ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম : সুনামগঞ্জে ইউএনওসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ৯:৪০:৩৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সুনামগঞ্জের হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়মের অভিযোগে এবার মামলা দায়ের করেছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন। মানববন্ধন, বিক্ষোভ-প্রতিবাদের পর এবার মামলার এজাহারে দিরাই ইউএনও’র বিরুদ্ধে বাঁধের কাজের অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে সংগঠনটি। জেলার আরো কয়েকটি উপজেলায়ও বাঁধের কাজে অনিয়মের অভিযোগে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তারা।
মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী এটিএম মোনায়েম হোসেনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে নির্ধারিত বরাদ্দের চেয়ে দ্বিগুন বানিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সুনামগঞ্জের আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। জেলার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে উক্ত মামলাটি দায়ের করেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য জেবেল মিয়া। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন- দিরাই উপজেলার বাঁধের কাজের ২৭নং পিআইসির সভাপতি মো. জগলু মিয়া ও ২৮নং পিআইসির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, হাওরের বোরো ধান রক্ষায় সরকার প্রতিবছর অস্থায়ি বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এবছরও দিরাই উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের জলডোপ বাঁধের কাজের জন্য ২৭নং পিআইসিতে ১৫ লক্ষ ১৮৩৪৪ টাকা ও ২৮নং পিআইসিতে ১৪ লক্ষ ৮৭৯৬ টাকা বরাদ্দ দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী এটিএম মোনায়েম হোসেন এই দুটি বাঁধের মধ্যে ২৭নং পিআইসির বরাদ্দের ৩১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা ও ২৮নং পিআইসির বরাদ্দের টাকা ৩৭ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা করে দেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে মামলা হামলাসহ প্রাণনাশেরও হুমকি প্রদর্শন করে আসছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া পিআইসির নীতিমালা না মেনেই যাদের জমি নেই বাঁধের পাশে তাদের দিয়ে বাঁধের কাজ করানোসহ এখন পর্যন্ত বাঁধের কাজ শেষ না করার বিষয়টিও মামলা উল্লেখ্য করেন বাদী।
এ বিষয়ে মামলার বাদী জেবেল মিয়া বলেন, দিরাইয়ে দুইটি ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে টাকা ইউএনও, পাউবোর এসও মিলে বরাদ্দ দ্বিগুন করে নিয়েছেন। এরপরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যেখানে ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রথমে দেয়া হয়েছিলো সেখানে তারা ৩১ লক্ষ ৭১ হাজার এবং আরেকটিতে ১৪ লক্ষের জায়গায় ৩৭ লক্ষ টাকা করার মাধ্যমে বাকী টাকা আত্মসাতের পায়তারা করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পিআইসির লোকেরা।
এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে প্রাণনাশের পর্যন্ত হুমকি প্রদর্শন করছেন সংশ্লিষ্টরা। আমি আজকে মামলা করেছি আশা করি ন্যায় বিচার পাব। আমরা কৃষকের স্বার্থে কাজ করা সংগঠন কৃষকের উপর নির্যাতন জুলুম এবং তার স্বপ্নে ফসল নিয়ে কাউকে খেলার সুযোগ দিব না।
এ ব্যাপারে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, চলতি বছর ফসল রক্ষা বাঁধের নামে সর্বত্র অনিয়ম হয়েছে। পাউবো’র দায়সারা বাঁেধর কারণে পুরো জেলার বোরো ফসল হুমকীর মূখে পড়তে যাচ্ছে। বন্যা দুরে থাক একটু বেশী বৃষ্টি হলে এসব বাঁেধর অস্তিত্ব থাকবে কিনা সন্দেহ। আমরা বার বার প্রতিবাদ করেছি, মানববন্ধন ও মিছিল মিটিং করেছি। এতে কোন কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছি। এখন শুধুমাত্র দিরাই উপজেলায় মামলা হয়েছে। আরো কয়েকটি উপজেলায়ও মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, দিরাই উপজেলার ভাটিদল এলাকার জগঢুবা হাওরের একটি ক্লোজারে বাঁধ নির্মাণে প্রতিবছর আমাদেরকে প্রতিবন্ধকতার সম্মূখীন হতে হয়। ঐ বাঁধ এলাকার একটি মৎস্যজীবি পরিবার সবসময় বাঁধ নির্মাণে বাঁধা দেয়। এই বিষয়ে পাউবো’র শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাবৃন্দ এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। এরপরও আমরা বিকল্প জায়গা দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করতে গেলে ঐ মৎস্যজীবি পরিবার বাঁধা দেয়। বাধ্য হয়ে পাউবো’র পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ দায়ের করা হলে ৩জনকে পুলিশ আটক করে। তারা এখনো কারাগারে রয়েছেন। এর জের ধরে মামলা হতে পারে। আমি মামলার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী মামলার পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।