ক্বীনব্রিজ যেন ভাসমান হাট
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ৩:৩০:৩৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: ঐতিহ্যবাহী ক্বীনব্রিজ এখন যেন ভাসমান হাট। হঠাৎ দেখলে এটা যে কোনো ব্রিজ তা বুঝার উপায় নেই। পুরোটা জুড়ে দুইদিকে হকাররা বিক্রির জন্য পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ক্রেতা-বিক্রেতা আর পথচারীদের ভিড়ে ব্রিজে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। পুরো নগরীর রাস্তাঘাট যেখানে হকারমুক্ত সেখানে ক্বীনব্রিজের এই চিত্র সবার নজর কেড়েছে। ঈদের আগে এই ব্রিজ দখল কেউ কেউ স্বাভাবিক বলছেন, অনেকে তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন। হকারদেরও দুঃখগাথার গল্প বলেন অনেকে।
রোববার বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, ক্বীনব্রিজের উত্তর দিকের প্রবেশ মুখ থেকে পুরো ব্রিজে হকাররার দুইদিকে পণ্য নিয়ে বসেছেন। ব্রিজের মুখে কিছুটা প্রশস্ত থাকলেও মূল ব্রিজের লোহার অংশ চাপা হওয়ায় সেখানে ক্রেতা, বিক্রেতা আর পথচারীদের চাপে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। চিৎকার, চেঁচামেচি আর ঠেলাধাক্কায় মফস্বলের কোনো সাপ্তাহিক বাজারের যেন আবহ তৈরি হয়েছে পুরো ব্রিজে। পুরো শহরে রাস্তা ও ফুটপাত হকারমুক্ত থাকলেও ক্বীনব্রিজ চলে গেছে হকারদের দখলে। ব্রিজের দুইপাশে টেবিল, টুল, বড়ো বাকসো নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা, এর সামনে ক্রেতারা দরদাম করছেন। বিক্রি করা এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে মেহেদী, হাতঘড়ি, ছেলেদের আন্ডার গার্মেন্টস, নারী ও বাচ্চাদের মালা, অলংকার, শার্ট, প্যান্ট, শর্ট প্যান্ট, ট্রাউজার থেকে নিয়ে লেবু, শাক সবজি, পান-সুপারি।
দুইদিকে ক্রেতা বিক্রেতার দখলের পর মাঝখানে অল্প জায়গা দিয়ে পথচারী ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। এতে তৈরি হয়েছে বিরাট জটলার। জটলার চাপে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন মোটরসাইকেল আরোহীরা। ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় এই ব্রিজে শুধু পায়দল এবং মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি আছে। পথচারীরা ধাক্কাধাক্কি করে চললেও বাইকারদের সেই সুযোগ নেই। ব্রিজটি অনেক ঢালু হওয়ায় উঠতে গিয়ে ভিড়ের জন্য অনেক বাইকের স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন আরোহীরা। কোথাও কোথাও মানুষের ধাক্কায় বাইক কাৎ হয় যেতেও দেখা গেছে।
দক্ষিণ সুরমার মবিল ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির আকাশ জানান, তিনি বাইক নিয়ে দুই মিনিটের মধ্যে ক্বীনব্রিজ পার হয়ে আসেন সবসময়। মাঝেমধ্যে যানজট থাকলে চার থেকে পাঁচ মিনিট লাগে। কিন্তু রোববার দুপুর একটার দিকে প্রায় আধাঘণ্টার উপর ক্বীনব্রিজ পার হতে। তিনি বলেন হকার আর মানুষের এত ভিড় বাইক চলাচলের কোনো উপায়ই নেই এরকম অবস্থা এখন ব্রিজে। আকাশ বলেন বাইকের স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মানুষ চিৎকার করছে, আবার নেমে যে ঠেলে এগুনো যাবে তারও উপায় নেই, খুব বিব্রতকর অবস্থা। তিনি বলেন ঈদের আগে এই এলাকায় ফুটপাত থেকে নিয়ে রাস্তাঘাট সবসময় হকারদের দখলে থাকে তবে নতুন মেয়রের হকারমুক্ত ফুটপাত অভিযানের পর এবার চিত্র ভিন্ন। কিন্তু ক্বীনব্রিজে সেই চিত্র দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে হকারদের এই ব্রিজ দখল নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে অনেকের কাছে। কেউ কেউ হকারদের দুঃখগাথা গল্প শুনালেন। তাদের দাবি হকারদের পুণর্বাসনের জন্য যে জায়গা দেওয়া হয়েছে তা খুব ভেতরে, তাছাড়া গত এক সাপ্তাহ ধরে বৈরী আহাওয়ার কারণে বিক্রি একেবারে নেই। এই অবস্থায় বাধ্য হয়েই হকাররা বাইরে এসেছেন। ঈদের আগে তাদের এই বিষয়ে কিছুটা শিথিলতারও দাবি করেন কেউ কেউ।
টাউজার বিক্রি করা এক বিক্রেতা জানান, উপায় না পেয়ে আমরা বাইরে এসেছি। ঈদের আর মাত্র তিনদিন বাকি। কিন্তু ভেতরে চিপায় কোনো বিক্রি নেই। মানুষজন যেতে চায় না। আমাদের যে কাস্টমার তাদের বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের, তারা একটু ঘুরে ভেতর থেকে যে বাজার করবে এমন নয়, তারা পথে যেতে হাতের কাছ থেকে বাজার করে অভ্যস্ত। এরমধ্যে বৃষ্টিতে অবস্থা খুব খারাপ। এরকম হলে পরিবার নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগের সুযোগ থাকবে না।
এদিকে হকারদের এই দখলে পথচারীরা অনেকটা বিপাকে পড়েছেন উল্লেখকরে এক পথচারী বলেন, ক্বীনব্রিজ যান চলাচল বন্ধ করে হাঁটার জন্য দিয়ে দেওয়ায় আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু হকারদের এই দখলে এখন তো হাঁটারই উপায় নেই। ঠেলা ধাক্কা দিয়ে চলতে হচ্ছে। নারী এবং বৃদ্ধরা এই ঠেলাঠেলিতে কীভাবে চলবে। তাছাড়া পকেটমারের আশঙ্কা তো আছেই।