দুর্যোগ-দুর্ভোগের বৃত্তে ঈদ কেনাকাটা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ২:১১:১৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ঈদের বাকী মাত্র দুয়েক দিন। শেষ মুহূর্তের ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেকেই। গত কয়েকদিন থেকে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত সিলেট। চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ না পাওয়ায় বাড়ছে লোডশেডিং। এর প্রভাব পড়ছে ঈদ কেনাকাটায়। এছাড়া কয়েকদিন থেকে রাত ১০টার পর ঝড়-বৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারণ।
জানা গেছে, গত ৩১ মার্চের পর থেকেই নিয়ম করে তারাবীর পর নামছে বৃষ্টি। সাথে শুরু হচ্ছে ঝড়-শিলাবৃষ্টি। সেই সঙ্গে আকাশ কাঁপিয়ে দেখা দেয় বিদ্যুতের ঝলকানি। ঝড়-বৃষ্টি কখনো থেমে থেমে মধ্যরাত চলে। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হচ্ছে লোডশেডিং। প্রতিঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ জনজীবন। এমন দুর্যোগ-দুর্ভোগ বাগরা দিয়েছে সিলেটের ঈদ বাজারে। চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মানুষজনকে।
এদিকে, শিলাবৃষ্টির ভয়-আতঙ্ক ও লোডশেডিংয়ের ভোগান্তির কারণে বাসা-বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না অনেকেই। যার কারণে অনেকটা ভাটা পড়েছে ঈদের কেনাকাটায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে ঈদের ব্যবসায় লোকসান গুণতে হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গত রোববার (৩১ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি হয় সিলেটজুড়ে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। শিলাখ-ের আঘাতে অনেকের বাসা-বাড়ির টিনের চালা ছিদ্র হয়ে যায়। বৃষ্টির সময় রাস্তায় থাকা যানবাহনের কাঁচ ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। শিলাখ-ের আঘাতে মাথা ফেঁটে আহত হয়েছেন অনেকে। এরপর থেকেই প্রতিদিন ইফতারের পর নিয়ম করে ঝড়-বৃষ্টি নামে সিলেটে। মধ্যরাত পর্যন্ত থেমে থেমে নামে বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে আটকা পড়েন ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মানুষজন। অনেকে বৃষ্টির কারণে বাসা থেকে বেরই হন না। এ দুর্যোগের মধ্যে চলছে লোডশেডিং। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে নগরীর জিন্দাজারে যান প্রাইভেট চাকুরীজীবি আনহার আহমদ। বৃষ্টির কারণে মিলেনিয়াম শপিং সিটির সামনে একটি দোকানে আটকা পড়েন তিনি।
তিনি বলেন, গেল কয়েকদিন ধরে একই সময়ে বৃষ্টি নামে সিলেটে। দিনে লোডশেডিং ও রোজা থাকায় বাইরে বের হওয়া যায় না। তারাবীর পর যখন আসলাম তখন বৃষ্টি। শুধু বৃষ্টি হচ্ছে না, বৃষ্টির সাথে যেভাবে শিলা পড়ে তাতে ভয় হচ্ছে।
নগরীর বন্দরবাজারে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা আব্দুর রউফ বলেন, রমজানে রাতেই কেনাকাটা করতে আরাম। তাই তারাবীর পর বের হই। কিন্তু এখন তারাবীর পর যেভাবে বৃষ্টির সঙ্গে শিলা পড়ছে তাতে নিয়মিত আতঙ্কিত হয় পড়ছি।
নগরীর হাসান মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, দিনে রোজা রেখে অনেকে কেনাকাটা করতে আসেন না। কয়েকদিন থেকে বৃষ্টির কারণে রাতেও মানুষজন আসছেন না। এতে জমছে না ঈদ বাজার। এভাবে চলতে থাকলে প্রত্যাশিত ব্যবসা হবে না।
জিন্দাবাজারের ব্লু ওয়াটার শপিং সেন্টারের এক ব্যবসায়ী বলেন, রোজার প্রথম ও ২য় দশকে ব্যবসা ভালো ছিল না। টাগের্ট ছিল শেষ দশকে। কিন্তু এখন বৃষ্টির কারণে মানুষ বাজারে আসতে চান না। তার উপর লোডশেডিং। সবমিলিয়ে ব্যবসা খুব একটা ভালো না।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন বলেন, সিলেট মূল শহর ও আশপাশে এলাকায় রাতে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই অবস্থা আরও দুয়েকদিন থাকতে পারে।
অন্যদিকে, গত কয়েকদিন ধরে টানা লোডশেডিং হচ্ছে সিলেটে। প্রতিদিনই বৃষ্টির মতো নিয়ম করে প্রতিঘণ্টায় চলছে লোডশেডিং। এতে অতিষ্ঠ মানুষজন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অন্তত আট থেকে দশবার লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। শুধু তাই নয়, সেহরি, ইফতার ও তারাবীর সময়েও লোডশেডিং হচ্ছে। অন্ধকারের মধ্যেই ইফতার ও সেহরি করতে হচ্ছে রোজাদারদের।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সিলেটে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক হওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। টানা ৫/৬ দিন থেকে সিলেটে ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ লোডশেডিং হচ্ছে। এ অবস্থা কতদিন চলবে তা জানা নেই বিদ্যুতের কর্তাদের। তবে ঈদের আগে সরকারী-বেসরকারী অফিস আদালত বন্ধ হয়ে গেলে লোডশেডিং কমে আসবে বলেও জানান তারা।
নগরীর পাঠানটুলা এলাকার নাহিদ আহমেদ বলেন, শবে ক্বদরের রাতেও তারাবীতে বিদ্যুৎ ছিলনা। এখন ইফতার ও সেহরীতেও মিলছেনা বিদ্যুৎ। অন্ধকার অবস্থায় ইফতার করতে হচ্ছে। রমজানে এমন দুর্ভোগ মোটেই কাম্য ছিলনা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির দৈনিক জালালাবাদকে জানান, রোববার সন্ধ্যা ৬টায় সিলেট অঞ্চলে পিডিবির ১৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ পাওয়া যায় ১৪৩ মেগাওয়াট। ফলে ১২ শতাংশ লোডশেডিং হয়েছে। একই সময়ে সিলেট জেলায় ১০১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৮৮ মেগাওয়াট। ফলে ১৩ শতাংশ লোডশেডিং হয়েছে।