দেশি ফলও নাগালের বাইরে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ মার্চ ২০২৪, ১১:১৭:১২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : সজীব হোসাইন, চাকুরী করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। সীমিত আয় দিয়ে ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে টেনেটুনে সংসার চালান। রমজান শুরু হওয়ায় নিয়মিত বাজার তালিকার সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ইফতার। ইফতারের আয়োজনে পরিবারের সদস্যদের একটু ফলমূল খাওয়াতে চান। কিন্তু বাজারে ফলের যে চড়া দাম এতে করে পুরো মাস জুড়ে হয়তো দুই-একদিন খাওয়াতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসান মার্কেটে একটি ফলের দোকান থেকে বরই কেনার সময় কথাগুলো বলছিলেন সজীব।
তিনি বলেন, চিড়া, মুড়ি আর কলা মাখিয়ে যে ইফতার করবো তাও হচ্ছে না। বাজারে কলারও যেভাবে দাম বেড়েছে, তাতে মনে হচ্ছে আমাদের মতো মানুষের জন্য এসব ফল না। এগুলো এখন বড়লোকের খাবার।
সজীবের এমন বক্তব্যের সত্যতা মিলেছে সিলেটের ফলের বাজারগুলোতে গিয়ে। বাজারে প্রতিটি ফলের দামই নিয়ন্ত্রণহীন। বিদেশি ফলের দাম শুনলেতো চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিতে চড়া শুল্ক এবং ডলার সংকটে এলসি জটিলতা থাকায় বিদেশি ফলের দাম এতো চড়া। তাদের দাবি, খেজুরসহ অন্যান্য ফলকে বিলাসী তালিকায় ফেলে উচ্চ শুল্ক আরোপ করায় এর দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
এদিকে শুধু বিদেশি ফলই নয়, বাজারে যেসব দেশি ফল পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর দামও নাগালের বাইরে। এখন সেই ফলও অনেকটা বিলাসী পণ্যে রূপ নিয়েছে। মধ্যবিত্তদেরও নাগালের বাইরে চলে গেছে দেশি ফল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে যেসব দেশি ফল পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে আছে বরই। যা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। পেয়ারার কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা। পেঁপের কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। আনারসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
ইফতারের অবিচ্ছেদ্য অংশ শরবত। আর সেই শরবতে বেলের চাহিদা থাকে। চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দাম বেড়েছে বেলেরও। প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। বাজারে কলার দাম দেখলেও আঁতকে উঠতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। এক সপ্তাহ আগেও ১০০ টাকা ডজন ছিল সবরি কলার। রোজা উপলক্ষে ডজন প্রতি এই কলার দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। ডজন প্রতি ১৫ টাকা বেড়েছে সাগর কলার দামও।
ফল বিক্রেতা সাব্বিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোকামে দাম বেশি। আমরাতো কিনে নিয়ে আসি। মোকামে দাম বাড়লে আমাদের কাছেও বাড়ে।
বন্দরবাজার হাসান মার্কেটের ফল ব্যবসায়ী এমরান হোসেন বলেন, রমজান মাস হওয়ায় মানুষের ফল কেনার চাহিদা বেড়ে যায়। এ কারণে মোকামে দাম বাড়িয়ে দেয় পাইকারি ব্যবসায়ীরা। আমরাতো সেখান থেকে কিনে এনে বিক্রি করে থাকি। যে দামে কিনে আনি তার চেয়ে কিছু বেশি রেখে বিক্রি করি।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগেও ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া কমলা রোজার আগের দিন থেকেই বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে। মানভেদে এই কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা দরেও। রোজার আগে আপেল বিক্রি হতো ১৮০ থেকে ২৫০ টাকায়। রোজার প্রথম দিন থেকে তা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি দরে।
মৌসুমের আগে বাজারে এসেছে তরমুজ। রোজায় চাহিদার তুঙ্গে থাকা এই দেশীয় ফলের দামও আকাশছোঁয়া। তরমুজ পিস হিসেবে বিক্রি হওয়ার নিয়ম থাকলেও তা বিক্রি হচ্ছে কেজি হিসেবে। প্রতি কেজির দাম ৮০ টাকা। সে হিসাবে ছোট আকারের একেকটি তরমুজের দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।
নগরীর লালদিঘীরপাড়স্থ হকার মার্কেট এলাকায় এ দামে তরমুজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। বেড়েছে ডাবের দামও। আকারভেদে প্রতিটি ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পিস হিসেবে।