বিদ্যুতের ভেলকি শুরু
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মার্চ ২০২৪, ৪:০০:৩২ অপরাহ্ন
* সিলেটে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত লোডশেডিং * সহসা উন্নতির সম্ভাবনা নেই-বিদ্যুৎ বিভাগ
স্টাফ রিপোর্টার : গরমের দিন, রোজার মাস। এরই মধ্যে সিলেটজুড়ে বিদ্যুতের ভেলকি শুরু হয়েছে। সোমবার দিনভর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টানা ২ থেকে ৩ ঘন্টা ছিলনা বিদ্যুৎ। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক।এদিকে চাহিদামতো বিদ্যুৎ না পাওয়ায় সিলেটে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে খোদ বিদ্যুৎ বিভাগ। ইফতার ও সেহরির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার স্বার্থে সহসা এই লোডশেডিং থেকে মুক্তি মিলছেনা বলেও জানান তারা।
নগরে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কিছুটা সহনীয় থাকলেও গ্রাম পর্যায়ে এখনই ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দিনে দিনে গরমের তীব্রতা আরো বাড়বে। তখন পরিস্থিতি কি দাঁড়ায় তা নিয়ে শঙ্কায় গ্রামীণ জনপদের লাখ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহক। প্রান্তিক পর্যায়ে পিডিবি’র সরবরাহ কিছুটা ভালো হলেও পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ খুবই নাজুক বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সেচ মৌসুমকে কেন্দ্র করে বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমশই বাড়ছে। এরই মধ্যে হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সিলেটসহ দেশে বিদ্যুতের চাহিদা আরো বেড়েছে। কিন্তু ডলার ও কয়লা সঙ্কট জনিত কারণে উৎপাদন চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে না। ফলে ঘন ঘন এবং বর্ধিত লোডশেডিংয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছেন সিলেটের মানুষ।
সিলেট বিভাগীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড অফিস (পিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সিলেট বিভাগে ৪৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ হয়েছে ৩৫০ মেগাওয়াট। পুরো বিভাগে সোমবার দিনের বেলায় ১৩০ মেগাওয়াট অর্থাৎ ২৭ শতাংশ লোডশেডিং হয়েছে।
এদিকে সোমবার সিলেট জেলায় ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৭৫ মেগাওয়াট। জেলায় ৩৫ মেগাওয়াট অর্থাৎ ৩১ শতাংশ লোডশেডিং করতে হয়েছে।পিডিবি সূত্র জানায়, এবার রমজানে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুতের এ চাহিদা থাকবে। এ সময় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ধরা হয়েছে ন্যূনতম ১৫৪ কোটি ঘনফুট। অথচ গত সপ্তাহের রোববার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করা হয় মাত্র ৮৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস। এদিন মোট গ্যাস সরবরাহ ছিল ২৬৬ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ৬১ কোটি ঘনফুট পাওয়া গেছে এলএনজি থেকে। বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা দিনে ৪২০ কোটি ঘনফুট।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, একটি এলএনজি টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণের কাজে বন্ধ রয়েছে। এটি চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে চালু হতে পারে। তখন গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। সে সময় বিদ্যুৎ খাতে ১১০ থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।গত জানুয়ারির মাঝামাঝিতে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ করা হয়। বলা হচ্ছে, ২৫ মার্চ এটি চালু হবে। টার্মিনালটি চালু হলে গ্যাস সরবরাহ ৪০-৫০ কোটি ঘনফুট বাড়বে।
জানা গেছে, রমজানে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ফার্নেস অয়েলের চাহিদা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫০ টন এবং ডিজেলের চাহিদা ১৫ হাজার ৬০০ টন। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেন, দেশে বিদ্যুতের মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৪৮১ মেগাওয়াট। তবে ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে গ্যাসের উৎপাদনও কমছে। এর মধ্যে বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের ব্যবস্থাপনা এখনও দুর্বল। ফলে সক্ষমতার পরও চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে এ বছরও লোডশেডিং করেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এদিকে রমজানে সেহরি, ইফতার ও তারাবিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে ৫ মার্চ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সেহরি, ইফতার ও তারাবির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ জন্য ৬ টি বিতরণ সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ব্যবহৃত ফোন ও মোবাইল নম্বর এবং হটলাইন নম্বর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড অফিস (পিডিবি) এর প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদির দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, শুধু সিলেট নয়, সারাদেশেই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিং বাড়ছে। বিশেষ করে ইফতার, সেহরি ও তারাবীর সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে দিনের বেলায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়লে চলমান পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উন্নতির কোন সম্ভাবনা নেই। সোমবার বিভাগে ২৭ শতাংশ ও সিলেট জেলায় ৩১ শতাংশ লোডশেডিং হয়েছে।