চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মার্চ ২০২৪, ৯:৪০:১৯ অপরাহ্ন
দেশের সব হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ
জালালাবাদ রিপোর্ট : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে উপযোগী পরিবেশ পেয়ে মশার প্রজনন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে এ বছরও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।এ অবস্থায় ডেঙ্গুরোগীদের সময়মতো ও যথাযথ চিকিৎসাসেবা দিতে সারাদেশের সব হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে গতকাল জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
ডেঙ্গুর প্রজনন ও বিস্তার কীভাবে হয় সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রিভেনশন নেব প্রতি ওয়ার্ডে, মানুষকে সচেতন করা, মানুষকে বোঝানো যে ডেঙ্গু কীভাবে হয়।ডব্লিউএইচওর গ্রীষ্মম-লীয় রোগ বিভাগের বিশেষজ্ঞ ড. রমন ভেলাউধন বলেন, এবছরও বিশ্বজুড়ে বাড়তে পারে ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের সংখ্যা। বৃষ্টিবহুল ও উষ্ণ অঞ্চলগুলোতে অকল্পনীয় দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাসজনিত এই রোগ।
ইতিমধ্যে চলতি বছরের (২০২৪ সাল) প্রথম প্রান্তিকেই দেশে (জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস) ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৫০০ জন ছাড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে ২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।চলতি মাস শেষ হতে এখনও ১১ দিন বাকি। এর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। দেশে কোনো বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস) ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ রূপ আর কখনো দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ বছর ঢাকার থেকে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। ঢাকার তুলনায় ঢাকার বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২২ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি কর্তৃক পরিচালিত এডিসের লার্ভার যে পরিসংখ্যান প্রকাশ হয়েছিল তখনই অনুমান করা হয়েছিল ২০২৩ সালে ভয়াবহতার কথা। ২০২৩ সালে এডিস মশার সেই ঘনত্বই তা-বলীলা চালিয়ে কেন্দ্র ঢাকা হতে প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছে গেছে। ২০২৩ সালে প্রাপ্ত এডিস মশার মৌসুমি ঋতু আগে ও মৌসুমি ঋতুতে প্রাপ্ত লার্ভার ঘনত্ব বিগত বছরের প্রায় কয়েক গুণ। গতবছরের রেকর্ড বলছে, ২০২৪ সালেও কত বড় ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার অবকাঠামো, লোকবল এবং প্রশাসনিক তৎপরতার চেয়ে গ্রামীণ বা জেলা, উপজেলাগুলোয় ব্যবস্থাপনা দুর্বল। তাই অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আমাদের জাতীয় স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান যথাযর্থভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিটি স্থানে ভেক্টর সার্ভিল্যান্সের নিয়মিত তৎপরতার মাধ্যমেই নিতে হবে ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। যেখানে লার্ভিসাইড স্প্রে করা প্রয়োজন সেখানে নিয়ম করে লার্ভা ধ্বংস প্রক্রিয়া সক্রিয়ভাবে চালু রাখতে হবে। যেখানে এডান্টি সাইড প্রয়োগ করতে হবে সেখানে নিয়মিতভাবে সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে, সঠিক ডোজে যথাযথ তদারকির মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে। সেখানে মশারিসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন হবে, সেখানে তা অবশ্যই করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে অর্থাৎ গত বছর সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৭০৫ জনের মৃত্যুও হয়েছে ওই বছর।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৬৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ৫২৭ জন এবং ঢাকার বাহিরে ১ হাজার ৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০ জন।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ মার্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২০ জন। এর মধ্যে ঢাকা শহরে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ জন এবং ঢাকার বাহিরে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ জন।বিভাগ ভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ঢাকা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪৫ জন। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ৫৪৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন।এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৫৫ জন, বরিশাল বিভাগে ১৯০ জন, খুলনা বিভাগে ৯৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৮, রংপুর বিভাগে ১৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।
ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, রোগীরা যখন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় বা জ্বর হয় তারা যেন অতি দ্রুত হাসপাতালে আসেন। অনেক সময় দেখা যায় অনেক দেরিতে আসেন। তখন কিছু করা যায় না। এই মেসেজগুলো আমরা দিচ্ছি। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনার মতো ডেঙ্গু প্রতিরোধে এ বছর আমরা আগেভাগেই এই সমন্বয় সভার আয়োজন করেছি। আশা করছি, এ বছর সম্মিলিত ভাবে কাজ করে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুহার অনেক কমিয়ে আনতে পারবো।