সুনামগঞ্জে চোরাইপথে বাড়ছে কয়লা আমদানি : প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বিপাকে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মার্চ ২০২৪, ৭:৪৬:০৭ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জে সীমান্ত পথে চোরাই কয়লা কম দরে বিক্রি হওয়ায় প্রকৃত আমদানিকারকরা পড়েছেন বিপাকে। এ নিয়ে অভিযোগ উঠলেও থামছেনা চোরাচালানি। এসবের সাথে প্রশাসনের লোক ও কিছু হলুদ সাংবাদিকরা জড়িয়ে পড়ছেন।জানা যায়, কয়লা আমদানী হয় প্রতিদিন প্রায় ২৪০০ টন, আর অবৈধ পথেই আসে কমপক্ষে ৮০০ টন। বৈধ পথে আসা কয়লা প্রতিটন ১৫ থেকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রয় করতে হয়, অবৈধভাবে আসা কয়লা ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা টনে বিক্রয় হয়। এই অসম প্রতিযোগিতায় কীভাবে টিকবে প্রকৃত আমদানীকারকরা। এজন্য অনেকেই হতাশায় পড়েছে।
চারাগাঁও শুল্কস্টেশনের এক ব্যবসায়ী নিজের পরিচয় উল্লেখ না করার অনুরোধ জানিয়ে বললেন, ‘পরিচয় দিলে টিকতাম পারতামনায় ভাই। তারা বিজিবি, পুলিশ, সাংবাদিক হকলের (সকলের) কথা কইয়া (বলে) টেকা (টাকা) তুলে। এরা দলেরও নেতা। তারার ডিপোতে নিয়েও কয়লা রাখে।
এই ব্যবসায়ীর অভিযোগের সত্যতা যাচাই করার জন্য তাহিরপুর কয়লা আমদানীকারক গ্রুপের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়েরকে ফোন দিলে তিনি বললেন, ‘কথা সত্য বলেছে, কেউ প্রতিবাদ করলে সব চোরা এক হয়ে রুখে দাঁড়ায়, সাংবাদিকরাও চাঁদা নেয়। কার কাছে বলবো, বিপদে পড়েছি আমরা।’
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খাঁন বললেন, সীমান্ত পথে অবৈধভাবে কয়লা নামার বিষয়টি রবিবার কয়লা আমদানীকারক গ্রুপের বার্ষিক সভায় ব্যবসায়ীরা স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. রঞ্জিত সরকারকেও অবহিত করেছেন। প্রশাসন এসব বন্ধ করতে না পারলে এখানকার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাহিরপুর সীমান্তের বুরুঙ্গাছড়া, লাকমা, লালঘাট, চারাগাঁও, জঙ্গলবাড়ি ও কলাগাঁও দিয়ে প্রতি রাতেই নামছে শত শত টন কয়লা। রাত দুইটার পর শ’খানেক ট্রলি চোরাই কয়লা (স্থানীয়ভাবে বলা হয় বুঙ্গার কয়লা) নামানোর কাজ করে। যত দ্রুত সম্ভব ভারতের মেঘালয়ের বড়ছড়াসহ আশপাশের এলাকা থেকে এপারে শত শত বস্তায় কয়লা নামিয়ে এপারের যেকোন অসৎ ব্যবসায়ীর ডাম্পে ঢুকিয়ে দিলেই এটা বৈধ হয়ে যায়।
স্থানীয় একাধিক আমদানীকারক বুঙ্গার কয়লা কেনা ও পুলিশ, বিজিবি সাংবাদিক ম্যানেজের দায়িত্ব পালনকারী হিসেবে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি বর্তমানে একটি বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাবেদ আহমদ, এমরুল ইসলাম, আইনুল ইসলাম ও রউফ মিয়ার নাম বললেও এরা সকলেই বলেছেন, স্থানীয় দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক কারণসহ নানা কারণে তাদের কথা বলছে স্থানীয় প্রতিপক্ষ। তারা এসব অপকর্মে যুক্ত নয়।
জাবেদ আহমদ বললেন, টুকটাক কয়লা ওপার থেকে আসে। বিজিবি ও পুলিশের হাতে এরা ধরাও পড়ে। আমি একটি বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে কেউ কেউ আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে বিব্রত করতে চায়।
চারাগাঁওয়ের এমরুল হাসান বললেন, আমি এসবের প্রতিবাদ করি, প্রতিবাদ করলেই উল্টো কথা তুলে কিছু মানুষ।একই এলাকার রউফ মিয়া বললেন, ‘হালকা পাতলা কিছু মাল নামে, গরিব মাইনসে (মানুষে) ইতা (এসব) কইরা (করে) বাইচ্চা বেঁচে) থাকের। আমি আগে টেকা তুলতাম, তিনমাস ধইরা (হয়) এসব বন্ধ।’ আইনুল ইসলামও বললেন, ‘আমার নামে এসব ভিত্তিহীন কথা বলছে অন্যরা।’
চারাগাঁওয়ের একজন বড় আমদানীকারক জানালেন, বৈধপথে প্রতিদিন ২০০ ট্রাক কয়লা নিয়ে আসে দেশে। তাতে প্রায় ২৪০০ টন কয়লা এপারে আসে। অন্যদিকে অবৈধপথে সাতশ’ থেকে আটশ টন কয়লা আসে প্রতি রাতে। তিনি দাবি করলেন, গেল দুই দিনে জঙ্গলবাড়ি দিয়েই কমপক্ষে ১০০০ টন অবৈধ কয়লা এসেছে।’
তাহিরপুর কয়লা আমদানীকারক গ্রুপের সদস্য সচিব রাজেশ তালুকদার জানালেন, বহুদিন পর গেল ডিসেম্বরের তিন তারিখ থেকে ভারতীয় কয়লা আমদানী শুরু হয়। বড়দিন উপলক্ষে বন্ধ হবার পর জানুয়ারি মাস বন্ধই ছিল। পহেলা ফেব্রয়ারি থেকে আবার নিয়মিত কয়লা নামছে।
বড়ছড়া কাস্টমস অফিসের সুপারিটেনডেন্ট আবুল হাসেম বললেন, ‘বর্ডারের লোকগুলো অনেকটা ফেরোসাচ টাইপের হয়। এজন্য এই চোরাচালান নিয়ে খুব একটা কিছু করতে পারি না আমরা। তবে বিজিবি মাঝে মাঝে এদের আটক করে। এরা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়েই চোরাই কয়লা নামায়।’ তিনি জানান, এই সীমান্তের তিন শুল্ক স্টেশন দিয়ে দিনে ২৪০০ টন কয়লা নামতে পারে। একটন কয়লার রাজস্ব তিন হাজার ২০০ টাকা, সে হিসেবে কয়লা ঠিকঠাকভাবে আমদানী হলে দিনে রাজস্ব পাওয়া যায় ৭৬ লাখ ৮০ হাজার টাকার মত।
চোরাই পথে ৮০০ টন কয়লা প্রতিদিন নামলে এই হিসেবে ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার রাজস্ব প্রতিদিন (অফিস খোলার দিনে) হারাচ্ছে সরকার।তাহিরপুর থানার ওসি নামিজ উদ্দিন বললেন, পুলিশ দেশের অভ্যন্তরে কাজ করে। বর্ডার চেক দেয় বিজিবি। তারাও কাজ করেন, আমরাও কাজ করি। পুলিশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বিশ^স্ত তথ্য নয়। আমরা কোন অনৈতিক কাজকে সমর্থন করি না।