চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে বেড়েছে ব্যাংক ঋণ
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মার্চ ২০২৪, ৯:৩৭:৫১ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : দেশে দিন দিন চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে মানুষের ওপর আর্থিক চাপও বাড়ছে। এই আর্থিক চাপ সামাল দিতে দিন দিন ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণও বাড়ছে। পাশাপাশি শিক্ষা খাতেও ব্যাংক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে চিকিৎসা খাতে ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ২৫৪ কোটি টাকা বা ৬৩৫ শতাংশ। আর শিক্ষায় ব্যাংকগুলোর দেয়া ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৭৩৮ কোটি টাকা বা ১০৩ শতাংশের বেশি।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিকিৎসা-সংক্রান্ত পণ্য ও সেবার দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্য ব্যয় বেড়েছে। তাছাড়া কভিড-পরবর্তী সময়ে উদ্ভূত বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় চিকিৎসার বাড়তি চাহিদাও এ খাতের ব্যয় উসকে দিয়েছে। এসব ব্যয় সামাল দিতে অনেকে ব্যাংক ঋণ নিচ্ছে। দিন দিন এই চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে চিকিৎসা খাতে ব্যাংক ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। এছাড়া ক্যানসার ও কিডনি রোগ আগের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ এসব চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেকে শেষ সম্বল ভিটা বা জমি বিক্রি করেন। এরপরই ব্যাংকের দ্বারস্থ হন। ফলে এ খাতে আগের তুলনায় কয়েকগুণ ব্যাংক ঋণ বেড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে চিকিৎসার জন্য ১ হাজার ৪৭০টি হিসাবে দেয়া ব্যাংকগুলোর ভোক্তা ঋণের পরিমাণ ছিল ২৯৪ কোটি টাকা, যা তার আগের বছরের একই প্রান্তিকে ছিল মাত্র ৪০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে চিকিৎসা খাতে ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ২৫৪ কোটি টাকা বা ৬৩৫ শতাংশ। আর তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে চিকিৎসা খাতে ঋণের পরিমাণ ছিল ২২১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, স্বাস্থ্য খাতে ক্রমবর্ধমান বাড়তি ব্যয় দেশের পরিবারগুলোকে কঠিন সিদ্ধান্তে ফেলে দিয়েছে। গত কয়েক বছরে চিকিৎসা খাতে ব্যয় বেড়েছে ২০২ শতাংশ।গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিত বিবিএস জরিপের তথ্য বলছে, স্বাস্থ্য পরিষেবায় গড়ে মাসিক পারিবারিক ব্যয় ২০১৭ সালের ৭০০ টাকা থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ২ হাজার ১১৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। মোট ব্যয়ের মধ্যে স্বাস্থ্য ব্যয়ের অংশ ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯১ শতাংশে।
বিবিএসের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোগীপ্রতি বাংলাদেশে চিকিৎসায় গড়ে ১ হাজার ৩৭৭ টাকা করে ব্যয় হচ্ছে। এর মধ্যে ডাক্তারের ভিজিটে ১৪২ টাকা, ওষুধে ৭৪৯ টাকা, টেস্টের ফি বাবদ ৩৭৯ টাকা এবং পরিবহনে ১০৭ টাকা করে ব্যয় করছেন রোগীরা।
ওষুধ কিনতে চিকিৎসার মোট ব্যয়ের অর্ধেকের বেশি খরচ হলেও বিনা খরচে সরকারি ব্যবস্থা এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ওষুধ পাওয়ার সুযোগ কমে গেছে। ফলে আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ ফার্মেসি ও ডিসপেনসারি থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ কমে আসায় বেসরকারি ক্লিনিক এবং হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। ২০১৫ সালে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ মানুষ বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিত, ২০২২ সালে তা বেড়ে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে, শিক্ষার জন্য দেয়া ব্যাংকগুলোর ভোক্তা ঋণের পরিমাণও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ৫ হাজার ২৩৮টি হিসাবের বিপরীতে ব্যাংকগুলো শিক্ষা খাতে ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা, যা তার আগের বছরের একই প্রান্তিক শেষে ছিল ৭১৬ কোটি। এক বছরের ব্যবধানে শিক্ষায় ব্যাংকগুলোর দেয়া ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১০৩ শতাংশের বেশি। আর তিন মাসে বেড়েছে ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর শিক্ষা খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৪০ কোটি টাকা।
দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে। কোনো কোনো ব্যাংক শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য ঋণ সুবিধা দেয়। কেউ আবার ঋণ দেয় উচ্চশিক্ষার জন্য, যারা বিদেশ যেতে চায় তাদের। শিক্ষা ঋণের আকার ৫০ হাজার থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটাও এক ধরনের ভোক্তা ঋণ।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষা বা শিক্ষার্থীদের জন্য দেয়া ব্যাংক ঋণের বড় অংশ নিয়ে থাকেন দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকের আয় ও লেনদেনের তথ্য যাচাই করে তবেই ব্যাংকগুলো এই ঋণ দেয়। বর্তমানে দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এ ধরনের ঋণের চাহিদা বাড়ছে।
এ ব্যাপারে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষার জন্য ঋণ দেয়াকে ব্যাংকগুলো তুলনামূলক বেশি নিরাপদ মনে করে। বর্তমানে দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এ ধরনের ঋণের চাহিদা বাড়ছে।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো নানা নামে বিভিন্ন ধরনের ঋণ দিয়ে থাকে। যেমন- ব্যক্তিগত ঋণ, ভ্রমণ ঋণ, পড়াশোনার ঋণ, চিকিৎসক ঋণ, বিবাহ ঋণ, গাড়ি কেনার ঋণ, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট কেনার ঋণ প্রভৃতি। এ সবগুলোই ভোক্তা ঋণের আওতায় পড়ে। এর বাইরে ব্যবসার জন্য নানা ধরনের ঋণ, এসএমই ঋণ, কৃষি ঋণ, শিল্প-কারখানার জন্য ঋণ প্রভৃতি রয়েছে।