সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধ শেষ হয়নি : শঙ্কায় কৃষক হাওর বাঁচাও আন্দোলনের প্রেস কনফারেন্স
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মার্চ ২০২৪, ৯:৫২:৪৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ধীরে ধীরে ঘনিয়ে আসছে সময়। কষ্টের সোনালী ধান ঘরে তুলতে মুখিয়ে আছে কৃষক। কিন্তু সময় শেষ হওয়ার ১৫ দিনেও ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় শঙ্কিত কৃষক সমাজ। পানি উন্নয়ন বোর্ড শতভাগ কাজ শেষের দাবী করলেও হাওর বাচাঁও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের দাবী ৭৫ ভাগের বেশী কাজ হয়নি। আর এবারের কাজ অনেক দুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ বলেও জানান তারা।এ নিয়ে সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে ফসল রক্ষা বাঁধের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন হাওর বাচাও আন্দোলনের নেতারা।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এবার বরাদ্দ ছিল বেশি। আবহাওয়াও ছিল তুলনামূলক অনুকূলে। কিন্তু তারপরও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি বাঁধের নির্মাণকাজ। যতটুকু কাজ হয়েছে, তার মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। অনেক বাঁধেই করা হয়নি দুরমুশের কাজ। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দাবি, এখন পর্যন্ত ৯৮ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।এদিকে বড় কোনো দুর্যোগ এলে একটি বাঁধও টিকবে না বলে মনে করছেন কৃষক ও হাওর আন্দোলনের নেতারা। এখনো বাঁধের ২৫ ভাগ কাজ বাকি বলে তাঁদের অভিযোগ।
পাউবোর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুনামগঞ্জের ৯৫টি হাওরের মধ্যে ৪০টিতে এবার ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে ৭৩৪টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩০ কোটি টাকা। গত ১৫ ডিসেম্বর শুরু হয়ে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি। তবে ৭ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হলেও কাজ শেষ হয়নি।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর, দিরাই ও ধর্মপাশা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক ও হাওর আন্দোলনের নেতারা জানান, অধিকাংশ ফসল রক্ষা বাঁধের মাটির কাজ শেষ। তবে দুরমুশের কাজ হয়নি। বাঁধের ধারে লাগানো হয়নি ঘাসও।
জামালগঞ্জের হালির হাওরের ২৬ নম্বর পিআইসির ঘনিয়ার বিলের ক্লোজারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ একটি বাঁধ। ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই বাঁধের কাজ শেষ হলেও ঝুঁকিতে ছিল হাওরের ভেতরের দিকের বাঁধসংলগ্ন গভীর গর্তটি। পরে কৃষকের চাপে পাউবো গর্তটি ভরাটে উদ্যোগ নেয়। তবে নামমাত্র মাটি ফেলে কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
জামালগঞ্জ পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জনি বলেন, ‘হালির হাওরের ঘনিয়ার বিলের ক্লোজার ও শনি হাওরের নান্টুখালী ক্লোজারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা নজরদারিতে রেখেছি।’
এদিকে যাচ্ছেতাইভাবে বাঁধের কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়।তিনি বলেন, ‘এবারের বাঁধের কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ড গোপনেই শেষ করতেছে। যার কারণ, তারা ৭ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে পারেনি। তাদের দাবি ৯৮ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে, কিন্তু আমরা মাঠে গিয়ে দেখেছি, এখনো ২৫ শতাংশ বাঁধের কাজ বাকি।’ তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ের তুলনায় এবার আবহাওয়া ভালো থাকলেও গাফিলতির কারণে অতিরিক্ত সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ করা যায়নি।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আমাদের বাঁধের কাজ সমাপ্ত, ৯৮ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সেসব বাঁধে ঘাস লাগানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের চাপ দিচ্ছি, নজরদারির মধ্যে রাখছি। তা ছাড়া কিস্তির টাকা পাচ্ছেন না বলে যারা দাবি করেছেন, তাদের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের বরাদ্দের বাকি টাকা দেওয়া হবে।তিনি বলেন, বাঁেধর কাজ প্রায় শতভাগ শেষ। কিছু বাঁধে শুধু দুর্মুজ করা ও ঘাস লাগানো বাকী। সাম্প্রতিক বৃষ্টির পর আমরা মাঠ পরিদর্শন করেছি বাঁধের কোন ক্ষতি হয়নি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাংবাদিক সম্মেলন :
পাউবো’র বাঁধের কাজ শতভাগ শেষের দাবি প্রত্যাখ্যান করে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুরে শহরের মুক্তারপাড়া এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বোরো মৌসুমে ফসলের সুরক্ষায় হাওরে ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দে ৭৩৩ টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী অর্থবছরের ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের কাজ শুরু ও ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু সর্বশেষ মার্চ মাসেও কিছু কিছু বাঁধের কাজ শুরু করা হয়েছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরা। ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারিতে বাঁধের কাজ শেষ হলে বাঁধ আগাম বন্যার চাপ সামলাতে সক্ষম হবে। কিন্তু মার্চ মাসে যেসব বাঁধে কাজ শুরু হয়েছে, তা ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
সরকারের বেঁধে দেওয়া ২৮ ফেব্রুয়ারি কোন বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। আমাদের জরিপে আমরা দেখেছি সে সময় ৩০-৩৫ ভাগ কাজ হয়েছে। এরপর পাউবো ও প্রশাসন গোপনে ৭ মার্চ পর্যন্ত সময় বর্ধিত করেন। সে সময়েও কাজ শেষ হয়নি। পাউবো সে সময় ৮৪ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে দাবি করলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। আমাদের হিসেবে ৭ মার্চ পর্যন্ত ৬০ ভাগ কাজ হয়েছে। ২২ মার্চ শুক্রবার পাউবো জানায়, হাওরে শত ভাগ কাজ হয়েছে বলা যায় না, আজ পর্যন্ত ৯৮ ভাগ কাজ হয়েছে। সেটাই শতভাগ। আমরা এ রিপোর্টও প্রত্যাখ্যান করছি। ২২ মার্চ আমাদের বিভিন্ন উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দকে হাওরে পাঠিয়ে আমরা দেখেছি অনেক বাঁধে মাটির কাজ হচ্ছে। অধিকাংশ বাঁধেই ঘাস লাগানো ও দুরমুজ করা হয়নি। তাহলে কিভাবে পাউবো বলছে বাঁধের কাজ শেষ তা আমাদের বোধগম্য নয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি অ্যাড. স্বপন কুমার দাস রায়, কেন্দ্রীয় হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনের সহ-সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক একে কুদরতপাশা, দপ্তর সম্পাদক দুলাল মিয়া, সদস্য রমেন্দ্র কুমার দে, হাওর বাঁচাও আন্দোলন জেলা শাখার সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল, সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদ নুর আহমদ, বাঁধ বিষয়ক সম্পাদক রাজু আহমদ, প্রচার সম্পাদক আনোয়ারুল হক প্রমুখ।