দিন-রাত মশার উপদ্রব
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মার্চ ২০২৪, ৪:০০:৪৮ অপরাহ্ন
দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কিউলেক্স মশা
জালালাবাদ রিপোর্ট : মৌসুমের শুরুতেই মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন নগরবাসী। দিন থেকে দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও মশার হাত থেকে মুক্তি মিলছে না। রাতের অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।বাসা-বাড়ি, অফিস থেকে শুরু করে ফুটপাত সব জায়গাই যেন মশার দখলে। দীর্ঘদিন ধরে মশার উপদ্রব সীমা ছাড়ালেও এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগের কোন কার্যকারিতা নেই বলে মনে করেন সচেতন নগরবাসী।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, নগরজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কিউলেক্স মশা। বিশেষ করে জলাধারকেন্দ্রিক এলাকাগুলোয় যেন মশারই রাজত্ব। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, কেবল এডিসের সময় নয় বছরজুড়েই নিতে হবে ব্যবস্থা। সেক্ষেত্রে গড়ে তুলতে হবে সমন্বিত উদ্যোগ। আর সেখানেই নিজেদের অসহায় যেন মানছে সিটি করপোরেশন।
সরেজমিনে রায়নগর এলাকায় দেখা যায়, বাসা-বাড়ি ও দোকানে সন্ধ্যা রাতে যেভাবে ঘিরে ধরে মশা তাতে সবাই ব্যস্ত মশা তাড়াতে। স্থির হয়ে বসে থাকার উপায় নেই। নিস্তার নেই কয়েল-মশারিতেও।দিনের আলোতেও কম যায় না এই মশা। দিনের বেলা ঘরে থাকতেও লাগে মশারি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দায়সারা ওষুধ ছেঁটায় দুই সিটি করপোরেশন। এই ওষুধের কোন কার্যকারিতা নেই।
শুধু এই এলাকাতেই নয়, নগরজুড়েই এখন শুরু হয়েছে মশার রাজত্ব। সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় আক্রমণ। তখন কিউলেক্সের বিরুদ্ধে ঢাল-তলোয়ার নিয়ে নেমে পড়তে হয় যুদ্ধে। দিন কিংবা রাত, মশার আক্রমণ থেকে নিস্তার পাচ্ছে না মানুষ।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন এডিস আর কিউলেক্সের দমন এক না হলেও ফেব্রুয়ারি মার্চে কিউলেক্স নিধনে বিশেষ অভিযান শুরু করলে তা ডেঙ্গু মোকাবিলায় সহায়ক হয়। তবে নগরের বদ্ধ জলাশয়ের মালিকানা ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হওয়ায় দরকার সকলের সমন্বয়। না হলে কিউলেক্স দমন সম্ভব নয় বলেই দাবি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার।
এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, সিটি করপোরেশনের ভেতরেও কিউলেক্স মশা আছে, বাইরেও আছে। এখন যার যার যে জায়গা, সেখান থেকে যদি নিজ উদ্যোগে জায়গা পরিষ্কার রাখে তাহলেই এ মশার প্রাদুর্ভাব কমবে।আর এক্ষেত্রেই নিজেদের অসহায় মানছেন নগর কর্তৃপক্ষ। যদিও মশক কর্মীদের অবহেলার অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা। তারা বলেন, অভিযান কিন্তু চলছে। তবে মশার নিয়ন্ত্রণে সবার আগে প্রয়োজন মানুষের সহযোগিতা।
এভাবে একে অপরের ওপর দায় না চাপিয়ে স্থানীয় সরকারের অধীনে একটি সমন্বিত প্লাটফর্ম তৈরির তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।সিসিকের স্বাস্থ্য শাখার কর্মকর্তারা বলেন, এখন যে মশা উৎপাত করছে সেগুলো এডিস নয়, কিউলেক্স মশা। কিউলেক্স মশা ময়লা ও বদ্ধ পানিতে বংশবিস্তার করে। বাড়ির আশপাশে যেন ময়লা পানি জমে না থাকে সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে।
মশার উপদ্রবের ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম সম্প্রতি জানান, মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য সিসিকের স্থায়ী কোনো জনবল নেই। দৈনিক মজুরিতে লোক নিয়োগ করে চালানো হয় কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের মাধ্যমেই পরিচালিত হয় মশক নিধন কার্যক্রম। প্রতি ওয়ার্ডে আড়াই থেকে তিন মাসব্যাপী কার্যক্রমে ৯০ জনকে দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। তবে এটা পর্যাপ্ত নয়। পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ওষুধ ছিটানো, জঙ্গল পরিষ্কার সবই একসঙ্গে করতে হয়। তাছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে একটি বা দুটি ওয়ার্ড করে মশকনিধন কার্যক্রম চালিয়ে দীর্ঘস্থায়ী কোনো সুফল আসবে না। এজন্য এ বছর ৪২টি ওয়ার্ডে একসঙ্গে অভিযান চালানো হবে।