হকার মুক্ত ফুটপাত, সিএনজি-লেগুনা’র দখলে রাস্তা!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মার্চ ২০২৪, ৪:০০:২৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : নগরের ফুটপাত ও সড়ক এখন হকারমুক্ত। তবে হকারের ছেড়ে দেয়া সেই জায়গায় গড়ে উঠেছে অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনা স্ট্যান্ড। স্ট্যান্ডে গাড়ি বেড়েছে। এবড়ো-থেবড়ো রাখা যানবাহনের কারণে যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
নগরবাসী বলছেন, নগরে অর্ধশতাধিক অবৈধ স্ট্যান্ড রয়েছে। প্রতিটি স্ট্যান্ডে প্রায় অর্ধশতাধিক গাড়ি রাখা হয়। এই গাড়িগুলো রাখার ব্যাপারে কোনো শৃঙ্খলা নেই। ফলে স্ট্যান্ড এলাকায় এখন যানজট বেশি। বিশেষ করে পরিবহন শ্রমিকরা আইন মানছেন না। পাশাপাশি অবৈধ পার্কিংও বেশি। নগরজুড়ে অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যানবাহন সড়কেই থাকছে। ফলে মেয়রের প্রচেষ্টা হুমকীর মুখে রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মহানগরের বেশ কয়েকটি এলাকায় চলছে রাস্তা প্রশস্ত ও উন্নয়নমূলক কাজ। তবে সড়ক প্রশস্ত করায়ও সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। সড়ক দখল করে গড়ে উঠছে একের পর এক অবৈধ স্ট্যান্ড। প্রতিটি মোড়ে দুই লেনের সড়কের দুই পাশে একাধিক সারিতে সিএনজি অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এরপর সড়কের অবশিষ্ট যে অংশটুকু থাকে তাতে কোনোমতে এক সারিতে যান চলাচল করতে পারে। তাতেও অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্য। রাস্তার মাঝখানে অটোরিকশা থামিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ সেরে নেয়া, যাত্রী ওঠানো-নামানোর কাজ অবলীলায় করে তারা। পরোয়া করে না মানুষের ভোগান্তির কথা। মোড়ে মোড়ে অবৈধ স্ট্যান্ড হওয়ায় অনেক সময় পায়ে হাঁটাও দুষ্কর হয়ে পড়ে। বিশেষ করে সড়ক পার হওয়ার সময় বিপদে পড়েন বৃদ্ধসহ সকল শ্রেণী-পেশার কর্মজীবী মানুষজন। অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে নগরীর বিভিন্ন সড়কে যানজট লেগে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ কোর্ট পয়েন্ট, কুদরত উল্লাহ পয়েন্ট, শেখঘাট পয়েন্ট, সোবহানীঘাট, মেন্দিভাগ, শাহজালাল উপশহর, ধোপাদিঘিরপার, নয়াসড়ক, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ, মেজরটিলা, সুবিদবাজার, মদিনা মার্কেট, রিকাবীবাজার, মজুমদারী, ওসমানী হাসপাতালের সামনে, মদিনা মার্কেট, বাগবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সড়কগুলোও দখল করে সিএনজিচালিত অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়ও অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে।
নগরবাসী বলছেন, সিলেটের রাস্তা প্রশস্তকরণ করেও যানজট থেকে মুক্তি মিলছে না। বরং রাস্তা প্রশস্তকরণের পরপরই সেটি দখলের মহোৎসব চলছে। আর এই মহোৎসবের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। নগরীর বিভিন্ন স্পটে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্ট্যান্ডগুলোর কারণে সবসময় যানজটের কবলে পড়েন নগরবাসী। এছাড়া স্ট্যান্ড থেকে সিএনজিতে ওঠলে তাদের কথা অনুযায়ী ভাড়া দিতে হয়। কম বেশি করা যায় না। চালকরাও আমাদের অপারগতা বুঝে বেশি ভাড়া দাবি করেন। মহানগরজুড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে এক এলাকার গাড়ি অন্য এলাকার যাত্রী তুললে চালক ও যাত্রীদের হেনস্থা করেন স্ট্যান্ডের দায়িত্বরতরা। মানুষের চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্ট্যান্ডগুলো। নগরবাসীর অভিযোগ এসব এলাকায় প্রশাসন থেকেও এগুলো সরানোর ব্যাপারে নেই কঠোর উদ্যোগ।
সিলেট সিটি করপোরেশনে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী জানান, আমরা এ বিষয় নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যেই ট্রাফিক বিভাগের সাথে কথা হয়েছে। স্ট্যান্ড গুলো যেহেতু আমাদের নগরবাসী ব্যবহার করে তাই আমরা কোন কোন পয়েন্টে সল্প পরিসরে এবং শৃঙ্খলা ভাবে যানবাহন রাখা সে বিষয়ে কাজ করছি। এটি একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা।সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান জানান, নগরে গড়ে উঠা অবৈধ স্ট্যান্ড গুলোতে আমরা প্রতিনিয়তই অভিযান চালাচ্ছি। কেউ যদি সড়ক ব্যবহারের আইন না মানে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, আমরা সড়কে শৃঙ্খলা আনতে কাজ করছি। তবে এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সড়কের আইন মানার জন্য সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে এবং আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে।