বিশ্ব যক্ষা দিবস আজ :যক্ষা নির্মূলে দেশ পিছিয়ে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মার্চ ২০২৪, ৪:০০:২৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্ব যক্ষা দিবস আজ। প্রতিবছরের মতো এবারো ঘুরেফিলে এসেছে দিবসটি। কিন্তু এখনো যক্ষা দেশে একটি দুশ্চিন্তার নাম।জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কৌশলপত্র অনুযায়ী, আগামী দুই বছরের মধ্যে বছরে যক্ষ্মায় মৃত্যু ১৮ হাজারে নামাতে হবে। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে দেশ এখনো বেশ পিছিয়ে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মায় মৃত্যু ৭৫ শতাংশ (২০১৫ সালের তুলনায়) কমাতে হবে। ২০১৫ সালে যক্ষ্মায় মৃত্যু ছিল ৭৩ হাজার। সে হিসেবে আগামী দুই বছরের মধ্যে বছরে যক্ষ্মায় মৃত্যু ১৮ হাজারে নামাতে হবে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা থেকেই বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে। আর ২০২৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা সংক্রমণ ৫০ শতাংশ (২০১৫ সালের তুলনায়) কমাতে হবে।
জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে যক্ষ্মায় সংক্রমণ ও মৃত্যু ৯৫ শতাংশ কমাতে হবে। কিন্তু যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে, তাতে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, সিলেটে চা-বাগানের বাসিন্দাদের মধ্যে যক্ষ্মা হওয়ার ঝুঁকি বেশি। চা-বাগানের জনগোষ্ঠীর প্রায় ১০ শতাংশ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকেরা বলেন, চা-বাগান এলাকাগুলোতে অপুষ্টিতে ভোগা লোকজনের হার তুলনামূলক বেশি। তাই চা-বাগানের বাসিন্দাদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে, নেওয়া হচ্ছে বিশেষ কর্মসূচি।এর বাইরে সিলেটে শিশুদের মধ্যেও সংক্রমিত হচ্ছে যক্ষ্মা। সিলেট জেলায় গত বছর ১৫ বছরের নিচের শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে গত বছর জেলায় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭ হাজার ৬৮০ জন। এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হবে।
চিকিৎসকেরা জানান, যক্ষ্মা যে শুধু দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়ায়, সেটি ভুল ধারণা। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে যক্ষ্মার ঝুঁকি বাড়ে। রোগ কিংবা দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুসেও আক্রমণ করতে পারে যক্ষ্মার জীবাণু। এ রোগ সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে ছড়ায় এবং দেহে প্রবেশ করে প্রথমে ফুসফুসে আশ্রয় নেয়। যক্ষ্মায় আক্রান্ত সব রোগীর কাছ থেকেই জীবাণু ছড়ায় না। যাদের থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তাদের হাঁচি-কাশি, এমনকি কথা বলার সময়ও বাতাসে যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ায়। গর্ভবতী নারী, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, ক্যানসার ও এইচআইভি আক্রান্ত মানুষও রয়েছেন ঝুঁকিতে। ঝুঁকির তালিকায় আছেন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরাও।
যক্ষ্মার উপসর্গগুলো হলো দীর্ঘমেয়াদি কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, ওজন হ্রাস, জ্বর এবং রাতে ঘাম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন।বাংলাদেশে ১৯৬৫ সালে প্রথম জাতীয় যক্ষ্মা কর্মসূচি নেওয়া হয়। ১৯৮০ থেকে ৮৬ সাল পর্যন্ত যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শক্তিশালীকরণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সরকার। ২০১১ সালে এসে সরকার যক্ষ্মাকে আরও গুরুত্ব দিতে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কৌশল সংশোধন করে। ২০২১ সালে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে কার্যকরভাবে যক্ষ্মা মোকাবিলায় দ্রুত রোগী শনাক্ত করা প্রয়োজন। চিহ্নিত রোগীদের চিকিৎসার ফলোআপ, কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের যক্ষ্মাবিষয়ক প্রশিক্ষণের দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।