ঊর্ধ্বমুখী তাপপ্রবাহের পারদ ব্যাপ্তিকাল বাড়বে এবার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩:৪২:৪৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ শেষ হতে পারেনি। ইতোমধ্যে দেশের মোট চারটি বিভাগের ১২ জেলার ওপর দিয়েই মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বইছে। এসব জেলার ওপর দিয়ে ৩৬ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এসব এলাকায় তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই এপ্রিল মাসে গড়ে সাধারণত দুই-তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ও এক-দু’টি তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। তবে তারা আশঙ্কা করছেন, এ বছরের তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তিকাল বিগত বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে।
কেন তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা?
বাংলাদেশে কোনও স্থানের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে সেখানে সতর্কবার্তা জারি করা হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর গত ৩ এপ্রিল, বুধবার বিকেল তিনটায় যে আবহাওয়ার সতর্কবার্তা দেয়, তাতে বলা হয় যে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া চলমান তাপপ্রবাহ পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। এতে আরও বলা হয় যে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তাপমাত্রাও বাড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বিবিসিকে বলেন, কোনও বিশাল এলাকা জুড়ে যখন তাপপ্রবাহ হয়, তখন এরকম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।তিনি জানান যে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় গত কয়েকদিন ধরে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা বয়ে যাচ্ছে। এর মাঝে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গা ও ঈশ্বরদীতে। বিদ্যমান তাপপ্রবাহের কারণে বাতাসে এখন জলীয় বাষ্পের আধিক্য থাকবে। এতে করে মানুষের শরীরে অস্বস্তিবোধ বৃদ্ধি হতে পারে,” যোগ করেন তিনি।
গত বছরের সাথে এবারের তাপপ্রবাহের পার্থক্য কী?
বাংলাদেশে সাধারণত মার্চ থেকে মে মাসকে বছরের উষ্ণতম সময় ধরা হয়। এর মধ্যে এপ্রিল মাসেই সাধারণত তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোর ক্ষেত্রে ২০১৪, ২০১৬, ২০১৯, ২০২২ ও ২০২৩ সাল ছিল উত্তপ্ত বছর। কিন্তু এগুলোর মাঝে ২০২৩ সালের কথা আলাদাভাবে উল্লেখযোগ্য।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বিবিসিকে বলেন, গত বছর চরম তাপপ্রবাহ ছিল। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সারা দেশে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় জুড়ে তাপপ্রবাহ ছিল। তিনি মনে করেন, গতবার দেশে রেকর্ডধারী তাপমাত্রা ছিল। সেই তুলনায় এবার তো এখনও কম আছে। শুধু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে না, সারা বিশ্বেই ২০২৩ সাল উষ্ণতম বছর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল।
ওই বছর বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহকে আবহাওয়াবিদ মল্লিক সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে, “ঐ বছরের তাপপ্রবাহকে ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি’ তাপপ্রবাহ বলে। তিনি জানান, “২০২৩ সালে বাংলাদেশে একটানা ২০ থেকে ২৩ দিন তাপপ্রবাহ ছিল।
প্রতি বছর একই সময়ে তাপপ্রবাহ হয় না :
এটা ঠিক যে বাংলাদেশে এপ্রিল মাস উষ্ণতম। কিন্তু প্রতি বছর এপ্রিল মাসে তাপপ্রবাহ শুরু হয় না। কোন কোন বছর এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহেই তাপপ্রবাহ শুরু হয়। আবার কোন কোন বছর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের পর তাপপ্রবাহ শুরু হতে দেখা দেয়।আবহাওয়াবিদ মল্লিক বলেন, তাপপ্রবাহ শুরু হওয়ার কোনও পর্যায়ভিত্তিক আবর্তনরীতি নাই। এই মাসের এক তারিখ তাপপ্রবাহ হল, আগামী বছরও যে একই তারিখে হবে, বিষয়টা এমন না।
২০১৪ সাল ছিল বাংলাদেশের উষ্ণতম বছরগুলোর মাঝে অন্যতম। সে বছর ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৪ এপ্রিল, ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।২০১৬ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ২৪শে এপ্রিলেই, ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৮ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি।
২০১৯ সালের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৭ দশমিক এক ডিগ্রি। আবার, ২০২০ সালে আবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৭ই এপ্রিল, ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পরের তিন বছরেও কখনও এপ্রিলের শেষে, কখনও বা মার্চের শেষে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়।
এ বছরের তাপপ্রবাহ তীব্র হওয়ার আশঙ্কা কেন?
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের গত কয়েকদিনের পূর্বাভাসের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এখন বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা জানান, বাংলাদেশের ঐ অঞ্চলের দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের অবস্থান।
কিন্তু এইসব প্রদেশের তাপমাত্রা অনেক বেশি। এসব জায়গায় বছরের এই সময়ে তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝে ওঠানামা করে। ড. মল্লিক বলেন যে গত বছর ভারতের ওইসব অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেহেতু ওগুলো উত্তপ্ত অঞ্চল, তাই ওখানকার গরম বাতাস চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং তা আমাদের তাপমাত্রাকে গরম করে দেয়।”
এই আন্তঃমহাদেশীয় বাতাসের চলাচল ও স্থানীয় পর্যায়েও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দেশব্যাপী এবছর তাপপ্রবাহ তুলনামূলক বেশি থাকতে পারে বলে মনে করছেন ড. মল্লিক।