নির্ধারিত দামে মিলছে না ২৯ পণ্য
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মার্চ ২০২৪, ৯:১০:২৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : রমজান উপলেক্ষ সরকারকর্তৃক ২৯ পণ্যের দাম নির্ধারণের ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে পণ্য। কিছু পণ্যের দাম ঠিক থাকলেও কয়েকটি পণ্য এখনো বেশী দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। যদিও বাজারে সক্রিয় রয়েছে জেলা প্রশাসক, ভোক্তা অধিকার ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরসহ সরকারের বাজার মনিটরিং সেলে। সরকার নির্ধারিত পণ্যমূল্যে কার্যকরে কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
রমজান এলেই মূল্যবৃদ্ধির যেন প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন ব্যবসায়ীরা। এবারো রমজানে নিত্যপণ্যের চড়া দাম কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সরবরাহ কম, ভ্যাট বেশি, ডলার সংকটের মতো নানা অজুহারে পণ্যের দাম বাড়িয়েই চলছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এর জেরে শুক্রবার গরুর মাংস, ছোলা, ব্রয়লার মুরগিসহ ২৯ নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয় সরকার।তবে রোববার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পণ্য নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। যেসব পণ্যের দাম কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছিল তা আগের বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে, আর যেসব পণ্যের দাম আগে থেকেই কম ছিল তা একই দামে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ভোক্তা পর্যায়ে ১৭৫ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা দরে বিক্রির কথা থাকলেও ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।বিক্রেতারা বলছেন, শনিবার তারা ১৮৫ টাকা দরে পাইকারি কিনেছেন, তাই তারা খুচরা ২১০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন।
মুগডাল ১৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রির কথা থাকলেও রোববার এই পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা দরে। খুচরা বাজারে ছোলার দাম ৯৮ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে।
এদিকে দুইটি মাছের দাম বেঁধে দেয় সরকার। চাষের পাঙাশ ১৮০ টাকা ও কাতলা ৩৫৩ টাকা দাম নির্ধারণ করে দেয়। তবে আগে থেকেই পাঙ্গাশ ১৬০-১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাতল মাছও আগে থেকে সাড়ে ৩শ দরে বিক্রি হচ্ছিল।
সরকার নির্ধারিত দাম নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ভোক্তাদের মধ্যে। পাঙ্গাশ মাছ কিনতে আসা এক ভোক্তা বলেন, কোথায় সরকার জিনিসের দাম কমাবে, তা না করে আরও বাড়াই দিচ্ছে। পাঙ্গাশ তো ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হইতো, সেইটা ১৮০ টাকা কেমনে নির্ধারণ করে বলেন।
বাজার করতে আসা আরেক ক্রেতা বলেন, সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দেয়, তা শুধু গণমাধ্যমেই দেখতে পাই, বাজারে এর বাস্তবায়ন তো দেখি না।এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামের কোনো নির্দেশনা তাদের কাছে পৌঁছায়নি। তাই তারা আগের দামেই পণ্য বিক্রি করছেন। তবে অনেক বিক্রেতার দাবি, নতুন দামে পাইকারি বাজার থেকে তারাও পণ্য কিনতে পারেননি। তাই বাড়তি দামেই তারা বিক্রি করছেন পণ্য।
রোববার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকার মুগ ডাইলের দাম ১৬৫ টাকা নির্ধারণ করলেও ১৭০-১৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মসুর ডাল (উন্নত) ১৩০ টাকা দরেই বিক্রি হলেও মসুর ডাল (মোটা) ১০৫ টাকার বিপরীতে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
সরকার কর্তৃক গরুর মাংসের দাম ৬৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে ৭৫০ টাকা দরেই বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। একই সাথে খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকা কেজি। যদিও সরকার খাসির মাংসের দাম নির্ধারণ করেছে ১০০৪ টাকা।
সরকার ডিমের হালি ৪০ টাকা নির্ধারণ করলেও বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ টাকা হালি। দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৬ টাকা নির্ধারণ করলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। দেশি রসুন ১২১ টাকা কেজির স্থলে ১৪০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। আমদানিকৃত আদার কেজি ১৮১ টাকার বিপরীতে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শুকনো মরিচের দাম ৩২৮ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা কেজি।
এ ব্যাপারে সিলেটের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. হুমায়ুন কবির দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ২৯ টি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া হয়েছে। সেই আলোকে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। এরমধ্যে কিছু পণ্যের দাম ঠিক রয়েছে। কয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা বেশী দেখা গেছে। আমরা বাজারে কাজ করছি দুয়েকদিনের মধ্যে নির্দিষ্ট দামেই পণ্য বিক্রি হবে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন থেকে গরুর মাংসের মূল্য ৭৫০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে। শীঘ্রই মেয়র মহোদয় ও সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তাদের সাথে বসে এ বিষয়ে কথা বলবো। এছাড়া মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই বৈঠকে সরকার নির্ধারিত পণ্যমূল্য কার্যকর নিয়ে বিস্তারিত পদক্ষেপ নেয়া হবে।