ঈদ বাজার ঘিরে ছিনতাই দৌরাত্ম্য : র্যাবের জালে ১২ জন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ মার্চ ২০২৪, ৮:২৬:২০ অপরাহ্ন
এ টি এম তুরাব :
আসন্ন ঈদুল ফিতরকে টার্গেট করে পর্যটন নগরী সিলেটে ছিনতাই বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিনব কায়দায় ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন সড়কে। ফলে জনমনে বেড়েছে আতঙ্ক। রাস্তাঘাটে নিরাপদে চলতে পারছেন না পথচারীরা। ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে হারাচ্ছেন টাকা, মোবাইলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এসব ঘটনার সাথে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের যোগসাজেস রয়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এ অবস্থায় কঠোর হচ্ছে র্যাপিড এ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯)। নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১২ জন পেশাদার ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ার, চাকু, এন্টিকাটার, কাঁচি, বেøড, মোবাইল, নগদ টাকা ও একটি সিএনজি অটোরিকশা জব্দ করা হয়।
বুধবার বিকেল ৫টায় র্যাব-৯ এর সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছেন অধিনায়ক উইং কামান্ডার মো. মোমিনুল হক (জিডি-পি)।
গ্রেফতারকৃত ছিনতাইকারীরা হলো- সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেরে আব্দুর হালিম (৬০), একই উপজেলার টেকারঘাট গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে জীবন আহমেদ, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার গুলগাঁও গ্রামের মৃত আফাজ উদ্দিনের ছেলে আল ইসলাম, ধর্মপাশা উপজেলার শান্তিপুর গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে বর্তমান মীরাবাজারের বাসিন্দা উজ্জ্বল মিয়া, মাধবপুর উপজেলার বাঘানুরা গ্রামের মৃত কুদ্দুস মিয়ার ছেলে রুয়েল (২৫), ছাতক ইসলামপুর গ্রামের মৃত সোহরাব আলীর ছেলে সোহেল আহমেদ (৩৯), নগরীর চৌকিদিঘির মস্তর আলীর ছেলে ছালিম চৌধুরী, তাহিরপুর উপজেলার পূর্ব নিশ্চিতপুরের মৃত ছিদ্দিক আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম (৩৫), ধর্মপাশা উপজেলার রাজাপাশা গ্রামের মৃত ফজর আলীর ছেলেজহুর বাদশা (৩২), নগরীর ছড়ারপারের ময়না মিয়ার ছেলে মো. জিহাদ আহমেদ, গোলাপগঞ্জ উপজেলা লক্ষীপাশার মৃত ফরিদ মিয়ার ছেলে বাবুল (২৫), পঞ্চগড় জেলার কোন্দের আলী এলাকার কালা মিয়ার ছেলে জাকির ওরফে ইমন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরে কোথাও না কোথাও প্রতিদিন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে পথচারী, অটোরিকশা যাত্রী ও সাধারণ মানুষ মানুষ। পথ আগলে যাত্রীর সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ছিনতাইকারীরা।
নগরের ছিনতাইয়ের স্পট কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন- সবচেয়ে বেশি ছিনতাই হচ্ছে মধ্যরাত থেকে সকাল ৮টার মধ্যে। ছিনতাইকারীরা ওই সময়কে টার্গেট করে রাস্তায় অবস্থান নেয় এবং ছিনতাই করছে। রমজানের শুরু থেকেই ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। সিলেট নগরীর বন্দরবাজার ও দক্ষিণ সুরমা। এই দুই এলাকায় আছে পুলিশ ফাঁড়ি। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও বন্দরবাজার এলাকায় রয়েছে একাধিক ছিনতাইকারী গ্রæপ। বিগত সময়ে দুটি এলাকায় কয়েক মাস আগে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হন কয়েকজন। এক্ষেত্রে ফাঁড়ি পুলিশ সদস্যদের দায়ী করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, ফাঁড়ি পুলিশের আইসি এবং কয়েক সদস্য ঘুরেফিরে দীর্ঘদিন ধরে একই ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালন করছেন। এ কারণে তাদের সঙ্গে অপরাধীদের সখ্যতা রয়েছে। ফলে ফাঁড়ির অদূরেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এতে করে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
হুমায়ূন রশীদ চত্বর, কদমতলী এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- কদমতলী বাস টার্মিনাল ও প্রবেশমুখ হুমায়ূন রশীদ চত্বরে কয়েকটি ছিনতাই পার্টি রয়েছে। এসব ছিনতাই পার্টির সঙ্গে ফাঁড়ি পুলিশের সখ্যতা রয়েছে। এ কারণে গত কয়েকদিনে একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ সুরমার পরেই হচ্ছে নগরের উত্তর অংশের উপশহর গলিরমুখ, সুবহানীঘাট, ধোপাদিঘীরপার, মীরাবাজার এলাকায় ছিনতাইকারীদের সিন্ডিকেট রয়েছে। এরা হচ্ছে নগরের কাস্টঘর কেন্দ্রিক ছিনতাইকারী চক্র। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান খুনের ঘটনার পর ওই এলাকায় ছিনতাইসহ নানা ঘটনা কমে গিয়েছিলো। পুলিশি শেল্টারে থাকা অপরাধীরা গা-ঢাকা দিয়েছিলো। কিন্তু সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় ফের আলোচনায় এসেছে ওই এলাকার ছিনতাইকারীরা।
স্থানীয় সবজি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- সবজির খুচরা বিক্রেতা সেহরি খেয়েই বাজারমুখী হন। তারা সকালের মধ্যে মালামাল সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য নিয়ে যান। এতে করে নগদ টাকাও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থাকে। সম্প্রতি ধোপাদিঘীরপাড়, সুবহানীঘাট পাম্পের সামনে এলাকায় ছিনতাইকারীরা অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এছাড়া নগরের ক্বীন ব্রিজ এলাকায় রয়েছে ভাসমান ছিনতাই চক্র। ভোররাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা যাত্রীদের টার্গেট করে তারা। কীনব্রিজ, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, কোর্টপয়েন্ট, তালতলা এলাকায় তারা অবস্থান করে। কয়েকজন ব্যবসায়ী ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে।