লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী নিহত
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মার্চ ২০২৪, ৯:২০:৫০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: লালমনিরহাট সীমান্তে ৫ দিনের ব্যবধানে আবারো বিএসএফের গুলিতে মুরুলী চন্দ্র বর্মণ নামে বাংলাদেশী নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও গুলিতে দুই বাংলাদেশী গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার রাত ১টার দিকে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়া সীমান্তের মেইন পিলার ৯১৩ এর ৪ নম্বর সাবপিলার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মুরুলী চন্দ্র বর্মণ কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বালাপাড়া এলাকার সুশীল চন্দ্র বর্মণের ছেলে। আহত ব্যক্তিরা হলেন- একই ইউনিয়নের চন্দ্রপুর এলাকার মো. নুর ইসলামের ছেলে লিটন মিয়া (৪০) ও একই এলাকার মো. আজিমুদ্দিন ওরফে আজিমুলের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৩)। নিহত ও আহতদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম, সংরক্ষিত নারী সদস্য রেহানা বেগম, ইউপি সদস্য দিনো বন্ধু রায় ও কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. ইমতিয়াজ কবির।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টায় জেলার আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দীঘলটারী সীমান্তের মেইন পিলার ৯২৩ নম্বর পিলার এলাকায় বিএসএফের গুলিতে গুরুতর আহত লিটন মিয়া (১৯) নামে বাংলাদেশী যুবক ভারতের কুচবিহার এমজেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ মার্চ রাত ১০টায় মারা যান। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো বাংলাদেশী নিহতের ঘটনা ঘটল।
লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, শনিবার কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চন্দ্রপুর (চারখুঁটি) সীমান্তের মেইন পিলার ৯১৩ এর ৪ নম্বর সাবপিলার এলাকা দিয়ে রাত ১টায় ভারতীয় একদল গরু ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় বাংলাদেশী ১০/১৫ জন ব্যক্তি ভারত থেকে গরু পাচার করে আনার চেষ্টা করে। এ সময় ভারতীয় গোহাটি ফ্রন্টিয়ারের কোচবিহার জেলার গোপালপুর বিএসএফ সেক্টরের গোপালপুর-৭৫ ব্যাটালিয়নের চিত্রাকোট ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এতে বিএসএফের গুলিতে উত্তর বালাপাড়া এলাকার সুশীল চন্দ্র বর্মণের ছেলে মুরুলী চন্দ্র বর্মণ (৪১) পিঠে গুলিবিদ্ধ এবং চন্দ্রপুর এলাকার নুর ইসলামের ছেলে লিটন মিয়া (৪০) ও একই এলাকার আজিমুদ্দিন ওরফে আজিমুলের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৩) শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলিবিদ্ধ হন। গরু পাচারকারী দলের অপর সদস্যরা আহতদের উদ্ধার করে গোপনে রংপুরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। রংপুরে মুরুলী চন্দ্র বর্মণের মৃত্যু হলে মরদেহ নিয়ে ফেরার পথে কাকিনা-মহিপুর সড়কের সিরাজুল মার্কেটের সামনে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ মরদেহ হেফাজতে নেয়। এর পর সুরতহাল প্রতিবেদন করে লালমনিরহাট-২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. ইমতিয়াজ কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ওই গাড়িতে থাকা কয়েকজন ব্যক্তি কালীগঞ্জ থানা হেফাজতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘লিটন মিয়া ও মিজানুর রহমান আহত হওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। থানা হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ উপজেলার মধ্যে চন্দ্রপুর ইউনিয়ন ভৌগলিক দিক থেকে দুর্গম ও প্রায় ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে ঘেরা। এখানে চোরাকারবারী চক্র খুবই সক্রিয় ও শক্তিশালী। বিষয়টি র্যাব ও স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন।’
লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল মো. মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে নিহত ও আহতের ঘটনায় ভারতীয় ৭৫-বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে বিএসএফকে এ ঘটনায় কড়া প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়েছে।’