শান্তি আলোচনার মধ্যেই ব্যাংক ডাকাতি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৪:০৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : মাত্র ১৬ঘন্টার ব্যবধানে বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় ডাকাতির ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এই ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন ঘটনার সাথে কেএনএফ বা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট জড়িত। কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন’ হিসেবে বিবেচনা করে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী।
শুধু ব্যাংক ডাকাতির ঘটনাই নয়, সোনালি ব্যাংকের ম্যানেজারকে অপহরণ, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র লুট করেছে হামলাকারীরা।
সরকারের সাথে কেএনএফ-এর যখন শান্তি আলোচনা চলছে ঠিক সে সময়ে এসব ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এমন অবস্থায় কেএনএফ’র সাথে আগামী ২২শে এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য শান্তি আলোচনা বাতিল করে দিয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।
শান্তি আলোচনা কতদূর?
২০২২ সালে কুকি-চিনের তৎপরতা দৃশ্যমান হয়েছিলো বাংলাদেশে। সংগঠনটি তাদের ফেসবুক পাতায় তখন দাবি করেছিলো যে তারা বাংলাদেশের কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন নয়।
তাদের ভাষায়, “সুবিধা বঞ্চিত কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর জন্যে স্বশাসিত বা পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ক্ষমতাসহ একটি ছোট রাজ্য” চাইলেও তারা কোন স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়নি।
কেএনএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নাথান বম এর নাম গণমাধ্যমে এসেছিলো। তিনি ২০১২ সালে কুকি চিন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনস বা কেএনডিও নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন যা পরে কেএনএফ এ রূপান্তরিত হয়।
কেএনএফকে নির্মূল করার জন্য বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী জোরালো অভিযান শুরু করে। সেনাবাহিনীও এই অভিযানে সম্পৃক্ত হয়।
গত বছর কেএনএফ-এর সাথে সেনাবাহিনীর সংঘাত চলে। বিভিন্ন সময় বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন সেনা সদস্য নিহত হয়। এমন প্রেক্ষাপটে কেএনএফ’র সাথে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত নিরসনের পথ বেছে নেয় সরকার। গত বছরের মে মাসে কেএনএফ সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি জানায়। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের নয়টি উপজেলা নিয়ে ‘স্বায়ত্তশাসিত’ অঞ্চল গঠন
ওই এলাকায় কুকি চিনের নেতৃত্বে পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চল এবং
ভারত ও মিয়ানমারে চলে যাওয়া কুকি-চিন জনগোষ্ঠীকে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা।
শান্তি আলোচনা ভেস্তে গেছে?
গত বছরের জুলাই মাসে কেএনএফ-এর সাথে শান্তি আলোচনা শুরু হয়। দুদফা ভার্চুয়িাল আলোচনার পর ৫ই নভেম্বর প্রথমবার মুখোমুখি বৈঠক হয়। প্রথম বৈঠকটি হয়েছিল রুমার মুনলাই পাড়াতে।
এরপর ৫ই মার্চ বান্দরবানের রুমা উপজেলার বেথেল পাড়ায় সরকার ও কেএনএফ-এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় মুখোমুখি বৈঠক হয়েছে। আগামী ২২শে এপ্রিল তৃতীয় দফায় সশরীরে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। কিন্তু সেটি বাতিল করে দিয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।
শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির অন্যতম সদস্য ও বান্দরবানের সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনু বিবিসি বাংলাকে বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার কমিটির কাজ হচ্ছে কেএনএফ-এর সাথে সরকারের সংযোগ স্থাপন করিয়ে দেয়া।
এই কমিটির কোন দাবি পূরণ করা কিংবা প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে পারে না। বান্দরবানের স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে এই শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়।
শান্তি আলোচনা ভেস্তে দেবার জন্য কোন মহলের ইন্ধন রয়েছে কি না সেটিও ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে বলে মনে করেন মনিরুল ইসলাম।
প্রথম দুই দফা সংলাপে কেএনএফ সব ধরণের সশস্ত্র কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা ও অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত দুটি সমঝোতা স্মারক সম্পাদিত হয়। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গ করে বিভিন্ন সময়ে সশস্ত্র কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অভিযোগ এনেছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।
শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহবায়ক ও বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, সম্প্রতি ব্যাংক ডাকাতি এবং ত্রাস সৃষ্টির ঘটনায় কেএনএফ-এর সাথে সংলাপ করার সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আগামীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষে সংলাপ চালিয়ে সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অগ্রগতি কতটা ছিল?
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এবং এর সশস্ত্র উইং কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)-এর প্রধান নাথান বম। পার্বত্য চট্টগ্রামে কর্মরত সামরিক গোয়েন্দারা মনে করেন, নাথান বম বাংলাদেশের সীমান্তের বাইরে অবস্থান করেন। কর্মকর্তাদের ধারণা ভারতের মিজোরামে নাথান বম-এর অবস্থান রয়েছে।
শান্তি আলোচনা শুরুর পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে শুরু করেছিল বলে ধারণা পাওয়া যায়। গত বছরের ৫ই নভেম্বর কেএনএফ’র সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির প্রথম দফা সরাসরি বৈঠকের সে রকম আভাস পাওয়া যাচ্ছিল।
কেএনএফ সাথে আলোচনায় সময় কিছু অগ্রগতি হয়েছিল বলে জানান মনিরুল ইসলাম মনু। এর অংশ হিসেবে সরকারের তরফ থেকে নানা ধরণের বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়।
কিন্তু ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় শান্তির চেষ্টা বড় ধরণের ধাক্কা খেয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যদের কেউ কেউ মনে করছেন সরকারের শিথিলতার সুযোগ নিয়ে কেএনএফ এই কাজ করে থাকতে পারে।