পেঁয়াজের ঝাঁজ ফের বাড়ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মার্চ ২০২৪, ৯:৫৬:১৬ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে-বিষয়টি তেমন নয়। সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া ছিল, শুধু বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়েছে দেশটি। গত ডিসেম্বরে অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটানো ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করেছিল ভারত। এই নিষেধাজ্ঞা ৩১ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল, এখন সে সময় আরও বাড়ানো হয়েছে। প্রতিবেশী দেশটি রফতানি বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়েছে-এই খবরেই দেশের অসাধু পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আবারও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এক দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা, আর খুচরা বাজারে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। নতুন করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
রোজা শুরুর আগে দেশের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এর পর দেশে নতুন পেঁয়াজে ভরপুর এবং গত ১৫ মার্চ সরকার উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেঁধে দেওয়ার পর পেঁয়াজের দাম বেশ কমে আসে। কয়েক ধাপে ৮০ টাকা থেকে ৬০ টাকা এবং একপর্যায়ে ৫৫ টাকা কেজিতেও নেমে আসে পেঁয়াজ গত সপ্তাহে। বাজারে দিন তিনেক কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারেন ক্রেতারা। এর পর থেকেই আবার বাড়তে শুরু করে দাম, গতকাল আরেক দফা বেড়ে আবার খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকায় ঠেকেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক সময় সরকারের তরফ থেকে এবং ব্যবসায়ীদের তরফ থেকেও বলা হয়, বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই। তা হলে এই যে, এক দিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বাড়িয়ে দিল পেঁয়াজের-এটা বাজার সিন্ডিকেট নয় তো কি।
এমন কথা বলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আমরা সবসময় বলে আসছি হঠাৎ হঠাৎ পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায় বাজার সিন্ডিকেটের কারণে। অথচ আমাদের কথাকে আমলে নেওয়া হয় না। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সময় বাড়িয়েছে-এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। এর সঙ্গে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির তো কোনো সম্পর্ক নেই। তা হলে বাড়ল কেন; বাড়ল পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের কারণে। বাজারের এই সিন্ডিকেট যতদিন না ভাঙ্গা যাবে ততদিন পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না।
রোববার নগরীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সব বাজারেই নতুন করে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। কাজিরবাজার ও কালিঘাট বাজার সূত্রে জানা গেছে, এখানে এক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা। বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, আগের দিন শনিবারও আমরা এই পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায় বিক্রি করেছি। অথচ রোববার বিক্রি করছি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।
দাম বাড়ল কেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো কারণ নেই। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে-এই খবর জানার পরই দাম বেড়ে গেছে। পাবনা, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ এলাকার মোকামেও দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে সব বাজারেই। ভারত থেকে এলসির পেঁয়াজ দ্রুত না আসলে দুয়েক দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে।
নগরীর কালিঘাটের এক ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে কিন্তু পেঁয়াজের কোনো অভাব নেই। তবুও দাম বাড়ল শুধু ভারত রফতানি বন্ধ করেছে-এই খবর জানার পর। আমার মনে হয়, দাম কমে আসবে। কারণ দেশে এখন নতুন পেঁয়াজে ভরপুর।
পাইকারি বাজারের প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। এক দিন আগে শনিবারও ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। আর রোববার বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা কবীর হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ আনতে গিয়ে আমি নিজেই অবাক হয়েছি। এক দিন আগে পাইকারি বাজার থেকে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকায় কিনেছি। অথচ রোববার কিনতে হয়েছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়। আনা-নেওয়া খরচসহ আমাদের প্রতি কেজিতে খরচ পড়ে যাচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা। আমি বিক্রি করছি ৭০ থেকে ৭৫ টকায়।