মালয়েশিয়ায় আতিথিয়েতায় ইফতার আয়োজন
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মার্চ ২০২৪, ৯:০৮:০৫ অপরাহ্ন
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া: মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে মহিমান্বিত মাস হলো ‘রমজান মাস’। আর এ মাসের রহমতের ১০ দিন শেষে শুরু হয়েছে, মাগফেরাতের ১০ দিন। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় বিশ্বের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান নিজেদের পবিত্র রেখে পুরো মাস সিয়াম সাধনা করেন। মাহে রমজান ঘিরে মালয়েশিয়ায় প্রতি বছর থাকে বাহারি ইফতারের বিশেষ আয়োজন।
দেশটির সেলাঙ্গর-শাহ আলম, পেনাং, কোয়ান্তান, মেলাকা, জোহর, পিনাং ও রাজধানী কুয়ালালামপুরসহ প্রতিটি রাজ্যে চলে ইফতার মেলা। মারদেকা মাঠেও করা হয় ইফতারের বিশেষ আয়োজন। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারিভাবে আয়োজন করা হয় ফ্রি ইফতারের। ধনী-গরিব সবাই একসঙ্গে বসে ফ্রি ইফতার করেন। এ যেন আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার বড় আয়োজন।
স্থানীয়রা ইফতার করেন বিভিন্ন ধরনের হাতে বানানো পিঠা, হালুয়া জাতীয় নাশতা, সাদা ভাত, ফলমূলসহ মালয়েশিয়ান খাবার দিয়ে। সঙ্গে থাকে আম, তরমুজ, বাঙ্গি, কলা, পেঁপে, আপেল, আঙুর, কমলাসহ নানা রকম মালয়েশিয়ান ফল। এ মাসে বেশ অতিথি পরায়ণ হয়ে ওঠে মালয়েশিয়ানরা।
রমজানে মুসলমানদের দিনে প্রকাশ্যে খাওয়া মালয়েশিয়ার আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। প্রতিবছর এ অপরাধে আটক হন অনেকে। এ ছাড়া পুরো রমজানে সরকারি নজরদারিতে জিনিসপত্রের দাম অন্যান্য সময়ের থেকে কম রাখা হয়। এ মাসে মসজিদগুলোয় প্রতি ওয়াক্ত নামাজে মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে যায়। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও নামাজ আদায় করতে মসজিদে যান। নামাজের পরে কোরআন থেকে তেলাওয়াত করতে পছন্দ করেন মালয়েশিয়ানরা। মসজিদে মসজিদে ইফতারিতে বিনামূল্যে শরবত ও বুবুর বা নরম খিচুড়ির ব্যবস্থা থাকে।
রমজানে মালয়েশিয়াতে সরকারি অফিস, আদালত স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় ছুটি হয়। ক্রেতাদের জন্য আকর্ষণীয় ছাড় ঘোষণা করে শপিংমলগুলো। রোজার দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়ে যায় কেনাকাটার ধুম।
বাঙালিয়ানা আতিথিয়েতায় প্রবাসীদের ইফতার:
শত কষ্ট থাকা সত্ত্বেও সবার মুখে আনন্দ উছলে ওঠে। রমজান যেন এই সুখ বার্তাই নিয়ে আসে। দেশীয় খাবার ছাড়া ভিনদেশি খাবারে ইফতার জমে না বাঙালিদের। সুদূর প্রবাসে থেকেও তাই তৃপ্তি মেটাতে ইফতারে বাঙালি খাবার-ই তাদের প্রথম পছন্দ। প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত কোতারায়াতে রাস্তায় জমতো বিশাল জামায়াত। চিরচেনা কোতারায়ায় এখন আর নেই প্রবাসীদের জমাট আড্ডা। অভিবাসন বিভাগের ব্যাপক ধরপাকড়ের কারণে জনশূন্য হয়ে পড়েছে কোতারায়া।
মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা সারাদিন কঠিন কাজ করার পরও রোজা রাখছেন। সিয়াম পালন করার পর প্রবাসীরা হোটেল রেস্তোরাঁয়, কাজের সাইডে বা বাসায় চলে বাঙালিয়ানা আতিথিয়েতায় ইফতারের আয়োজন।
ইফতারের সময় বাংলাদেশিরা যারা যেখানেই থাকেন-কাজ করেন, সেখানেই বিভিন্ন প্রকারের হাতে বানানো পিঠা, হালুয়া, সাদা ভাত, বিরিয়ানি, ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, মরিচা, আলুচপ, জিলাপি, হালিম, খেঁজুর, আম, তরমুজ, কলা, পেপে, আপেল, আঙ্গুর, অরেঞ্জ ও মালয়েশিয়ানসহ বিবিধ খাবার দিয়ে একসঙ্গে ইফতার করেন। তাই বাংলাদেশিদের আয়োজনটা বড় হয়। বাঙালিদের ইফতারির বিশাল আয়োজন দেখে মালয়েশিয়ানরা অভিভূত।
বৃহম্পতিবার ইফতারের আগে কথা হয় মঈনুল ইসলাম নামে এক প্রবাসীর সঙ্গে। মঈনুল বললেন, ইফতার সামনে নিয়ে বসতেই দেশে থাকা বাবা-মা, ভাই-বোনসহ পরিবারের সবার কথা স্মরণ হয়ে যায়। প্রবাসে রোজার ইফতার করলেও মন পড়ে থাকে দেশে। পরিবারের সবাই কি দিয়ে ইফতার করছেন, দেশে থাকতে ঠিক এ সময় বাবা বাইরে থেকে কত কিছু নিয়ে আসতেন, মা অনেক যত্ন করে ইফতার পরিবেশন করাতেন; এগুলো মনে পড়ে। এখন প্রবাসে ইফতার নিয়ে বসে খুঁজে বেড়াই তাদের। মা-বাবা, ভাই-বোনকে আমি অনেক মিস করছি।