ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে মানুষ, ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ৯:৫৯:৩৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে প্রতি ঘণ্টায় হচ্ছে লোডশেডিং। দিনে ও রাতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। একবার বিদ্যুৎ গেলে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর আসছে। তবে শহরের চেয়ে গ্রামে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। এতে প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মানুষ। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ঈদের কেনাকাটা ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তীব্র লোডশেডিং ব্যবসায়ীদের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ বিভাগ চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ায় ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানিয়েছে।
সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সিলেটে বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ১২০ থেকে ১৩০ মেগাওয়াট। এরমধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ৬৬ মেগাওয়াট। সে হিসেবে সিলেটে ৪৫ শতাংশ লোডশেডিং রয়েছে। এর আগের দিন চাহিদা ছিলো ১৪১ মেগাওয়াট আর বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৫৬ মেগাওয়াট।
সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. জারজিসুর রহমান রনি জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত সিলেটে ৪৫ শতাংশ লোডশেডিং রয়েছে। আমাদের চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে তাই এই লোডশেডিং। আমরা যতটুকু বিদ্যুৎ পাচ্ছি তা সকল বিতরণ বিভাগকে সমানভাবে ভাগ করে দিচ্ছি। আমাদের লাইন বা অন্য কোন সমস্যা নেই। ডলার, কয়লা সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে দ্রুতই এর সমাধান হবে।
জানা যায়, দিন-রাতে আট থেকে দশবার বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে মহানগরবাসীকে। লোডশেডিং হচ্ছে সেহরি ও ইফতারের সময়েও। বছরে একবারই ঈদ পান ব্যবসায়ীরা। রমজানের পরে ঈদের জন্য এখন বিকিকিনির মৌসুম। কিন্তু তীব্র লোডশেডিং ব্যবসায়ীদের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি তাহমিন আহমদের মতে, ‘লাভ চিটায় খাচ্ছে’। অর্থাৎ ঈদ বাজারে ব্যবসায়ীরা যে লাভ করছেন; সেটি জেনারেটর চালাতে জ্বালানি খরচেই ব্যয় হচ্ছে। আসলে তাই। দিন-রাত জেনারেটর দিয়ে চলছে ব্যবসায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং। এমনকি অনেক সময় সেহরি ও ইফতারে করা হচ্ছে লোডশেডিং। মোমবাতি, মোবাইল চার্জার জ্বালিয়ে সিলেটবাসীকে রমজান পালন করতে হচ্ছে।
চার দিন আগে সিলেট অঞ্চলে কয়েক মিনিটের ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সিলেট। ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সিলেটের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনও। এতে করে ঝড়ের রাতে সিলেটে বিদ্যুৎ ছিল না। পরদিন ভোর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করে। বিকালের মধ্যে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যায়।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- ঝড়ের সঙ্গে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। ঝড়ে সিলেটে যে ক্ষতি হয়েছিল সেটি একদিনে মেরামত করে আবার স্বাভাবিক করা হয়েছে। গ্রাম এলাকায় কিছু ছিল। সেগুলোও স্বাভাবিক করা হয়েছে। এখন যা হচ্ছে তা লোডশেডিং। এ নিয়ে অসহায় বিদ্যুৎ বিভাগও।
বিদ্যুৎ ঘাটতির বিষয়টি জানিয়ে সিলেট পিডিবি-১’র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল পিডিবি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়; ‘গ্রাহকবৃন্দের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, দপ্তরের আওতাধীন ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনসমূহে ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড সাব-স্টেশন থেকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় নির্দিষ্ট বিরতিতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গ্রাহকগণের এই অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
কেন এই লোডশেডিং প্রশ্ন করা হয়েছিল সিলেট পিডিবি’র প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদিরকে। তিনি গতকাল বিকালে জানিয়েছেন- সরবরাহ কম থাকায় লোডশেডিং করা হচ্ছে। ঝড়ের পর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। সরবরাহে সমস্যা নেই। প্রাপ্তি কম হওয়ার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন- সিলেটের একটিসহ দেশের তিনটি পাওয়ার স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এ কারণে উৎপাদনে ঘাটতি থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। গতকাল সিলেটে ৫৩ শতাংশ লোডশেডিং হয়েছে বলে জানান তিনি।