবার দ্রব্যমূল্যে উর্ধ্বগতিকে দায়ী করছেন।
মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় দুপুরের পর থেকে খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্টের সামনে টেবিল প্রস্তুত করা হচ্ছে। চারটার পর থেকে এসব টেবিলে বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী সাজিয়ে রাখা শুরু হয়। আসরের পর বাড়তে থাকে ক্রেতার সংখ্যা। তবে অন্যবার যেরকম ক্রেতার ভিড় ও হট্টগোল দেখা যেত এবার তেমন একটা দেখা যায়নি। বিক্রেতারা বলছেন প্রথম রোজার দিন সবাই ঘরেই ইফতার করতে পছন্দ করেন তাই ক্রেতার সংখ্যা কম। দু চার রোজার পর ক্রেতা বাড়বে। ক্রেতারা বলেন এবার অনেক জিনিসের দাম বেশি। তাই যেসব খাবার ঘরে বানানো সম্ভব নয় যেমন জিলাপি, চপ, আখনি ইত্যাদি কিনতে দোকানে এসেছেন। অন্যগুলো ঘরেই তৈরি করা হবে।
নগরীর জল্লারপারে ভাইবোন ¯œ্যাকবারের কর্ণধার খোকন মিয়া বলেন পেয়াজু ছাড়া অন্য কিছু ১০ টাকার নিচে বিক্রি করে পোষানো যায় না। ১৮ বিশ টাকার আলু ৩৫ টাকা, কখনো তা বেড়ে ৫০ টাকাও ছাড়িয়ে যায়। গ্যাসের দাম সিলিন্ডারে ৩০০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া অন্যান্য জিনিসও দাম বাড়লে আর কমার নাম নেই। এই অবস্থায় অনেক চেষ্টা করেও পণ্যের দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই। দাম বেশি থাকায় জিনিসও কম বানিয়েছি, ক্রেতাও কম দেখা যাচ্ছে। দু চারদিন না গেলে কিছু বুঝা যাবে না। মানুষজন এখন আগের মতো দোকান থেকে খাবার কিনছেন না।
নগরীর জিন্দাবাজারে রাজবাড়ি রেস্টুরেন্টের পাশে কথা হয় ক্রেতা ফারদাইক চৌধুরীর সাথে। তিনি বলেন প্রথম রোজা আমরা বাসায় করে থাকি। এখন বাসায় ফেরার পথে এখান থেকে জিলাপি আর আখনি নিয়ে যাচ্ছি। বাকিসব ঘরেই তৈরি হবে। এগুলো ঘরে বানানে গেলে ঘরেই তৈরি করে নেওয়া হতো। তিনি বলেন এবার ইফতারির আয়োজন দোকানগুলোতে কম দেখা যাচ্ছে। অনেক নামি খাবারের দোকানও এবার ইফতার বিক্রি করছে না। আগে জিন্দাবাজার থেকে বন্দরবাজার পর্যন্ত লাইন দেওয়া দোকান থাকতো কিন্তু এবার তা নেই। তাছাড়া অনেক কিছুর দাম বেড়ে গেছে, এছাড়া অসুখ বিসুখ বেড়েছে ফলে লোকজন বাইরের খাবার কমিয়ে দিয়েছেন।