আজ মহান স্বাধীনতা দিবস : স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাংলাদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:৪৫:৩৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। বাংলাদেশের মানুষের গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের উজ্জ্বল দিন। প্রাণের স্বাধীন বাংলাদেশ আজ ৫৩ পূর্ণ করে ৫৪-তে পা দিলো।
৫৩ বছর পূর্ণ একটি জাতির জীবনে দীর্ঘ সময় যেমন নয়, তেমনি খুব কম সময়ও নয়। বাংলাদেশ ভূখ-ের আকারে ছোট হতে পারে, কিন্তু জনসংখ্যার বিচারে ছোট কোনো দেশ নয়। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ৫৩ বছর পূর্তির দিনটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য আজকের দিনটি যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ, তেমনি আত্মজিজ্ঞাসারও। অর্ধশত বছর পেরিয়ে স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা কতটুকু হচ্ছে-এমন প্রশ্নও এ সময়ে সামনে আসছে। বিরোধীদলগুলো সাম্প্রতিকবছরগুলোতে অভিযোগ করে আসছে যে, দেশের মানুষ গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ভোটাধিকারহারা। জনগণ ভোট দিতে পারছেন না। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এখনো জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
এ অবস্থায় সারা দেশের মানুষ ও প্রবাসী বাংলাদেশীরা আজ দিনটি পালন করবে বিপুল আনন্দ-উৎসব এবং একই সঙ্গে বেদনা নিয়ে। দেশের স্বাধীনতার জন্য যে অকুতোভয় বীর সন্তানেরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, কৃতজ্ঞ জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে সেই মৃত্যুঞ্জয়ী বীর সন্তানদের।
পাকিস্তানি হানাদার সেনারা যে বর্বর গণহত্যা চালিয়েছিল, সেই মৃত্যুর বিভীষিকা থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল দেশের মুক্তিপাগল বীর সন্তানরা। অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রশিক্ষণহীন নিরস্ত্র বাঙালি যেভাবে একটি সুশৃঙ্খল অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, পৃথিবীর ইতিহাসে তেমন সংগ্রামের দৃষ্টান্ত বিরল।
স্বাধীনতার জন্য বাঙালিকে দীর্ঘ সংগ্রামদীপ্ত পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়েছিল, সেখানেও বাঙালিদের ওপর নেমে এসেছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ, নির্যাতন। প্রথম আঘাত এসেছিল মাতৃভাষার ওপর। ১৯৫২ সালে বুকের রক্তে রাজপথ রাঙিয়ে বাংলা মায়ের সন্তানেরা মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন বিশ্বে। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে স্বাধীকার চেতনার স্ফুরণ ঘটেছিল, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কালক্রমে তা স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলেন। তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো জনতার সামনে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে শত্রুদের মোকাবিলার জন্য যার কাছে যা আছে তা-ই নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলেন। তিনি বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। এরপর ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে একাত্তরের এই দিন যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ, দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিন আজ।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিলো আরো অনেক আগে। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীনতার শ্লোগান ধরেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী। ১৯৬৯-এর অক্টোবরে শাহপুরে, ১৯৭০-এর জানুয়ারিতে সন্তোষে এবং একই সনের এপ্রিলে মহিপুরে কৃষক সম্মেলনে মাওলানা ভাসানী বললেন, ‘আমাদের ভাগ্য আমাদেরই গড়ে নিতে হবে। পিন্ডির গোলামি ছিন্ন করতে হবে।’ ১৯৭০-এর ১২ নভেম্বরের বঙ্গোপসাগরীয় সাইক্লোনের প্রেক্ষাপটে মহান নেতা আবার আঙুল উঁচিয়ে জাতিকে দিকনির্দেশনা দিলেন। আর কোনো পরোক্ষ ভাষা নয়, ‘স্বাধিকার স্বায়ত্তশাসন নয়, চাই স্বাধীনতা।’
স্বাধিকারের সেই দাবীর সূত্র ধরে ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বাংলার মানুষের ভোটে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামীলীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার আড়ালে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহার কারণে বাংলার মুক্তিকামী মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ২৫ মার্চ কালোরাত্রিতে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
মধ্যরাতেই অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়ি (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ভবন) থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিকটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।
চট্টগ্রামে অবস্থানকারী আওয়ামীলীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার বাণী সেই রাতেই সাইক্লোস্টাইল করে শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন। পরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
ঘোষণার পর রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে পরাভূত হয় পাকিস্তান। তবে শহীদ হন লাখ লাখ মানুষ, আর ইজ্জত হারান লাখো মা-বোন। তাদের অসীম ত্যাগের বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্রে রচিত হয় লাল সবুজের এক দেশ, বাংলাদেশ।
আজ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই সোনালী মুহূর্তে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে অগ্রগতির কোনও অন্ত হয় না। দেশের অগ্রগতির সঙ্গে মূল্যবোধ, চিন্তাধারারও অগ্রগতি জরুরী। সেই সূত্র ধরেই তাই বলতে হয় যে, আমাদের স্বাধীনতারও অগ্রগতি জরুরী।