দেশে উদ্বেগজনক দূষণ, পরিবেশগত স্বাস্থ্য ঝুঁকি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ মার্চ ২০২৪, ৩:৩৭:৩৩ অপরাহ্ন
*২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যু*
*বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দূষণের ভয়াবহ চিত্র*
জালালাবাদ রিপোর্ট : বায়ুদূষণসহ চার ধরনের দূষণে বাংলাদেশে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় বায়ুদূষণের কারণে। এ ছাড়া দূষণের কারণে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে দূষণের ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যুর এ চিত্র উঠে এসেছে।
‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ)’ নামের প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের পয়োনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি এবং সিসা দূষণ বছরে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যুর কারণ। এর ফলে বছরে ৫২২ কোটি দিন অসুস্থতায় অতিবাহিত হয়। ঘরের ও বাইরের বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই ক্ষতির পরিমাণ ২০১৯ সালের জিডিপির ৮ দশমিক ৩ শতাংশের সমান।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ উদ্বেগজনক মাত্রার দূষণ ও পরিবেশগত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এটা তুলনামূলক বেশি ক্ষতি করছে দরিদ্র, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, বয়স্ক ও নারীদের।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবেশদূষণ শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। সিসা বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করছে। এর ফলে বছরে প্রাক্কলিত আইকিউ ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২০ মিলিয়ন পয়েন্ট। গৃহস্থালিতে কঠিন জ্বালানির মাধ্যমে রান্না বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস এবং তা নারী ও শিশুদের বেশি ক্ষতি করছে। শিল্পের বর্জ্য এবং অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসা অপরিশোধিত ময়লাযুক্ত পানির কারণে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানির গুণগত মানের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সময়মতো এবং জরুরি হস্তক্ষেপ, উন্নত পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) এবং সিসা দূষণ প্রতিরোধ করা গেলে বছরে ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি অকালমৃত্যু ঠেকানো যেতে পারে। সবুজ বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ, রান্নায় সবুজ জ্বালানির ব্যবহার এবং শিল্পকারখানা থেকে দূষণ রোধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ বায়ুদূষণ কমাতে পারে।
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এই প্রতিবেদনের তথ্য ও উপাত্তগুলো পুরোপুরি গ্রহণ করেননি, আবার একেবারে সত্য নয়, তা-ও বলেননি। মন্ত্রী বলেন, ‘সমস্যা যে নেই, তা আমরা কখনোই বলব না। আমরা স্বীকার করছি, অবশ্যই পরিবেশের নানা সমস্যা আছে। কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ এতটা কি না, তা আমাদের অবশ্যই নিজেদের মূল্যায়ন করতে হবে।’
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অসহায় শিকার উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে জলবায়ু খাতে যে অর্থায়ন হয়েছে, তার ৪০ শতাংশ এসেছে ঋণ হিসেবে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
বায়ুদূষণে মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে দেশের ৮ শতাংশ জিডিপি বায়ুদূষণের কারণে নষ্ট হয়। এটা একটা বড় ধরনের ক্ষতি।
বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য পরিবেশের ঝুঁকি মোকাবিলা একই সঙ্গে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার। আমরা পৃথিবীর নানা দেশে দেখেছি যে পরিবেশের ক্ষতি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে তা টেকসই হতে পারে না।’
বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবেশবিশেষজ্ঞ এবং এই প্রতিবেদনের সহপ্রণেতা আনা লুইসা গোমেজ লিমা বলেন, সময়োচিত এবং সঠিক নীতি ও কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিবেশদূষণের ধারা পাল্টে ফেলতে পারে। পরিবেশ সুরক্ষা জোরদারে পদক্ষেপ এবং রান্নায় সবুজ জ্বালানির জন্য বিনিয়োগ ও অন্যান্য প্রণোদনা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি দূষণ কমাতে পারে।
পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার জন্য সুশাসন জোরদার ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে এই প্রতিবেদনে পরিবেশগত অগ্রাধিকারগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন পদক্ষেপের মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হয়েছে।